ভালো ল্যাপটপ চেনার সেরা ১০ টি উপায় জেনে নিন

ভালো ল্যাপটপ চেনার সেরা ১০ টি উপায়

ভালো ল্যাপটপ চেনার সেরা ১০ টি উপায়

আমাদের দৈনন্দিন কাজে স্মার্টফোনের পাশাপাশি ল্যাপটপের গুরুত্ব কিন্তু কম নয়। অফিস আদালত অথবা স্টুডেন্টদের জন্য ল্যাপটপ কিছু বাড়তি সুবিধা প্রদান করে যেগুলো আপনি কখনোই ডেক্সটপ কম্পিউটার থেকে পাবেন না। ল্যাপটপের প্রয়োজনীয়তার কথা বর্তমানে কারোই অজানা নয় তবে কিভাবে আপনি একটি ভালো ল্যাপটপ চিনবেন এটা নিয়ে অনেক কিছুই আমাদের অজানা রয়ে গেছে। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা কি কি দেখে আপনারা একটি ভালো ল্যাপটপ চিনতে পারবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনি যদি ল্যাপটপ কেনার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে আশা করছি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন এতে করে আপনি অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি ভালো মানের ল্যাপটপ চুজ করতে পারবেন।

ল্যাপটপ কেনার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। আর আপনি কি উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ নিচ্ছেন সেটির উপরে ভিত্তি করে নিচে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো যেগুলো দেখে আপনি একটি ভালো ল্যাপটপ চিনতে পারবেন।

প্রসেসর (Processor)

ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে সবচাইতে আগে যে জিনিসটা দেখতে হবে সেটি হল ল্যাপটপটিতে কি ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ আপনি একটা ল্যাপটপ থেকে কি ধরনের পারফরম্যান্স পাবেন সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে ল্যাপটপের প্রসেসরের উপরে। বর্তমানে বাজারে দুই ধরনের প্রসেসর অ্যাভেইলেবল রয়েছে একটি হল ইন্টেল (intel) সিরিজের এবং আরেকটি হলো এ এমডি রিজেন AMD Ryzen) সিরিজের। আপনি যদি ভারি কোন কাজের জন্য ল্যাপটপ নিতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ইন্টেল এর কোর আই ফাইভ এর সেভেন জেন Core i5 7th zen) অথবা রিজেন 5 (Ryzen 5) প্রসেসর চুজ করতে পারেন এগুলো থেকে আপনি বেশ ভালো পারফরম্যান্স পাবেন এবং যেকোনো কাজ অনায়াসেই করতে পারবেন। তবে যদি আপনার তেমন কোনো ভারী কাজের প্রয়োজন না হয় শুধুমাত্র লাইট ওয়েট কাজের জন্য ইন্টেল কোর আই থ্রি ( Intel Core i3) অথবা রিজেন থ্রি (Ryzen 3) সিরিজের প্রসেসর চুজ করতে পারেন।

র‍্যাম (RAM)

একটি ল্যাপটপের পারফরম্যান্স কিন্তু প্রসেসরের পাশাপাশি র‌্যাম এর উপরেও ডিপেন্ড করে তাই আপনার কাজের উপরে ভিত্তি করে কোন ধরনের র‍্যাম বা কত জিবি র‍্যাম এর দরকার হবে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি তেমন ভারী কোন কাজ না করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ৮ জিবি র‍্যাম যথেষ্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে আপনি যদি গেমিং, ভিডিও এডিটিং অথবা গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য মিনিমাম ১৬ জিবি র‍্যাম এর প্রয়োজন হবে।

স্টোরেজ (Storage)

ল্যাপটপের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি রয়েছে যার উপরে পারফরম্যান্স নির্ভর করে সেটি হলো স্টোরেজ। বর্তমানে ল্যাপটপগুলোতে দুই ধরনের ইন্টার্নাল স্টোরেজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে একটি হলো এইচডিডি (HDD) বা হার্ড ড্রাইভ এবং অন্যটি হলো এস এস ডি (SSD) বা সলিড স্টেট ড্রাইভ। হার্ড ড্রাইভ এর চাইতে তুলনামূলকভাবে এসএসডির প্রসেসিং ক্ষমতা দ্রুতগতি সম্পন্ন হয় যার কারণে ল্যাপটপ অনেক ফাস্ট হয়। তাই আপনি যদি আপনার ল্যাপটপ থেকে একটি স্মুথ পারফরম্যান্স চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এস এসডি যুক্ত ল্যাপটপ চুজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি 256gb অথবা সম্ভব হলে 512 জিবি এসএসডি কার্ড যুক্ত ল্যাপটপ নিতে পারেন যেটি আপনাকে অনেক ভালো পারফরম্যান্স দিবে। 

ব্যাটারি লাইফ

যারা অফিসিয়াল কাজে অথবা অন্যান্য উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ নিতে চাচ্ছেন এবং আপনাদের বাইরের কাজ করতে হবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো ব্যাটারি লাইফ রয়েছে এমন ল্যাপটপ চুজ করতে হবে। ব্যাটারি লাইফ আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে যদি কিনা আপনি বাইরে ইউজের জন্য একটি ল্যাপটপ নিতে চান। যে ল্যাপটপ গুলো সাধারণত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়ে থাকে সেগুলো স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত হয় তবে কিছু কিছু ল্যাপটপ রয়েছে যেগুলো 8 থেকে 10 ঘন্টাও ব্যাটারি ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে সেটি নিজেই বাছাই করে নিবেন।

ডিসপ্লে (Display)

আপনার ল্যাপটপের ডিসপ্লের রেজুলেশন যদি ভালো না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ভিডিও এডিটিং অথবা অন্যান্য গ্রাফিক্স সংক্রান্ত যে সমস্ত কাজগুলো রয়েছে সেগুলো তে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অনেকে ল্যাপটপে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে ডিসপ্লে ভালো হওয়াটা অবশ্যই জরুরী। ফুল HD (1920x1080) ডিসপ্লে সাধারণত ভিডিও দেখা এবং ভিডিও এডিটিং সহ অন্যান্য যে সমস্ত কাজগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া আপনার যদি বড় স্ক্রিনের ল্যাপটপ পছন্দ হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের যে ল্যাপটপগুলো রয়েছে সেগুলো নিতে পারেন। অথবা আপনার যদি সহজে বহনযোগ্য এমন ল্যাপটপ প্রয়োজন হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ১৪ থেকে ১৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে এমন ল্যাপটপ পছন্দ করা উচিত। আর আপনার যদি এর চাইতে ছোট ডিসপ্লের প্রয়োজন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ১৩ ইঞ্চি ডিসপ্লে যেগুলো রয়েছে সেগুলো নিতে পারেন।

গ্রাফিক্স কার্ড (Graphics Card)

আপনি যদি ভিডিও গেম খেলার উদ্দেশ্যে অথবা গ্রাফিক্স বা অ্যানিমেশনের কাজের জন্য ল্যাপটপ নিতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে এমন ল্যাপটপ বাছাই করুন। তবে আপনি যদি সাধারণ উদ্দেশ্যে কোন ল্যাপটপ নেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডে যথেষ্ট হবে এক্ষেত্রে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজন হবে না। তবে যারা গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন তারা NVIDIA বা AMD এর গ্রাফিক্স কার্ড যুক্ত ল্যাপটপগুলো নিতে পারেন এগুলো ভালো পারফরম্যান্স প্রদান করে থাকে।

ওজন এবং পোর্টেবিলিটি

আমরা সাধারণত বহহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করে ডেক্সটপ এর পরিবর্তে ল্যাপটপ চুজ করে থাকি তবে অনেক ক্ষেত্রে ওজন বেশি এবং সাইজে বড় হওয়ার কারণে সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আনা নেয়া করতে সমস্যা হয়ে যায়। তাই আপনার যদি প্রায়ই ল্যাপটপ নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় অথবা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ল্যাপটপ আনা নেয়া করতে হয় তাহলে সেক্ষেত্রে হালকা ওজন এবং ১৪ থেকে ১৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে এমন ল্যাপটপ উপযুক্ত হবে।

বিল্ড কোয়ালিটি

ল্যাপটপের বিল কোয়ালিটি অবশ্যই ভালো হওয়া উচিত কারণ বিল্ড কোয়ালিটি ভালো না হলে অনেক সময় ল্যাপটপের ইন্টারনাল যে সকল যন্ত্রাংশ গুলো রয়েছে সেগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অ্যালুমিনিয়াম অথবা মেটাল বডির যে ল্যাপটপ গুলো রয়েছে সেগুলোর বিল্ড কোয়ালিটি অনেক ভালো হয়ে থাকে প্লাস্টিক বডির তুলনায়। যদিও প্লাস্টিক বডির ল্যাপটপ গুলা একটু হালকা ওজনের হয় তবুও বিল্ড কোয়ালিটির কথা চিন্তা করলে আপনার অবশ্যই মেটাল বডি ল্যাপটপ গুলা চুজ করা উচিত। 

কানেক্টিভিটি পোর্ট

ল্যাপটপের বিভিন্ন ইনপুট এবং আউটপুট কানেক্টিভিটি পোর্ট থাকে যেগুলো আমাদের প্রায়ই কাজে লাগে। এগুলোর মধ্যে ইউএসবি পোর্ট, এইচডিএমএল পোর্ট, টাইপ সি পোর্ট, হেডফোন জ্যাক ইত্যাদি। ল্যাপটপ নেয়ার আগে অবশ্যই এই পোর্ট গুলো সঠিকভাবে কাজ করে কিনা সেগুলো চেক করে নেয়া উচিত।

ব্র্যান্ড এবং ওয়ারেন্টি

ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে কারণ আপনি যদি নামকরা কোন কোম্পানির ল্যাপটপ নেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে তারা কিছু সময়ের জন্য গ্যারান্টি এবং অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি দেবে। Dell, HP, Lenovo, Apple, Asus ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ গুলা সাধারণত ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে এবং আপনি তাদের থেকে ল্যাপটপ নেয়ার পর আফটার সেল সার্ভিস ও যথেষ্ট ভালো পাবেন।

শেষ কথা

উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন এটি ল্যাপটপ কেনার আগে আপনার কোন কোন দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এখন আপনি কোন উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ নিতে চাচ্ছেন সেটির উপরে ভিত্তি করে উপরের আলোচনা থেকে খুব সহজে আপনি একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url