হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট, পাওয়ার উপায়, যোগ্যতা ও বেতন
হাঙ্গেরি তে বর্তমানে বিভিন্ন কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মানুষ যাচ্ছে এবং যাওয়ার আশা পোষণ করছে। আপনি কাজের উদ্দেশ্যে সেখানে যেতে চাইলে সর্বপ্রথম যে জিনিসটা সংগ্রহ করতে হবে সেটি হল ওয়ার্ক পারমিট। এই ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া আপনি কখনোই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা আপনাদেরকে হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার উপায়, যোগ্যতা এবং যে সব ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। আপনি যদি এই ব্যাপার গুলো জানতে আগ্রহী হন তাহলে তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এতে করে আপনার ওয়ার্ক পারমিট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা হবে।
হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট কিভাবে পাওয়া যায়
বাংলাদেশ থেকে যদি আপনি হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট পেতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে সেখানকার কোন কোম্পানি অথবা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে অফার লেটার ম্যানেজ করতে হবে। অর্থাৎ ধরুন আপনি হাঙ্গেরির কোন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজের জন্য সেখানে যেতে চাচ্ছেন এক্ষেত্রে আপনাকে সেখানকার যে সকল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি গুলো রয়েছে সেগুলোর কাছে কাজের জন্য আবেদন করতে হবে এবং তারা যখন আপনার আবেদনটি গ্রহণ করবে তখন একটি অফার লেটার প্রদান করবে। এছাড়া হাঙ্গেরিতে অবস্থানরত কেউ আপনার হয়ে সেখানকার সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করে দিতে পারবে।
অথবা আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করার কথা চিন্তা করেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার হয়ে সেই এজেন্সি হাঙ্গেরির ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে দেবে এক্ষেত্রে আপনাকে কোন কিছু করতে হবে না আপনার হয়ে এজেন্সি সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে দেবে।
হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট কিভাবে আবেদন করতে হবে
বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে হাঙ্গেরির যে কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে হবে। বর্তমানে কোম্পানিগুলা অনলাইনে তাদের যে সকল অফিশিয়াল ওয়েবসাইট গুলা থাকে অথবা সরকারি যেসব জব পোর্টালগুলো থাকে সেখানে বিভিন্ন কাজের অফার পোস্ট করে থাকে আপনি চাইলে এ সকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিভিন্ন কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাদের যে সকল শর্ত রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে যদি আপনি পূরণ করতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা হবে এবং আপনার উদ্দেশ্যে একটি কাজের অফার লেটার ইস্যু করা হবে। মূলত ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করার আগে এই ডকুমেন্টটি অবশ্যই প্রয়োজন হবে এছাড়া আপনি কোনভাবেই ওয়ার্ক পারমিট অথবা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
আপনি যেই মাধ্যমে এই প্রসেসটি সম্পন্ন করেন না কেন মূলত এই প্রক্রিয়ায়ই আপনার ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ হবে। এখন আপনি যদি নিজে নিজে আবেদন করেন তাহলেও এই উপায় অবলম্বন করতে হবে অথবা আপনার হয়ে কেউ যদি আবেদন করে দেয় তার ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়মে অনুসরণ করতে হবে এবং যদি কোন এজেন্সিও আপনার হয়ে আবেদন করে সে ক্ষেত্রে তারা এই উপায় অবলম্বন করবে।
হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট পেতে কি কি যোগ্যতা লাগে
হাঙ্গেরির ওয়ার্ক পারমিট পেতে হলে আপনার কয়েকটি যোগ্যতার প্রয়োজন হবে সেগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
সর্বপ্রথম আপনার ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অফার লেটারের প্রয়োজন হবে। এরপরে আপনি যে কাজের জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন সেই কাজের উপরে আপনার একটি নূন্যতম দক্ষতা থাকা প্রয়োজন এবং আপনি যে আসলেও সেই কাজে দক্ষ সেটি প্রমাণ করার জন্য কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে। এরপরে সেখানকার স্থানীয় যে সকল ভাষাগুলো রয়েছে যেমন লোকাল ভাষা হিসেবে হাঙ্গেরীয় এবং অন্যান্য ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন হতে পারে। যে কোন দেশে কাজ করা এবং অন্যান্য যে সমস্ত কার্যক্রম গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সেখানকার ভাষা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। অনেক সময় ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে আপনার ভিসা এপ্রুভ হবে কিনা সেটি অনেক অংশে নির্ভর করে আপনি তাদের স্থানীয় ভাষাগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন কিনা তার উপরে।
এরপরে আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো হতে হবে এবং মেডিকেলে ফিট থাকতে হবে। হাঙ্গেরিতে যাওয়ার জন্য আপনাকে হেলথ ইন্সুরেন্স এর পাশাপাশি আপনি যে ফিজিক্যালি ফিট আছেন সেটির প্রমাণপত্র জমা দিতে হতে পারে। এরপরে বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে আপনাকে একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে এবং আপনার নামে কোন প্রকার মামলা-মকাদ্দমা বা আইনের ঝামেলা থাকা যাবে না। এই সমস্ত ডকুমেন্ট সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ফি প্রদান করে পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন।
হাঙ্গেরি তে কি কি কাজ পাওয়া যায়
বর্তমানে যারা কাজের ভিসায় হাঙ্গেরি তে যাচ্ছে তারা যে সমস্ত কাজ করছে সেগুলোর লিস্ট নিচে দেয়া হলো এগুলোর থেকে আপনার পছন্দমত যেটি আপনার জন্য উপযুক্ত সেটি বেছে নিয়ে আপনি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে কাজ
- মেশিন অপারেটর
- ফুড প্যাকেজিং
- বিভিন্ন গুদামে কাজ
- কিচেন সহকারি
- পরিছন্নতা কর্মী
- এসিস্ট্যান্ট বাবুর্চি
- হাউসকিপিং
- রিসিপশনিস্ট
- ফল এবং ফুলের বাগানে কাজ
- কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ
- ডেলিভারি ম্যান
- কল সেন্টারে কাজ ইত্যাদি।
উপরে যে সমস্ত কাছের কথা বলা হয়েছে সেগুলোতে আবেদনের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হতে পারে এবং কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোতে আপনি কোন রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই আবেদন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে প্রশিক্ষণ দেয়ানো হবে এরপরে কাজে নিয়োগ করা হবে।
হাঙ্গেরি তে কোন কাজে বেতন কেমন
হাঙ্গেরিতে সাধারণত বেতন নির্ধারণ করা হয় কাজের ধরন এবং একজন শ্রমিকের কাজের দক্ষতার উপরে। এছাড়াও আরো কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর উপরে নির্ভর করে বেতন কম বা বেশি হতে পারে। তবে নিচে একটি সামগ্রিক আলোচনা করা হচ্ছে আপনাদের সুবিধার্থে যাতে করে আপনাদের একটি ধারণা হয় যে সেখানে কোন কাজের বেতন কেমন হতে পারে।
আপনি যদি একজন কারখানা শ্রমিক হিসেবে যান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ১০০০ ইউরো থেকে শুরু করে ১৩০০ ইউরো পর্যন্ত। আপনি যদি নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন কাজ যেমন নির্মাণ শ্রমিক, প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান এ জাতীয় কাজের জন্য যান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ১২০০ থেকে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত।
আপনি যদি বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে কাজের জন্য চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ৯০০ থেকে ১২০০ ইউরো পর্যন্ত। আর আপনি যদি বিভিন্ন কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করতে চান যেমন বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান সবজির বাগান ইত্যাদিতে কাজের বেতন সাধারণত ৮০০ থেকে ১১০০ ইউরো হয়ে থাকে। আপনি যদি কুরিয়ার সার্ভিস, ফুড ডেলিভারি এবং অন্যান্য যে সকল ডেলিভারি সংক্রান্ত কাজগুলো রয়েছে সেগুলোতে যান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ১ হাজার ইউরো থেকে ১৩০০ ইউরো মত । আপনার যদি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি কল সেন্টারে কাজের জন্য যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ১২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত।
বর্তমানে ১ ইউরো সমান বাংলাদেশের ১৩১ থেকে শুরু করে ১৩৩ টাকার মত হয়ে থাকে সে অনুযায়ী আপনি কোন কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে হাঙ্গেরি তে যাচ্ছেন সেই কাজের বেতন কত হবে সেটি এই হিসেবে বের করে নেবেন।
অবশ্য এই প্রত্যেকটি কাজের বেতন ক্ষেত্রে বিশেষ কম বা বেশি হতে পারে উপরে যে আলোচনাটি করা হয়েছে সেটি বিভিন্ন স্টোর থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী বেতনের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আপনি কোন কাজের জন্য সেখানে যাবেন এবং কোন ধরনের কোম্পানিতে কাজ করবেন সেগুলোর উপরে আপনার বেতন কম বা বেশি হতে পারে। যেহেতু অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানে জীবন যাত্রার খরচ তুলনামূলক কম তাই আপনি এই পরিমাণ বেতন দিয়ে অনায়াসেই চলতে পারবেন।
শেষ কথা
আমরা কোন প্রকার ভিসা প্রসেসিং এবং বিদেশের লোক আনা নেয়ার কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়, আপনাদের সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন সোর্স থেকে কালেক্ট করে আপনাদেরকে জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে থাকি এক্ষেত্রে কিছু ভুল ত্রুটি হতে পারে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url