হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব সম্পর্কে এ টু জেড তথ্য জেনে নিন
বাংলাদেশ থেকে অনেকে ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশ হাঙ্গেরিতে বিভিন্ন কাজের জন্য যেয়ে থাকেন। শুধু কাজের জন্যই নয় আরো বহুমুখী উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে মানুষ বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যেয়ে থাকেন এদের মধ্যে কেউবা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে, কেউবা স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে আবার কেউবা বিভিন্ন কাজের সন্ধানে।
তবে যদি আপনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার নাগরিকত্বের প্রয়োজন হবে, আজকের আর্টিকেলে আমরা মূলত হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যেমন নাগরিকত্ব পেতে হলে আপনাকে কি কি শর্ত পূরণ করতে হবে, কিভাবে আবেদন করতে হবে, এবং আপনি সেখানকার নাগরিক হলে কি কি সুবিধা পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। আপনার যদি এই সমস্ত বিষয়ে জানার থাকে তাহলে আশা করছি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পাওয়ার সুবিধা
আপনি যদি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে অবাধে কোন প্রকার ভিসা পাসপোর্ট এর ঝামেলা ছাড়াই চলাফেরা করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে সেনজেনভুক্ত যেকোনো একটি দেশের নাগরিকত্ব পেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি হাঙ্গেরিতে নাগরিকত্ব পেয়ে যান তাহলে যেসব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আপনি যদি হাঙ্গেরি নাগরিকত্ব পান তাহলে সে ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে সুবিধাটি পাবেন সেটি হল আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হবেন যেটি আপনাকে পরবর্তীতে অন্যান্য যে সেনজেনভুক্ত দেশগুলো রয়েছে যেমন জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশগুলোতে বসবাস এবং কাজের অনুমতি দেবে। হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আপনি চাইলে ইউরোপের সেনজেনভুক্ত যে কোন দেশে গিয়ে যেকোনো উদ্দেশ্যে সেখানে বসবাস এবং যেকোনো প্রকার কাজের সুযোগ পাবেন।
দ্বিতীয়তঃ যে সুবিধাটি পাবেন সেটি হল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধা। অর্থাৎ আপনি চাইলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়াও পৃথিবীর আরো প্রায় 147 টি দেশে আলাদা কোনো ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ বা যে কোন উদ্দেশ্যে যাতায়া করতে পারবেন।
এছাড়া আপনি হাঙ্গেরি তে যে নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে আপনার পছন্দমত যে কোন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন অর্থাৎ আপনি সেখানকার ভোটাধিকার লাভ করবেন। শুধু তাই নয় আপনি যদি চান তাহলে সেক্ষেত্রে যে কোন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
হাঙ্গেরির পাশাপাশি অন্যান্য যে সেনজেন ভুক্ত দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে আপনি আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং ব্যবসার সুযোগ পাবেন। এছাড়া সেখানকার সরকার কর্তৃক যে সকল অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় আপনি চাইলে সেগুলোতে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন।
নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আপনি সেখানকার যে সকল সামাজিক নিরাপত্তা এবং সরকারি সেবা গুলো রয়েছে যেমন পেনশন, বেকারত্ব ভাতা সহ সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা নিতে পারবেন। এর পাশাপাশি সেখানকার রাষ্ট্রীয় যে সুবিধা গুলো রয়েছে নাগরিকদের জন্য আপনিও ঠিক সেইম সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া আপনি যদি চান তাহলে সে ক্ষেত্রে একই সাথে হাঙ্গেরির এবং অন্য একটি দেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে পারবেন এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি যদি হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পেয়ে যান তাহলে পরবর্তীতে আপনার যে সকল পরিবারের সদস্য গুলো রয়েছে বিশেষ করে আপনার স্ত্রী এবং সন্তান তারাও পরবর্তীতে সেখানকার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন আপনার মাধ্যমে।
হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত সমূহ
পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই বিদেশীদের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয় যেমন: আবেদনকারীর বয়স, পেশা, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেশের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে বসবাস ইত্যাদি। হাঙ্গেরি তে নাগরিকত্ব পেতে হলেও ঠিক তেমনি আপনাকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে।
হাঙ্গেরির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সী বা তার বেশি হতে হবে, অবশ্য এই শর্তটি সবার ক্ষেত্রে পূরণ হয়ে থাকে কারণ 18 বছরের নিচে কেউ সাধারণত ভিসা পায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন যদি সেখানকার নাগরিকের ফ্যামিলির কেউ আবেদন করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে এটি একটি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচ্য হবে।
দ্বিতীয়ত হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আপনাকে সেখানে ন্যূনতম ৮ বছর স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর চাইতে কম দিন সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায় উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি হাঙ্গেরির কোন নাগরিককে বিয়ে করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অথবা আপনি যদি কোন বিশেষ বিবেচনায় সেখানে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে চান বা করার সুযোগ পান তাহলে সেক্ষেত্রে এ শর্তটি আপনার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
হাঙ্গেরিতে বসবাসকালীন সময়ে আপনার কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকা যাবে না এই বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আপনি যে হাঙ্গেরিতে আট বছর বসবাস করবেন এই সময়ের মধ্যে আপনি কোন ক্রাইম করতে পারবেন না অথবা আপনার নামে কোন মামলা মোকদ্দমা থাকা যাবে না।
নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে সেখানকার ভাষাগত দক্ষতার একটি পরীক্ষা হয়ে থাকে আপনাকে সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যথাযথভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। এই পরীক্ষাতে সাধারণত হাংগেরীয় ভাষায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এই পরীক্ষাটির ফলাফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই সতর্কতার সাথে এই পরীক্ষাটির জন্য প্রস্তুতি এবং সেখানে যথাযথভাবে অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল করা জরুরী।
হাঙ্গেরির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে আপনার আয়ের উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত দলিল পত্র সংগ্রহ করতে হবে এবং সেগুলো আবেদনের সময় জমা দিতে হবে। তারা আপনার আয় বিবেচনা করে এরপরে সিদ্ধান্ত নেবে যে আপনি হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পাওয়ার পর সেখানে বসবাসের জন্য উপযুক্ত অর্থ আয় করতে পারবেন কিনা।
আবেদন করার সময় বেশ কিছু ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হতে পারে যেমন আপনার বর্তমান স্থায়ীভাবে বসবাসের ঠিকানা, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, বৈবাহিক অবস্থা এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরও অন্যান্য কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে সেগুলো আপনাকে সঠিকভাবে সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে আবেদন করার সময়।
হাঙ্গেরির নাগরিকত্ব পেতে কিভাবে আবেদন করতে হবে
নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আবেদন করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলো জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সমূহঃ
- আপনার বৈধ পাসপোর্ট
- জন্ম নিবন্ধন
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট ( যদি বিবাহিত হন)
- টেম্পোরারি রেসিডেন্স কার্ড
- হাঙ্গেরির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- হাঙ্গেরির ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার ফলাফলের ডকুমেন্ট
ওপরের ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করার পর আপনাকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সেটি যথাযথভাবে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। নাগরিকত্বের জন্য একটি আবেদন ফরম রয়েছে যেটি আপনাকে সেখানকার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। ফরমটি সংগ্রহ করে সঠিকভাবে পূরণ করার পর সেটি ইমিগ্রেশন বা সিটিজেনশিপ কর্তৃপক্ষের নিকট সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ী জমা দেয়া জরুরি।
কাগজপত্র জমা দেয়ার পর আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারের অংশগ্রহণ করতে হতে পারে যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ভাষা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে। এই সাক্ষাৎকারে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় আপনি নাগরিকত্ব পাবেন কিনা। তবে সমস্ত আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সাধারণত ছয় মাস থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপরে যদি আপনি সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়ে যান এর পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে সেখানকার আইন এবং সংবিধানকে সম্মান প্রদর্শন করে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করতে হবে।
শপথ গ্রহণের পর আপনাকে হাঙ্গেরির পাসপোর্ট এবং একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে যে সমস্ত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় সেগুলো আস্তে আস্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে সংগ্রহ করে নিতে হবে।
শেষ কথা
সমস্ত আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি নাগরিকত্ব সম্পর্কে যাবতীয় যে প্রশ্নগুলা থেকে থাকে সেগুলোর উত্তর পেয়েছেন। একে দেশের বিভিন্ন আইন সাধারণত সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে থাকে তাই উপরে বর্ণিত যে কোন শর্ত কোন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। আপটুডেট তথ্যের জন্য আপনি অফিসিয়াল কোন মাধ্যমে সাহায্য নিতে পারেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url