জার্মানির ভিসা প্রসেসিং এবং কাজ খুঁজে পাওয়ার উপায়
জার্মানির ভিসা প্রসেসিং এবং কাজ খুঁজে পাওয়ার উপায়
আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকে মূলত আমরা কথা বলব জার্মানির ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কে। বাংলাদেশ থেকে আপনি যদি যেকোনো ধরনের কাজের ভিসা নিয়ে জার্মানিতে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার ভিসা প্রসেসিং করতে হলে যে সমস্ত প্রক্রিয়াগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে করে আপনি খুব সহজেই কোন তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজেই ভিসা প্রসেসিং এর সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন নিজে নিজেই জার্মানির ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলে আশা করি উপকৃত হবেন।
ওয়ার্ক পারমিট বা অফার ল
জার্মানির ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে যে ডকুমেন্টটি ম্যানেজ করতে হবে সেটি হল জার্মানির কোন কোম্পানি বা নিয়োগ কর্তার থেকে একটি অফার লেটার বা কাজের অনুমতি পত্র। আরেকটু ভেঙে বলতে গেলে জার্মানিতে যে কোম্পানিতে বা যার আন্ডারে কাজের জন্য যেতে চাচ্ছেন তার নিকট থেকে সর্বপ্রথম একটি অফার লেটার ম্যানেজ করতে হবে এর পরে আপনি ভিসা প্রসেসিং এর বাকি কার্যক্রম গুলা শুরু করতে পারবেন। এক্ষেত্রে জার্মানির যে সরকারি কাজ খোঁজার ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে শ্রমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে আপনি চাইলে সেখান থেকে আপনার পছন্দমত কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ইউরোপিয়ান স্টাইলে একটি সিভি এবং কভার লেটার তৈরি করতে হবে যেটির মাধ্যমে আপনি তাদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে কাজের জন্য আবেদন করবেন। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের বিজ্ঞপ্তি জার্মানের একটি সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ওয়েবসাইটের লিংক হল www.makeitingermany.com এই ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনি আপনার পছন্দমত কাজ খুঁজে সেটির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
পছন্দ মত কাজ খোঁজার পর আপনাকে যে কোম্পানিতে কাজের জন্য আবেদন করবেন তাদের যে অফিসিয়াল ইমেইলটি রয়েছে সেখানে আপনার সিভি এবং কভার লেটার টি পাঠাতে হবে এরপরে তারা যদি আপনার সমস্ত ডকুমেন্ট দেখে সন্তুষ্ট হয় এবং আপনার আবেদনটি গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে তারা একটি অফার লেটার ইস্যু করবে যে টি পরবর্তীতে আপনার জার্মানির ভিসা প্রসেসিং এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হবে।
জার্মানির দূতাবাসে এপয়েনমেন্ট নেয়া
আপনি যখন আপনার নিয়োগকর্তার থেকে অফার লেটার পেয়ে যাবেন তখন এই ডকুমেন্টটি জার্মানির যে দূতাবাস রয়েছে ঢাকাতে তাদের কাছে জমা দেয়ার মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং এর পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর সেটি ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে এরপরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যে ডকুমেন্টগুলো রয়েছে যেমনঃ পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, কাজের অভিজ্ঞতা প্রমাণ পত্র ইত্যাদি সেগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে হবে। কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করার পর আপনাকে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মানির দূতাবাসের যে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটটি রয়েছে সেটিতে প্রবেশ করে তাদের থেকে এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে সাক্ষাৎকারের জন্য। এরপরে তারা আপনাকে এপয়েন্টমেন্ট বা সাক্ষাৎকারের ডেট জানিয়ে দিবে তখন এই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে তাদের সাথে সাক্ষাত করতে হবে।
সাক্ষাৎকারে সময় তারা আপনাকে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আপনি কেন জার্মানিতে যেতে চাচ্ছেন এবং কোন কাজের জন্য যেতে চাচ্ছেন এই সমস্ত কিছুর প্রশ্ন করতে পারে সেগুলোর উত্তর অবশ্যই ভেবে চিন্তে এবং সঠিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এরপরে যে ডকুমেন্টগুলো আপনি সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলো তাদের কাছে জমা দেয়ার পর তারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখার পরে যদি সমস্ত ডকুমেন্ট ঠিক থাকে তাহলে পরবর্তী ৬ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে আপনার ভিসা প্রসেসিংয়ের সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং আপনি ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন। যদি আপনার বিচার আবেদন গ্রহণ করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে যে আপনার ভিসা হয়ে গিয়েছে এরপর আপনি সেখানে গিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
ভিসা হাতে পাওয়ার পরবর্তী কাজ
আপনি যখন ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন এরপরে ফ্লাইটের টিকেট বুক করবেন এরপরে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে সেই তার একটি তাদেরকে জানিয়ে রাখবেন যাতে তারা আপনার যাওয়ার ব্যাপারে অবগত থাকে। এর পরে জার্মানিতে পৌঁছে সর্বপ্রথম আপনার কোম্পানির সাথে যে কাজের চুক্তিটি হয়েছিল সেটি পুনরায় যাচাই-বাছাই করে এরপরে স্বাক্ষর করবেন।
এরপরে কোম্পানি থেকে যদি আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে আর আলাদাভাবে থাকার জায়গা ম্যানেজ করার প্রয়োজন নেই কিন্তু যদি কোম্পানি থেকে সে ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে আপনাকে থাকার জায়গা নিজেকেই ম্যানেজ করতে হবে। এরপরে জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসের জন্য আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্স কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে এটি পাওয়ার পর আপনি বৈধভাবে সেখানে থাকার অনুমতি পেয়ে যাবেন এক্ষেত্রে আপনার নিয়োগ কর্তা বা কোম্পানির সাহায্য করবে।
এরপরে আপনাকে অবশ্যই জার্মানির একটি ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে কারণ আপনার বেতন সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করা হবে। এছাড়াও আরো ছোটখাটো কিছু কাজ রয়েছে জার্মানিতে পৌঁছানোর পর সেই কাজগুলো যথাযথভাবে করার চেষ্টা করবেন।
শেষ কথা
তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন সেটি হল যেহেতু বর্তমানে জার্মানিতে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে সেজন্য বাংলাদেশের কিছু প্রতারক চক্র এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অনেকের সাথে প্রতারণা করছে তাদের থেকে অবশ্যই সাবধান থাকবেন। এর জন্য উপরে আলোচনা করা হয়েছে কিভাবে কোন প্রকার দালাল বা এজেন্সির সহায়তা ছাড়াই নিজে নিজে আপনি জার্মানির ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করা থেকে শুরু করে ভিসা প্রসেসিং পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।
আরেকটি বিষয় হলো জার্মানিতে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়োগ করা হলেও কিন্তু সেখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদাই সর্বোচ্চ অর্থাৎ আপনি যদি যেকোন একটি কাজে দক্ষ হন তাহলে সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ভিসা প্রসেসিং এর যে প্রক্রিয়াটা সেটি খুব সহজেই বাধাহীন ভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এছাড়া আপনার যদি মোটামুটি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ভাষাগত দক্ষতা থাকে বিশেষ করে জার্মান ভাষায় যদি আপনি দক্ষ হতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। তাই আপনি যদি জার্মানিতে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য মন স্থির করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চেষ্টা করবেন জার্মান ভিসা সম্পর্কে মোটামুটি লেভেলের দক্ষতা অর্জন করার জন্য।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url