জার্মানি ভিসা খরচ কত বিস্তারিত জানুন
জার্মানি ভিসা খরচ কত বিস্তারিত জানুন
আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশ থেকে জার্মানির তিনটি ভিসা অর্থাৎ স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে কত টাকা খরচ হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যারা জার্মানিতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় ৯০ %মানুষ এই তিনটি ভিষা নিয়েই যাচ্ছে। আপনি যদি এই তিনটি ভিসার যে কোন একটি ভিসা নিয়ে জার্মানিতে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে কত টাকা খরচ করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। যদি আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করছি একটু হলেও উপকৃত হবেন।
জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার খরচ
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী জার্মানিতে বিভিন্ন নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স এবং মাস্টার্স সহ আরো অন্যান্য ডিগ্রী নেয়ার জন্য যাচ্ছে। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার কথা আসলে সর্বপ্রথম সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে জার্মানি। থাকবেই বা না কেন শিক্ষার মান এবং অন্যান্য সকল দিক বিবেচনায় জার্মানির সাথে তুলনা করার মত দেশ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। তো চলুন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে কত টাকা খরচ করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
যদিও স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে জার্মানির কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার ম্যানেজ করা তবে আজকে আমাদের আলোচনার টপিক হলো স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে জার্মানি যেতে হলে কত টাকা খরচ হতে পারে শুধুমাত্র প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে সেটি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য বিষয় হলো জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম আপনাকে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করে অফার লেটার ম্যানেজ করতে হবে সে সংক্রান্ত খরচ গুলো এখানে উল্লেখ করা হবে না। সর্বোপরি স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে মূল যে খরচ গুলো রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
আপনি যখন অফার লেটার হাতে পাবেন তখন সর্বপ্রথম আপনার কাজ হবে জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা। আবেদন সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে ভিসা ফি প্রদান করতে হবে যেটি বর্তমানে ৭৫ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা মতো।
এরপরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে খরচটি রয়েছে সেটি হল জার্মানিতে যাওয়ার আগে আপনার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণস্বরূপ জার্মানির যেকোনো একটি ব্যাংক একাউন্টে অথবা আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করার জন্য যাচ্ছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্ধারিত কোনো ব্যাংক একাউন্টে প্রায় ১১০০০ ইউরো মত দেখাতে হবে যেটি বর্তমানে বাংলাদেশে টাকায় ১৪ লাখ থেকে শুরু করে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই খরচটা অনেক সময় আপনি যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন সেটির উপরে ভিত্তি করে কম বা বেশি হতে পারে তবে এভারেজ ১১ হাজার ইউরো ধরে রাখতে পারেন।
এরপরে যে খরচটি সামনে আসবে সেটি হল হেলথ ইন্সুরেন্স। বর্তমানে জার্মানিতে যে কোন ভিসার জন্য আবেদন করার আগে অথবা জার্মানিতে প্রবেশের আগেই অবশ্যই আপনাকে হেলথ ইন্সুরেন্স করতে হবে এবং আপনি যতদিন সেখানে অবস্থান করবেন ততদিন যাবত এই ইন্সুরেন্সের যে মাসিক প্রিমিয়াম বা আপনার চুক্তি অনুযায়ী যে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হবে সেটি প্রদান করে যেতে হবে। হেলথ ইন্সুরেন্স খরচ সাধারণত প্রতি মাসে ৮০ থেকে ১০০ ইউরো পর্যন্ত যেটি বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ১০ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনি একটি সুবিধা পাবেন সেটি হল আপনি যখন অসুস্থ হবেন তখন সে ক্ষেত্রে আপনার সমস্ত চিকিৎসা খরচ আপনি যে ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছেন সেই কোম্পানি বহন করবে শর্তসাপেক্ষে তাই বলা যায় এটি আপনার জন্য একটি সঞ্চয়।
এছাড়া অন্যান্য ছোটখাটো যে সমস্ত খরচ গুলো রয়েছে যেমন বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা, সেগুলো সত্যায়িত করা এবং এম্বাসি সহ এ জাতীয় খরচ হিসেবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধরে রাখতে পারেন। তবে এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন ওপরে যে খরচ গুলোর কথা বলা হল সেটি অফিশিয়াল খরচ এখন আপনি কোন মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাচ্ছেন সেটির উপরে নির্ভর করে খরচ কম বা বেশি হতে পারে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ
বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে জার্মানি যাওয়া লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই অভিবাসন প্রত্যাশী ভাইদের সবচাইতে কমন প্রশ্ন ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য মোট কত টাকা খরচ হতে পারে। তবে নিচে যে খরচের বিবরণ দেয়া হয়েছে সেটি ওয়ার্ক পারমিট হাতে পাওয়ার পরের খরচ। ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করার জন্য যে সকল খরচ হবে সেটি আপনি হিসাব করে নেবেন।
সর্বপ্রথম যে খরচটি হবে সেটি হলো ভিসা আবেদন ফি যেটি ৭৫ ইউরো মত যা বাংলাদেশী টাকায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা মতো। এরপরে যে খরচটি হবে সেটি হলো হেলথ ইন্সুরেন্স বা স্বাস্থ্য বীমা যেটির জন্য আপনাকে প্রতিমাসে ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো ধার্য করা হয় যেটি বাংলাদেশের টাকায় ১৩ থেকে ১৯ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অবশ্য পরবর্তীতে আপনি যদি কখনো কোন রোগে আক্রান্ত হন তাহলে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ আপনার ইন্সুরেন্স কোম্পানি বহন করবে।
এরপরে অন্যান্য যে খরচ গুলো রয়েছে তার মধ্যে বিমান ভাড়া এবং তার আগে ভিসার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয় সেগুলো সংগ্রহ এবং সত্যায়িত করার জন্য কিছু পরিমাণ খরচ হতে পারে যেটি আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মত। এরপরে যখন আপনি এম্বাসিতে ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করাবেন তখন তাদেরকে একটি ফি প্রদান করতে হবে যেটির এমাউন্ট সঠিকভাবে বলতে পারছি না যখন ভিসা প্রসেসিং করাবেন তখন তাদের থেকে জেনে নেবেন।
জার্মানির টুরিস্ট ভিসার খরচ
শিক্ষার পরিবেশ এবং কাজের পরিবেশের পাশাপাশি জার্মানি কিন্তু টুরিস্ট স্পট হিসেবে বিশ্বব্যাপী অনেক পরিচিত তাই প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষজন সেখানে ভিড় করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটক জার্মানিতে যেয়ে থাকেন। জার্মানিতে টুরিস্ট ভিসায় যেতে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করছি।
ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে আবেদন ফি হিসেবে ৮০ ইউরো প্রদান করতে হবে যেটি বাংলাদেশি টাকায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা হয়। টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রেও আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্য বীমা করাতে হবে যার জন্য আপনাকে বাংলাদেশি টাকায় ৩৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে। যেহেতু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে গেলেও খুব বেশি সময় সেখানে থাকা হয় না তাই বেশি সময়ের জন্য স্বাস্থ্য বীমা করার প্রয়োজন নেই যতদিন থাকবেন ততদিনের জন্য করলেই হবে। এছাড়া ভিসার জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় সেগুলোর জন্য আনুমানিক ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হতে পারে এম্বাসি ফি সহ।
শেষ কথা
যেহেতু আমরা কোনো প্রকার ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজের সাথে জড়িত নয় তাই সবসময় আমাদের দেয়া তথ্য ১০০ ভাগ সঠিক নাও হতে পারে। আমরা মূলত বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আপনাদের একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে থাকি তাই আপনি যখন বা যে মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাবেন অবশ্যই এ সমস্ত কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলে নেবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url