বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে জার্মানি যাওয়ার উপায়
উচ্চশিক্ষা, ব্যবসা, ভ্রমণ বা চাকরি যেকোনো উদ্দেশ্যেই জার্মানি একটি আদর্শ গন্তব্য। উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং সামাজিক নিরাপত্তার দিক দিয়ে পৃথিবীর উচ্চ শ্রেণীর দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির নাম শীর্ষেই থাকবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য যে সকল অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে এই দেশগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে জার্মানিতে যাচ্ছে।
অনেকে আবার অবৈধভাবে জার্মানিতে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেক রকমের বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। আবার অনেকে অন্যান্য যে সেজন ভুক্ত দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে যে কোন প্রকার ভিসায় গিয়ে পরে জার্মানিতে ট্রান্সফার হচ্ছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে যাওয়ার বেশ কয়েকটি বৈধ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে একদম সম্পূর্ণ লিগ্যাল ভাবে জার্মানিতে যেতে চান তাহলে কি কি উপায়ে যেতে পারবেন সে সম্পর্কে জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টুরিস্ট ভিসা (Tourist Visa)
ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পছন্দের তালিকায় জার্মানি প্রথম সারিতেই থাকবে। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সেখানকার স্থানীয় সংস্কৃতি প্রাচীনকাল থেকেই ভ্রমণ পিপাসুদের একটি অনন্য আকর্ষণের জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যায় জার্মানিতে। আপনি যদি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যেতে চান তাহলে টুরিস্ট ভিসায় খুব সহজেই যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ৯০ দিনের জন্য সেনজেনভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে বৈধভাবে চলাফেরা করার জন্য অনুমতি দেয়া হবে। অর্থাৎ আপনি যদি জার্মানির টুরিস্ট ভিসা নিয়ে সেখানে যান এর পরে অন্যান্য সেনজেন ভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতেও ভ্রমণের অনুমতি পাবেন এক্ষেত্রে আলাদা করে কোন প্রকার ভিসার প্রয়োজন হবে না।
টুরিস্ট ভিসায় আবেদনের জন্য আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্ট এর প্রয়োজন হবে এর মধ্যে বৈধ পাসপোর্ট, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ফ্লাইট বুকিং এর ডকুমেন্ট, হোটেল বুকিং এর ডকুমেন্ট, স্বাস্থ্য বীমা ইত্যাদি। বর্তমানে টুরিস্ট ভিসা ফি ৮০ ইউরো মত ধার্য করা হয়ে থাকে যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ১০,০০০ টাকা বা তার সামান্য বেশি প্রয়োজন হয়। ভিসা আবেদন থেকে শুরু করে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
স্টুডেন্ট ভিসা (Student Visa)
আপনি যদি উচ্চ শিক্ষার জন্য জার্মানিতে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তবে জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করার আগে অবশ্যই আপনাকে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় বা যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে যেতে চাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি অফার লেটার প্রয়োজন হবে। অফার লেটার ম্যানেজ করার পর আপনাকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যে যোগ্যতা এবং ডকুমেন্ট গুলা প্রয়োজন হয় সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ করে জমা দেয়ার মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
ডকুমেন্ট হিসেবে জার্মানির কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার, আপনার পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র হিসেবে একাডেমিক সার্টিফিকেট, বৈধ পাসপোর্ট, ব্লক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে যেটি সাধারণত ১০ থেকে ১১ হাজার ইউরো মত হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় যেটি ১৩ লক্ষ থেকে শুরু করে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে আপনাকে ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হতে পারে। ভিসা ফি হিসেবে আপনাকে ৭৫ ইউরো প্রদান করতে হবে যেটি বাংলাদেশি টাকায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। ভিসা প্রসেসিং হতে সাধারণত ৬ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (Work Visa)
আপনি যদি জার্মানিতে কোন কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে যেতে হবে। তবে জার্মানির ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদনের পূর্ব শর্ত হলো আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসার মত জার্মানির কোন প্রতিষ্ঠান থেকে অথবা আপনি যেই নিয়োগ কর্তার অধীনে কাজ করতে সেখানে যাবেন তার তরফ থেকে ওয়ার্ক পারমিট অথবা কাজের অফার লেটার ম্যানেজ করতে হবে।
এরপরে অফার লেটারের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় যে ডকুমেন্টগুলো আছে সেগুলো সংগ্রহ করে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মানির দূতাবাসের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ডকুমেন্ট হিসেবে কাজের অফার লেটারের পাশাপাশি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, যদি আপনি কোন কাজে দক্ষ হন তাহলে সেক্ষেত্রে কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র হিসেবে একাডেমীক সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ফি হিসেবে ৭৫ থেকে ৮০ ইউরো পরিষোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার সম্পূর্ণ ভিসা প্রসেসিং এর জন্য ৬ সপ্তাহ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ই ইউ ব্লু কার্ড (EU Blue Card)
আপনারা যারা একটি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ বা উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন যে কাজগুলো রয়েছে যেমন আইটি এক্সপার্ট, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি সেক্টরে অভিজ্ঞ হন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই এই ভিসা নিয়ে জার্মানিতে যেতে পারবেন। আপনার যদি উচ্চতর দক্ষতা সম্পন্ন কোন কাজে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে অনায়াসেই আপনি জার্মানিতে চাইলেই যেতে পারবেন। তুলনামূলক উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং উচ্চ বেতনের জন্য এই ভিসায় যেতে হলে আপনাকে একটি জব অফার লেটার প্রয়োজন হবে। এই ভিসার জন্য আপনাকে ভিসা ফি হিসেবে ৭৫ ইউরো প্রদান করতে হবে যা বাংলাদেশী টাকায় ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা মত হয়।
বিজনেস ভিসা (Business Visa)
আপনার যদি ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো কাজে জার্মানিতে যেতে হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বিজনেস ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ যেমন ক্লায়েন্ট মিটিং সহ অন্যান্য যে কোন কাজের জন্য জার্মানিতে যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিজনেস ভিসার জন্য আবেদন করে খুব সহজেই জার্মানিতে যাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ডকুমেন্ট হিসেবে আপনার মিটিং এর ইনভাইটেশন লেটার বা ব্যবসা সংক্রান্ত যে কাজে জার্মানিতে যেতে চাচ্ছেন সেই কাজের যেকোনো একটি ডকুমেন্ট, বৈধ পাসপোর্ট এবং আপনার ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্স থাকলেই আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভিসা ফি ৮০ ইউরো ধার্য করা হয়েছে যেটি বাংলাদেশি টাকায় ১০ হাজার ৫০০ টাকা মত।
শেষ কথা
উপরে জার্মানিতে যাওয়ার জন্য সবচাইতে জনপ্রিয় যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে যেটি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন সেটি লিখে গুগলে সার্চ করলেই এ সম্পর্কিত অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন। জার্মানির প্রত্যেকটি বিচার আবেদনের কিছু পূর্ব শর্ত বা যোগ্যতা রয়েছে যেগুলো আপনি যদি সঠিকভাবে ফুলফিল করতে পারেন তাহলে ভিসা পাওয়া সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। তবে আপনি যে উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যেতে চাচ্ছেন সেই উদ্দেশ্য অনুযায়ী অবশ্যই সঠিক ভিসার ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে এরপরে আবেদন করবেন। সমস্ত ডকুমেন্ট যদি সঠিকভাবে সংগ্রহ করে জমা দিতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জার্মানির ভিসা পাওয়া সম্ভব।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url