ডেনমার্ক কাজের ভিসা ও কাজ খুঁজে পাওয়ার উপায়
ডেনমার্কের কাজের ভিসা ও কাজ খুঁজে পাওয়ার উপায়
ডেনমার্কে আমরা সবাই ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশ এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য একটি আদর্শ আবাসস্থল হিসেবে চিনে থাকি। উন্নত এবং শ্রমিক বান্ধব কাজের পরিবেশ, উচ্চ বেতন, জীবন যাত্রার মানের দিক দিয়ে ডেনমার্কের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিবছর এই দেশটি প্রচুর পরিমাণে বিদেশি শ্রমিককে বিভিন্ন কাজের জন্য নিয়োগ করে থাকে যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকেও অনেকে সেখানে কাজের সুযোগ পান। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা ডেনমার্কের কাজের ভিসা কিভাবে পাবেন, সর্বমোট কত টাকা খরচ হবে, বেতন কেমন হতে পারে, প্রতিদিন কত ঘন্টা কাজ করতে হবে, কি কি কাজের ভিসা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আপনার যদি এই সমস্ত বিষয়ে কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ডেনমার্কে কাজ খোঁজার উপায়
ডেনমার্কের কাজের জন্য যাওয়ার আগে সর্বপ্রথম আপনাকে সেখানকার কোন কোম্পানি থেকে কাজের অফার লেটার ম্যানেজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজে ডেনমার্ক এ অবস্থিত কোম্পানির যে সকল অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলো রয়েছে সেখানে যে সমস্ত কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় সেখানে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন অথবা যদি আপনার পরিচিত কেউ ডেনমার্কে থেকে থাকে তাহলে তাকে আপনার হয়ে কাজের অনুমতি পত্র সংগ্রহ করে দিতে বলতে পারেন। আপনি যদি নিজে কাজ খুঁজে পেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে (যেমন: Jobindex.dk, Workindenmark.dk) এবং কিছু আন্তর্জাতিক জব পোর্টাল বা প্রফেশনাল ওয়েবসাইট রয়েছে (যেমন: LinkedIn, Indeed) এই ওয়েবসাইটগুলো ফলো করতে পারেন এখানে আন্তর্জাতিক যে সমস্ত কোম্পানিগুলো রয়েছে সেগুলো তাদের জব অফার পোস্ট করে থাকে।
চাকরির অফার পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আপনি যখন ডেনমার্কের কোন কোম্পানির কাছ থেকে কাজের অফার লেটার পাবেন তখন ভিসার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে সেগুলো আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে। কাজের ভিসার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় সেগুলো হলোঃ
- কাজের অফার লেটার
- একটি বৈধ পাসপোর্ট যার মেয়াদ সর্বনিম্ন ছয় মাস বা তার বেশি থাকা বাধ্যতামূলক
- পাসপোর্ট সাইজের কয়েক কপি রিসেন্ট তোলা ছবি
- আপনি যদিও উচ্চশিক্ষিত হন বা আপনার যে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র হিসেবে একাডেমিক সার্টিফিকেট। বিশেষ ক্ষেত্রে সেগুলো সত্যায়িত করতে হতে পারে
- আপনি যদি কোন কাজে অভিজ্ঞ হন বা বর্তমানে বাংলাদেশে কোন কাজে নিযুক্ত থাকেন তাহলে আপনার কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- ইউরোপিয়ান স্টাইলে সিভি এবং কভার লেটার
- স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণপত্র
- ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি
সাধারণত ডেনমার্কের ওয়ার্ড পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে ওপরে বর্ণিত কাগজপত্র গুলারই প্রয়োজন হয় অফার লেটার পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব এগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করে নিবেন।
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করা
আপনি যখন অফার লেটার হাতে পাবেন এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র রেডি করে ফেলবেন তখন আপনি ডেনমার্কের যে দূতাবাস রয়েছে বা সংশ্লিষ্ট যে প্রতিষ্ঠান ডেনমার্কের ভিসা প্রসেসিং এর দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশে তাদের থেকে একটি এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। আপনারা হয়তো জানেন বর্তমানে ঢাকায় ডেনমার্কের দূতাবাস রয়েছে যাদের মাধ্যমে ডেনমার্কের সমস্ত প্রকার ভিসা প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায়।
আপনি তাদের অফিশিয়াল যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখান থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সেটা সঠিকভাবে পূরণ করার পর তাদের কাছে জমা দেয়ার মাধ্যমে এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে। এরপরে তারা আপনাকে উপরে বর্ণিত ডকুমেন্ট গুলা সংগ্রহ করে তাদের কাছে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে সেখানে তারা আপনার সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখবে এবং আপনার ডেনমারকে যাওয়ার উদ্দেশ্য কি সেগুলো যাচাই বাছাই করার পর যদি আপনাকে যোগ্য মনে করে তাহলে আপনার ভিসা এপ্রুভ করবে এবং পরবর্তী একটি নির্দিষ্ট সময় পর ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন। ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত ১ থেকে ২ মাস সময় লাগতে পারে তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি পরিবর্তন হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
ডেনমার্কে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে খরচ
বাংলাদেশ থেকে ডেনমার্কে কাজের ভিসায় যাওয়ার জন্য যে সমস্ত খরচ হয় সেগুলো অনেকগুলো বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল যেমন আপনি কোন মাধ্যমে ভিসা প্রসেস করাচ্ছেন, কোন সময় ভিসার জন্য আবেদন করছেন, কোন ভিসার জন্য আবেদন করছেন, কোন কাজের জন্য সেখানে যেতে চাচ্ছেন ইত্যাদি। তবে সাধারণভাবে ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর থেকে শুরু করে ভিসা আবেদন এবং ডেনমার্কের পৌঁছানো পর্যন্ত যে সমস্ত প্রক্রিয়া গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য কি পরিমান খরচ হতে পারে তার একটি ধারণা নিচে দেয়া হলো।
সর্বপ্রথম অফার লেটার বা ওয়ার্ক পারমিট হাতে পাওয়ার পর আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে যার জন্য আবেদন ফি হিসেবে ৩,০০০-৪,০০০ ড্যানিশ ক্রোন (DKK) বা বাংলাদেশি টাকায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য বিষয় হলো এটি সম্পূর্ণ অফিসিয়াল যে ভিসার দাম সেটি উল্লেখ করেছি এখন আপনি যদি দ্বিতীয় কোন পক্ষের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করেন তাহলে সেক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।
এরপরে ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনার যে সমস্ত ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে যেমনঃ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্সের সার্টিফিকেট, এগুলো সংগ্রহ এবং সত্যায়নের জন্য কিছু পরিমাণ খরচ হতে পারে যা আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মতো। এরপরে আপনার পাসপোর্ট করার জন্য এবং ওয়ার্ক পারমিট বা অফার লেটার সংগ্রহ করার জন্য যে সমস্ত খরচ গুলো হবে সেগুলো নিজে নিজে জেনে নিবেন।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি খরচ হলো হেলথ ইন্সুরেন্স যেটি আপনাকে ডেনমার্কে প্রবেশের পূর্বেই করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আপনি যদি একটি হেলথ ইন্সুরেন্স পলিসি কিনতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে আনুমানিক ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিতে হতে পারে। এবং অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট সময়ের ইন্সুরেন্স একবারে করিয়ে নিতে বলে যার কারণে অনেক সময় একটি বড় অংকের টাকা খরচ হয়ে যায়।
ভিসা হাতে পাওয়ার পর আপনাকে ডেনমার্কের যাওয়ার জন্য যেকোনো এয়ারলাইন্স থেকে একটি এয়ার টিকেট ক্রয় করতে হবে যার জন্য এয়ার লাইন্স ভেদে আপনাকে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে। অনেক সময় সিজনের ভিত্তিতে এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে বিমানের টিকিটের দাম কিছুটা কম বেশি হয়ে থাকে। থাকে এছাড়া হাই কোয়ালিটি যে ফ্লাইটগুলো রয়েছে সেগুলোর টিকিটের দাম তুলনামূলক একটু বেশি হয়ে থাকে।
অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা আপনার আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা একটি ব্যাংক একাউন্টে ব্লক একাউন্ট হিসেবে দেখাতে বলে যেটি সাধারণত ১ থেকে ২ লাখ টাকা হয়ে থাকে। কাজের ভিসার ক্ষেত্রে যদিও অনেক কোম্পানি এই শর্ত দেয় না তবে অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি দিতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনি যে কোম্পানিতে কাজের জন্য যেতে চাচ্ছেন তারা এ বিষয়ে কোনো শর্ত আরোপ করে কিনা সেটি জেনে নিবেন।
শেষ কথা
সর্বশেষ এক কথায় যদি ডেনমার্ক কাজের ভিসায় যাওয়ার খরচের কথা চিন্তা করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বমোট ৪ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য এ খরচের পরিমাণটা যদি আপনি কোন তৃতীয় পক্ষ ছাড়া নিজে নিজে ভিসা প্রসেসিং করান সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে আর আপনি যদি কোন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে আপনার খরচ ঠিক কত হবে এটি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
তবে উপরে যেহেতু অফিসিয়াল খরচের কথা আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি তাই যদি তৃতীয় কোন পক্ষের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে সে ক্ষেত্রে তারা যে পরিমাণ টাকা দাবি করবে এবং উপরে যে খরচের কথা বলা হয়েছে এর পার্থক্য যদি খুব বেশি হয়ে থাকে তাহলে তাদের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং না করানোই ভালো। এক্ষেত্রে আপনি একাধিক মাধ্যমের শরণাপন্ন হয়ে যারা কম খরচে এবং বিশ্বাসযোগ্য উপায় ভিসা প্রসেসিং করায় তাদের মাধ্যমে আপনার ডেনমার্কের কাজের ভিসা আবেদন করিয়ে নিতে পারেন। আর যদি কম খরচে যাওয়ার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিজে নিজে ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে এরপরে ভিসা প্রসেসিং করাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url