কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার কারন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ গুলোর মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে সময়ের সাথে সাথে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলোকে যেমন সহজ করেছে তেমনি আমাদের সময়ও বাঁচিয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে আমাদের সামনে বেশ কিছু সমস্যা আসতে শুরু করেছে সেগুলোর মধ্যে কম্পিউটার হ্যাং হওয়া অন্যতম। আজকের আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার ২০ টি কারণ সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো যাতে করে আপনারা কারণগুলো শনাক্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
অতিরিক্ত প্রসেসিং লোড
অনেক সময় আমরা একই সাথে অনেকগুলো প্রোগ্রাম রান করে থাকি যেগুলো সিপিইউকে অত্যাধিক প্রেসার দিয়ে থাকে এবং আপনার কম্পিউটারের সিপিইউ যদি হাই কনফিগারেশনের না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই আপনার কম্পিউটারের কনফিগারেশন কেমন সেটির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সফটওয়্যার রান করবেন।
অপর্যাপ্ত RAM
কম্পিউটারের RAM (Random Access Memory) সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ কারণ যাবতীয় যেসকল তথ্য কম্পিউটারের প্রসেসিং করা হয় সেগুলো সাময়িকভাবে এই মেমোরিতে জমা হয়ে থাকে। যদি আপনার কম্পিউটারে পর্যাপ্ত র্যাম স্পেস না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। বিশেষ করে যখন বড় বড় সফটওয়্যার গুলা কম্পিউটারে রান করা হয় তখন এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। তাই আপনার যদি বড় বড় সফটওয়্যার ইউজ করার প্রয়োজন হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই কম্পিউটারে অন্তত ৮ জিবি র্যাম ইন্সটল করবেন।
ড্রাইভার সমস্যা
কম্পিউটারে কিছু ড্রাইভার থাকে যেমন সাউন্ডের জন্য সাউন্ড কার্ড, গ্রাফিক্সের জন্য গ্রাফিক্স কার্ড, নেটওয়ার্কের জন্য নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ইত্যাদি। যদি এ সমস্ত যন্ত্রাংশ গুলা সঠিকভাবে কাজ না করে অথবা এগুলোর কোয়ালিটি যদি ভালো না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। এ যন্ত্রাংশগুলো কাজ না করার কারণে অনেক সময় সফটওয়্যার গুলা প্রয়োজনীয় হার্ডওয়ার এক্সেস করতে পারে না যার ফলে কম্পিউটার হ্যাং হয়।
ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস আক্রমণ
অনিরাপদ ওয়েব ব্রাউজিং, অপরিচিত বা ঝুঁকিপূর্ণ সোর্স থেকে বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করা অথবা অন্য যেকোনো কারণে কম্পিউটারে যদি ভাইরাস আক্রমণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাং করতে পারে। এই ভাইরাস গোলাপ কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় স্টোরেজ দখল করে বসে থাকে যার কারণে প্রয়োজনীয় ডাটাগুলি প্রসেস করার জন্য উপযুক্ত স্পেস থাকে না যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং করে।
হার্ডড্রাইভ ত্রুটি
বিশেষ করে পুরাতন কম্পিউটারগুলোতে সাধারণত হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করা হয় যেগুলো এসএসডির তুলনায় কম গতি সম্পন্ন। এবং এটি বেশি পুরাতন হয়ে গেলে আস্তে আস্তে পারফরম্যান্স খারাপ হতে শুরু করে এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসএসডির কারণেও কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে যদি কিনা সেটি যথেষ্ট ভালো কোয়ালিটির না হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্টোরেজ সুবিধা দিতে না পারে।
সফটওয়্যার ক্র্যাশ
অনেক সময় আমরা কম্পিউটারে একই সাথে বেশ কয়েক টি সফটওয়্যার ওপেন করে রাখি এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সফটওয়্যারই কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি স্পেস দখল করে রাখে যার কারণে কম্পিউটার ক্রমশ ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে যায় এবং যদি অতিরিক্ত প্রেসার পড়ে তাহলে সেক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাংও করতে পারে। আপনি যখন একই সাথে বড় বড় কয়েকটি সফটওয়্যার ওপেন করে রাখবেন তখন সেগুলো র্যাম এর স্পেস দখল করে নেবে এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে সেটি কম্পিউটার হ্যাং এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ওভারহিটিং
আপনার কম্পিউটারের কুলিং সিস্টেম যদি ভালো না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সিপিইউসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে যেটি কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার একটি বড় কারণ। কম্পিউটারে সাধারণত একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম থাকে যেগুলো ওভারহিট হলে অটোমেটিক্যালি কম্পিউটারকে বন্ধ করে দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে ওভারহিটিংয়ের কারণে কম্পিউটার হ্যাংও করতে পারে।
ত্রুটিপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম
আমরা কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রকার অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকি যেমন উইন্ডোজ, লিনাক্স ইত্যাদি। এই সফটওয়্যার গুলোকে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় এবং আপডেট দিতে হয়। আপনি যদি নিয়মিতভাবে এ সফটওয়্যার গুলো আপডেট না দেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অপরেটিং সিস্টেম এর মধ্যে যে সমস্ত বাগ বা গ্লিচ গুলো থাকে সেগুলো সমাধান হবে না এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে সেটি কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নিম্নমানের বা দুর্বল পাওয়ার সাপ্লাই
আপনার কম্পিউটারে যদি পর্যাপ্ত পাওয়ার সাপ্লাইয়ের অভাব থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশ গুলা সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। কম্পিউটারের সমস্ত যন্ত্রাংশ যদি সঠিকভাবে পাওয়ার সাপ্লাই না পায় তাহলে তারা কাজ করবে না যার কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই কম্পিউটার হ্যাং করবে।
কনফ্লিক্টিং বা ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রাম
কিছু প্রোগ্রাম আছে যেগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে এ রান করে এবং র্যামের স্পেস দখল করে রাখে। তাই আপনি যদি একই সাথে কয়েকটি প্রোগ্রাম ওপেন করে রেখে দেন তাহলে সে ক্ষেত্রে একটি সময় গিয়ে আপনার র্যামের সমস্ত স্পেস ব্লক হয়ে যাবে এবং কম্পিউটার হ্যাং করবে।
ডিস্ক স্পেসের অভাব
আপনার কম্পিউটারের সি প্যানেলে যদি পর্যাপ্ত ডিস্ক এক্সপ্রেস না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন গুলা তাদের ফাইলগুলো জমা রাখার এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য জন্য পর্যাপ্ত স্পেস পাবে না যেটি কম্পিউটারের ধীরগতি এবং কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি কারণ। তাই আপনার অপ্রয়োজনীয় যে ফাইল গুলা সি প্যানেলে রয়েছে সেগুলো অবশ্যই সরিয়ে রাখবেন।
সিস্টেম ফাইলে সমস্যা
কম্পিউটারে বিল্ট ইন কিছু ফাইল থাকে যেগুলো অনেক সময় ভাইরাসের আক্রমণ অথবা অন্য যেকোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং তাদের স্বাভাবিক যে কার্যক্ষমতা সেটি নষ্ট হতে পারে। অথবা অনেক সময় এই ফাইলগুলো ভুলে ডিলিট হয়ে যায় যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে।
অপটিমাইজেশন টুল
অনেকে কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার অপটিমাইজেশন টুল ব্যবহার করে থাকেন যেগুলো অনেক সময় কম্পিউটার কে অপটিমাইজের পরিবর্তে আরো ধীরগতি সম্পন্ন করে ফেলে। বর্তমানে অনেক ডুপ্লিকেট অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায় যেগুলো অপ্রেমাইজেশন টুল হিসেবে পরিচিত কিন্তু আসলে এগুলো কোন কাজেরই নয় উল্টো তারা কম্পিউটারের স্পেস ব্লক করে রাখে যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে।
পুরনো BIOS
BIOS (Basic Input/Output System) যেটি কম্পিউটারের হার্ডওয়ার কনফিগারেশন এর সাথে সম্পৃক্ত। অনেক সময় আমরা অনেক পুরাতন BIOS ব্যবহার করে থাকি যেটি কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
ভুল কনফিগারেশন
অনেক সময় আমরা আমাদের প্রয়োজনে কম্পিউটারের নতুন কিছু হার্ডওয়ার যেমন র্যাম, রম ssd কার্ড ইত্যাদি ইন্সটল করে থাকি। যদি এই যন্ত্রাংশ গুলা সঠিকভাবে কনফিগারেশন না করা হয় তাহলে সেটি ভালোভাবে কাজ করবে না এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার কারণে হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে যারা নতুন র্যাম অথবা গ্রাফিক্স কার্ড ইনস্টল করেন তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি দেখা যায়।
ব্যাকগ্রাউন্ডে অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম চালানো
অনেক সময় আমরা একই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলা অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম চালিয়ে রেখে দেই যেটি কম্পিউটার স্লো হওয়া থেকে শুরু করে কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। অটোমেটিক সফটওয়্যার আপডেট, ক্লাউড সিঙ্কিং ইত্যাদি কাজগুলো অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে আমাদের অজান্তেই চালু রয়ে যায় যেগুলোর কারণে অনেক সময় কম্পিউটার হ্যাং করে।
নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যা
অনেক সময় আমরা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় সেটি হ্যাং হয়ে যায় এর পেছনে সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে ধীরগতির ইন্টারনেট। আপনার নেটওয়ার্ক কানেকশন যদি স্টেবল না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সিস্টেমের উপরে অতিরিক্ত প্রেসার পড়ে যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অপ্রয়োজনীয় অ্যানিমেশন এবং ভিজুয়াল ইফেক্ট
উইন্ডোজের মত কিছু অপারেটিং সিস্টেমে অপ্রয়োজনীয় কিছু অ্যানিমেশন এবং ভিজুয়াল ইফেক্ট চালু করা থাকে যেগুলো কম্পিউটারের হার্ডওয়ার রিসেট গুলো ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য যে সমস্ত ফাইল গুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য যতটুকু এক্সপ্রেস প্রয়োজন সেগুলো আগে থেকে ব্লক করে রাখে। এক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারের যদি গ্রাফিক্স প্রসেসিং ক্ষমতা কম হয় অথবা গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো না থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে এটি কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পেছনে বড় কারণ হতে পারে।
মাদারবোর্ড বা অন্যান্য হার্ডওয়্যার সমস্যা
আপনার কম্পিউটারের কনফিগারেশন অনুযায়ী যদি মাদারবোর্ডের কোয়ালিটি খুব বেশি ভালো না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অন্যান্য যন্ত্রাংশ গুলা সঠিকভাবে কাজ করবে না এবং একটি পর্যায়ে গিয়ে কম্পিউটার হ্যাং করার সম্ভাবনা থাকবে। কনফিগারেশন অনুযায়ী মাদারবোর্ডের কোয়ালিটি যদি ভালো না হয় তাহলে এটি একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে পরবর্তীতে।
শেষ কথা
কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পেছনে সবচাইতে বেশি যে কারণগুলোকে দায়ী করা হয় সেগুলো সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আপনি যদি এই বিষয়গুলোতে নিয়মিত নজর রাখেন তাহলে আশা করছি আপনার কম্পিউটার কখনোই হ্যাং হবে না এবং ভালো পারফরম করবে।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url