কম্পিউটার হ্যাং হলে করণীয়

কম্পিউটার হ্যাং হলে করণীয়

কম্পিউটার হ্যাং হলে করণীয়

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ভূমিকা যে কতটা সেটা বলে শেষ করার মত না। অফিস আদালত বা পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার এখন যেন অপরিহার্য হয়ে গিয়েছে। তবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতে হয় এর মধ্যে সবচাইতে বড় যে সমস্যা সেটি হল কম্পিউটার হ্যাং হওয়া। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা কম্পিউটার হ্যাং হলে কিভাবে সেটিং পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তুলবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।

কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে এর মধ্যে সফটওয়্যারের সমস্যা, বিভিন্ন হার্ডওয়্যার যেমন র‍্যাম বা রমের সমস্যা, অথবা অপারেটিং সিস্টেমের কোন সমস্যা থাকতে পারে। কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পর কিভাবে সেটিং আবার ব্যবহার উপযোগী করবেন এবং ভবিষ্যতে এ সমস্যা থেকে বাঁচতে কি কি করণীয় রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন

কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত কারণ অনেক সময় অতিরিক্ত প্রেসার পড়ার কারণে কোন সফটওয়্যার কাজ করা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দিতে পারে, যদি হ্যাং হওয়ার কারণ এটি হয় তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে অটোমেটিক্যালি কম্পিউটার রিস্টার্ট নিয়ে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাবে। ওভারলোড এর কারণে কম্পিউটার হ্যাং হলে সাধারণত কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সেটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

কীবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করুন

হ্যাং হওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় কম্পিউটারের মাউস বা কিবোর্ড কোনটাই কাজ করে না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় কম্পিউটারের স্ক্রিনেও কোন কিছু দেখা যায় না সেটা সাদা অথবা কালো হয়ে থাকে। এই অবস্থায় আপনাকে কিছু কিবোর্ড শর্টকাট ব্যবহার করতে হবে সেগুলো নিচে দেয়া হল।

Ctrl + Alt + Delete: এই তিনটি বাটন একসাথে চাপলে Task Manager নামে একটি অপশন আসবে সেখানে ঢুকে যেই সফটওয়্যারে কাজ করার সময় কম্পিউটারটি হ্যাং করেছিল সেটি ক্লোজ করবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সেখান থেকে End Task বাটনে ক্লিক করে সেই সফটওয়্যারটি বন্ধ করে দিতে হবে তাহলে কম্পিউটারটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

Alt + F4: এই বাটনটি চাপলে সাধারণত কম্পিউটারের যাবতীয় যে সমস্ত সফটওয়্যার ওপেন থাকে সেগুলো অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যায়। যদি আপনার কম্পিউটার কোন সফটওয়্যারের কারণে হ্যাং হয়ে থাকে তাহলে এই কাজটি করলে আশা করা যায় আবার কম্পিউটার কাজ করা শুরু করবে।

Ctrl + Shift + Esc: এ তিনটি বাটন একসাথে চাপলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে Task Manager ওপেন হবে এবং আপনি চাইলে সেখান থেকে যে সফটওয়্যার টি হ্যাং করেছে সেটি বন্ধ করতে পারবেন।

ফোর্স রিস্টার্ট করুন

ওপরের কোনটিই যদি কাজ না করে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে ফোর্স রিস্টার্ট করতে হতে পারে। এতে করার জন্য আপনার কম্পিউটারের পাওয়ার বাটন চাপ দিয়ে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখুন এরপরে অটোমেটিক্যালি যখন কম্পিউটার টি বন্ধ হয়ে যাবে তখন ছেড়ে দিবেন এবং কম্পিউটারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আবার পুনরায় পাওয়ার বাটন চেপে সেটি অন করুন এটি করলে আশা করা যায় আপনার কম্পিউটারটি আবার ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে।

বিদ্রঃ এক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাথায় রাখবেন সেটি হল ফোর্স রিস্টার্ট করলে কম্পিউটারের ইন্টারনাল স্টোরেজে যে সমস্ত ফাইলগুলো ছিল সেগুলো কিন্তু হারিয়ে যাবে এবং আপনার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট থেকে শুরু করে যেগুলোতে পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হয় সেগুলো থেকে লগ আউট হয়ে যাবে তাই রিস্টার্ট মারার আগে এই বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার আপডেট করুন

কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো দীর্ঘদিন যাবত আপনার কম্পিউটারে থাকা বিভিন্ন এপ্লিকেশন বা সিস্টেম সফটওয়্যার আপডেট না করা। একই সফটওয়্যারের বিভিন্ন বাগ বাগ গ্লিচ থাকে যেগুলো পরবর্তীতে আপডেটের মাধ্যমে ঠিক করে দেয়া হয় তাই আপনার সফটওয়্যার গুলো নিয়মিত আপডেট হচ্ছে কিনা সেটা চেক করবেন এক্ষেত্রে কম্পিউটার হ্যাং করা সম্ভবনা অনেক ক্ষেত্রেই কমে যাবে।

ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস স্ক্যান করুন

কম্পিউটার হ্যাং হওয়ার পেছনে সবচাইতে ক্ষতিকর যে কারণটি রয়েছে সেটি হল ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস এর আক্রমণ। অনেক সময় দেখা যায় আমরা বিভিন্ন অনিরাপদ ওয়েবসাইট ভিজিট করি এবং আননোন কোন সোর্স থেকে বিভিন্ন ফাইল কম্পিউটারে ইনপুট করে থাকি সে ক্ষেত্রে কম্পিউটারটি ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ঝুঁকি থেকে বাঁচতে আপনাকে নিয়মিত ভাইরাস স্ক্যান করতে হবে এবং যেকোনো ফাইল এবং ওয়েবসাইট ভিজিট এর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে বেশ কিছু জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার প্রচলিত রয়েছে যেমন Windows Defender (উইন্ডোজের বিল্ট-ইন সিকিউরিটি সফটওয়্যার), Avast, Malwarebytes ইত্যাদি আপনি চাইলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

হার্ডওয়্যার সমস্যা চেক করুন

সফটওয়্যারে সমস্যার পাশাপাশি বিভিন্ন হার্ডওয়ার জনিত সমস্যার কারণেও কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় দীর্ঘ সময় কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে সিপিইউ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় যার কারণে কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। এই সমস্যাটি থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি ভালো কুলিং সিস্টেম ইন্সটল করতে হবে যেটি ভালোভাবে সিপিইউকে ঠান্ডা রাখতে পারবে।

অনেক সময় আমরা কম্পিউটারের কনফিগারেশন এর বাইরে অনেক বড় বড় সফটওয়্যার ইনস্টল করি এবং সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই সেক্ষেত্রে অনেক সময় কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি 4gb র‍্যামের একটি কম্পিউটারে অনেক বড় বড় সাইজের সফটওয়্যার গুলো ইন্সটল করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার হ্যাং হতে পারে। তাই আপনার যদি এই সমস্ত সফটওয়্যার ইউজ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি ভালো ক্যাটাগরির র‍্যাম ইন্সটল করবেন।

বর্তমানে অনেক কম্পিউটার গুলোতে হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করা হয় যেটার কারণে অনেক সময় কম্পিউটারের প্রসেসিং টাইম বেড়ে যায় এবং একটা সময় গিয়ে সেটি হ্যাং হতে শুরু করে। তাই যদি সম্ভব হয় হার্ড ড্রাইভের পরিবর্তে এসএসডি কার্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন এক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারের পারফরম্যান্স যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি হ্যাং হওয়া সম্ভবনা অনেকটাই কমে আসবে।

সিস্টেম রিস্টোর বা রিসেট করুন

উপরের সবগুলো প্রসেস এপ্লাই করার পরও যদি আপনার কম্পিউটার হ্যাং করতেই থাকেন তাহলে আপনাকে সিস্টেম রিসেট করতে হবে। সিস্টেম রিসেট বলতে আপনার কম্পিউটারে যে অপারেটিং সিস্টেমটি রয়েছে সেটি পুনরায় ইন্সটল করাকে বোঝায়। অনেক সময় অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটির কারণে কম্পিউটার হ্যাং করতে পারে এক্ষেত্রে আপনি যদি সেটি পুনরায় ইন্সটল করেন তাহলে সেক্ষেত্রে এই সমস্যাটির সমাধান পেয়ে যেতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপে থাকা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলির একটি কপি অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করে রাখবেন কারণ সিস্টেম রিসেট করলে সেগুলো মুছে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

শেষ কথা

উপরে যেই পদ্ধতিগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো এপ্লাই করলে আশা করা যায় আপনার কম্পিউটারের হ্যাং হওয়ার সমস্যাটি রয়েছে সেটি সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। এরপরেও যদি কোন কারণে এটি সমাধান করতে না পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো একজন টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করা, ভাইরাস স্ক্যান করা, হার্ডওয়ার বা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ গুলা নিয়মিত পরীক্ষা করা এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন তাহলে আপনার কম্পিউটার টি ভালোভাবে চলবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url