পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন কত
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন কত
পর্তুগাল এমন একটি দেশ যেখানে বৈধ এবং অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে যেয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় অবৈধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে পর্তুগাল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত উচ্চ বেতন এবং উন্নত জীবন যাপনের জন্য পর্তুগাল একটি আদর্শ দেশ যার কারণে মানুষ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যেতেও দ্বিধাবোধ করে না। এছাড়া বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪ সালে শ্রমিক সংকটের কারণে পর্তুগালের বিভিন্ন সেক্টরের বেতন কিন্তু আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে যাতে বিদেশী কর্মীরা আকৃষ্ট হয়ে সেখানে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চায়। আজকে আমরা পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তাই আপনি যদি একজন পর্তুগাল অভিবাসন প্রত্যাশী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাহলে পর্তুগালের শ্রমবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পর্তুগালে কোন কাজের চাহিদা বেশি
পর্তুগালে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর এক এক দেশ থেকে এক এক ধরনের কাজের জন্য সাধারণত পর্তুগাল সরকার ভিসা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে যারা পর্তুগালে যেতে চায় তারা যে সমস্ত কাজের ভিসা নিয়ে যেতে পারবে তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
- ট্রাক ড্রাইভার
- লরি ড্রাইভার
- উড প্রসেসিং
- ফার্নিচার ফ্যাক্টরি
- গার্মেন্টস শ্রমিক
- সিকিউরিটি গার্ড
- জেনারেল লেবার
- ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার
- কৃষি শ্রমিক
- ইলেকট্রিশিয়ান
- নির্মাণ শ্রমিক
- হাউজ ক্লিনার
- রেস্টুরেন্ট ক্লিনার
- রোড ক্লিনার
- অফিস ক্লিনার
- ফরেস্ট্রি বা বনায়ন খাত
- ফিশারী বা মাছ প্রসেসিং ইত্যাদি
পর্তুগালে কোন কাজের বেতন কত
উপরে বর্ণিত যেকোনো একটি কাজের ভিসা নিয়ে আপনি পর্তুগালে যেতে পারবেন। কাজের চাহিদার পাশাপাশি বেতন সম্পর্কেও আমাদের সবারই কিছু প্রশ্ন থাকে, কোন কাজের বেতন কত সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। তবে নিচে যে বেতনের কথা বলা হয়েছে সেটি একজন অফিসিয়াল ওয়ার্কারের বেতন অর্থাৎ আপনি যদি লিগ্যাল ওয়েতে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পর্তুগালে যান তাহলে এই পরিমাণ বেতন পাবেন। অন্যদিকে আপনি যদি অবৈধ পথে পর্তুগালে যান তাহলে সে ক্ষেত্রে এ পরিমাণ বেতন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। আর ইউরোপের দেশ হওয়ায় পর্তুগালে মুদ্রা হিসেবে ইউরোর প্রচলন রয়েছে, সেখানকার বেতন ও সাধারণত ইউরোতে ধার্য করা হয় তবে আপনাদের সুবিধার্থে আমি বাংলাদেশী টাকায় বেতন কত হবে সেটি বলার চেষ্টা করেছি।
ট্রাক ড্রাইভার
বিভিন্ন মালবাহী ট্রাক বা লরি ড্রাইভার হিসেবে যারা পর্তুগালে যাবেন তাদের মাসিক বেতন হবে ১৯৯৫ ইউরো মতো যা আজকের রেট অনুযায়ী বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ১২ হাজার ৭২৫ টাকা হয়। তবে এক্ষেত্রে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও আপনাকে পর্তুগালে গিয়ে সেখানে পরীক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে নিতে হবে।
উড প্রসেসিং বা ফার্নিচার ফ্যাক্টরি
যারা উড প্রসেসিং, স মিল বা ফার্নিচার ফ্যাক্টরিতে কাজ করবেন তাদের মাসিক বেতন হবে ১৫৪২ ইউরো মতো যা বাংলাদেশী টাকায় আজকের রেট অনুযায়ী ২ লাখ ০৪ হাজার ৩২২ টাকা হয়। এক্ষেত্রে উড প্রসেসিং এবং ফার্নিচার ফ্যাক্টরির কাজের ক্ষেত্রে বেতন ভিন্ন রকমের হতে পারে।
গার্মেন্টস শ্রমিক
পর্তুগালের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন প্রতি মাসে ১১৭৫ ইউরো হয়ে থাকে বাংলাদেশী টাকায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭০৯ টাকা হয়। যারা বাংলাদেশ বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের চাকরির একটি বিশাল সুযোগ রয়েছে পর্তুগালে। একদিকে যেমন এই কাজের চাহিদা অনেক বেশি অন্যদিকে বেতন ও বাংলাদেশের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। তাই আপনাদের যদি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে পর্তুগালে যেতে পারেন।
সিকিউরিটি গার্ড
পর্তুগালের বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং অফিস আদালতে সিকিউরিটি গার্ডের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যাচ্ছে। একজন সিকিউরিটি গার্ডের বেতন পর্তুগালে ১৬২৯ ইউরো যা বাংলাদেশে টাকায় কনভার্ট করলে ২ লাখ ১৭ হাজার ২৫৯ টাকা হয়। যদিও অন্যান্য কাজের তুলনায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির ক্ষেত্রে বেশি সময় ডিউটি করতে হয় তবে অন্যান্য কাজের তুলনায় সিকিউরিটি গার্ডের বেতন অনেকটাই বেশি হয়ে থাকে।
জেনারেল লেবার
জেনারেল লেবার বলতে যারা সাধারণ কিছু কাজ যেমন রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি, ডেলিভারি ম্যান ইত্যাদি কাজের পর্তুগালে যায় তাদেরকে বোঝায়। যারা এ ধরনের ভিসা নিয়ে পর্তুগালে যাবেন তাদের বেতন হবে ১৩৪৩ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ১১৫ টাকা হবে। বাংলাদেশ থেকে সাধারণত জেনারেল লেবার ভিসা নিয়েই বেশি সংখ্যক মানুষ পর্তুগালে যেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জেনারেল লেবার ভিসার একটি সুবিধা হল আপনি সেখানে গিয়ে সুবিধামতো যেকোনো একটি কাজ করতে পারবেন।
ফ্যক্টরি ওয়ার্কার
পর্তুগালের বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে যারা কাজ করবেন তাদের বেতন হবে মাসিক ১৬৯২ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৬৬২ টাকার সমান। পর্তুগালের বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি গুলা বেতনের পাশাপাশি থাকার জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থাও করে থাকে, এছাড়া উন্নত পরিবেশে কাজের সুযোগ তো থাকছেই। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো পর্তুগালেও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কিছু নীতিমালা রয়েছে যেগুলো শ্রমিক বান্ধব কাজের পরিবেশের সুযোগ করে দেয়।
কৃষি শ্রমিক
কৃষি খাতে শ্রমিকের চাহিদা পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেই রয়েছে। ফল এবং সবজি বাগানের পরিচর্যা থেকে শুরু করে অন্যান্য ফসলে জমিতে কাজের জন্য আপনি কৃষি শ্রমিক হিসেবে পর্তুগালে যেতে পারেন। একজন কিসের শ্রমিক হিসেবে যদি আপনি পর্তুগালে যান তাহলে আপনি প্রতি মাসে বেতন পাবেন ১৫২২ ইউরো যেটি বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ ২ হাজার ৯৮৯ টাকা হয়। কৃষি কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় এক হলো মৌসুমী বা টেম্পোরারি শ্রমিক আরেকটি হল পার্মানেন্ট শ্রমিক।
ইলেক্ট্রিশিয়ান
একজন ইলেকট্রিশিয়ান এর বেতন সাধারণত প্রতি মাসে ১৯৩৭ ইউরো হয় যেটি বাংলাদেশের ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৭ টাকার সমান। আপনি যদি একজন দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান হয়ে থাকেন তাহলে পর্তুগালে এই কাজের জন্য যেতে পারেন। উপরের অন্যান্য কাজের তুলনায় ইলেকট্রিসিয়ানদের বেতন কিন্তু অনেক বেশি এবং কাজের চাহিদাও যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে। আপনারা যারা বাংলাদেশে এই সেক্টরের কাজ করেন তারা চাইলে এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
নির্মাণ শ্রমিক
নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে পর্তুগাল গেলে আপনি প্লাম্বার, ওয়েল্ডার, হেলপার সহ এই জাতীয় কাজগুলো করতে পারবেন। যারা বর্তমানে দেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ভিষাটি উপযুক্ত হবে। একজন নির্মাণ শ্রমিকের বেতন পর্তুগালের 2130 ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে যেটি বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। আপনি যদি একজন দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাজের উপরে নির্ভর করে এর চাইতে বেশি বেতন পেতে পারেন। ইলেকট্রিশিয়ানের পরে সবচাইতে বেশি বেতন নির্ধারণ করা হয় নির্মাণ শ্রমিকদের। আপনার যদি পরিশ্রম করার মন মানসিকতা থাকে তাহলে প্রচুর পরিমাণে বেতন তুলতে পারবেন।
ক্লিনার
আপনারা যারা পর্যটন শিল্প এবং বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ক্লিনার হিসেবে কাজ করবেন তাদের বেতন ১৩৯০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার উপরে হয়। এই কাজের জন্য খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না তাই যারা খুব সহজে এবং মোটামুটি বেতনের একটি কাজের উদ্দেশ্যে পর্তুগালে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে ক্লিনার হিসেবে যাওয়াটা বেটার হবে।
ফরেস্ট্রি বা বনায়ন
বর্তমানে পর্তুগালে সরকারিভাবে ব্যাপক পরিমাণে মনোনয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে যার জন্য এই সেক্টরে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিকের চাহিদা দেখা দিয়েছে। আপনি শুধুমাত্র গাছ লাগিয়ে এবং সেগুলোর পরিচর্যার মাধ্যমে একটি ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যারা এ সমস্ত কাজের জন্য পর্তুগালে যাবেন তাদের বেতন হবে মাসিক ১৮০০ ইউরো মতো যা বাংলাদেশে টাকায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়।
ফিশারী বা মাছ প্রসেসিং
পর্তুগালে মাছের যে মার্কেট গুলো রয়েছে সেখানে অথবা আপনি যদি জেলে হিসেবে পর্তুগালে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ১৩৮৬ ইউরো বাংলাদেশী টাকায় ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা মত হয়। এই সেক্টরের কাজগুলোর মধ্যে মাছ ধরা, মাছ কাটা সহ মাছের যাবতীয় প্রসেসিং সংক্রান্ত যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো করতে হয়।
শেষ কথা
উপরে আমি যে বেতনের পরিমাণটা বলেছি সেটি একজন বৈধ শ্রমিক বা কর্মীর বেতন। তবে সব ক্ষেত্রে বেতন যে একই রকম হবে বিষয়টি এমন নয়। বেতনের পরিমাণ একদিকে যেমন একজন শ্রমিকের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে অন্যদিকে কোম্পানির অবস্থান এবং ধরনের উপরে নির্ভর করেও বেতন কম বা বেশি হতে পারে। আবার বাংলাদেশ থেকে সবসময় একই ধরনের কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয় না এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আপনি যদি পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেতে চান তাহলে অবশ্যই একটি বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে যাওয়ার চেষ্টা করবেন কখনোই অবৈধভাবে বা অযাচিত কোন মাধ্যমে পর্তুগালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url