বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ও ভিসা খরচ কত জানুন
বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়ম ও ভিসা খরচ কত জানুন
দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী ভাইদের কাছে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিভাবে পাওয়া যায় এই প্রশ্নটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বর্তমানে দেশটির ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া একটু কঠিন তবুও বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই পর্তুগালের ভিসা পেতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা মূলত বাংলাদেশ থেকে কিভাবে সহজে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যাবে এবং বাংলাদেশ থেকে পর্তুগাল যাওয়ার নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। আপনি যদি একজন পর্তুগাল অভিবাসন প্রত্যাশী হয়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন তাহলে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট
যেহেতু বর্তমানে পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া একটু কঠিন তাই আপনাকে ভিসা পেতে হলে বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে হবে। আপনি যদি কাজের জন্য পর্তুগালে পাড়ি জমাতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনার যে জিনিসটি প্রয়োজন হবে সেটি হল পর্তুগালের কোনো কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার সাথে চুক্তিপত্র বা সহজ কথায় বলতে গেলে ওয়ার্ক পারমিট। জি হ্যাঁ পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার পূর্ব শর্ত হলো আপনি যার অধীনে কাজ করবেন বা যে কোম্পানিতে কাজ করবেন সেই কোম্পানির নিকট থেকে একটি ওয়ার্ক পারমিট অবশ্যই ম্যানেজ করতে হবে। এরপরে যখন আপনার হাতে ওয়ার্ক পারমিট এসে পৌঁছাবে তখন প্রয়োজনীয় যেসব ডকুমেন্ট যেমন পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিটের ফটোকপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ অন্যান্য যে ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করে জমা দেয়ার মাধ্যমে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করার উপায়
যেহেতু পর্তুগালের ভিসা আবেদনের জন্য সর্বপ্রথম ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে সে ক্ষেত্রে আপনি মূলত দুই থেকে তিনটি মাধ্যম অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত আপনার যদি পরিচিত কেউ পর্তুগালে অবস্থান করে তাহলে তার মাধ্যমে সেখানকার যেকোনো একটি কোম্পানির থেকে ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বলতে পারেন। অর্থাৎ আপনার পরিচিত কেউ যদি পর্তুগালে কোন কোম্পানিতে কর্মরত থাকে অথবা সে যদি আপনার হয়ে কোন কোম্পানিতে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করে দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজেই ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন।
দ্বিতীয় যে উপায়টি রয়েছে সেটি হল বাংলাদেশের বিশ্বস্ত কিছু এজেন্সি আছে যারা পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কাজ করে থাকে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করে একটি ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যে আপনি যে এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করতে চাচ্ছেন সেটা যেন অবশ্যই বিশ্বস্ত হয় তা না হলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আপনি যদি বিশ্বস্ত কোন এজেন্সি খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে তারা আপনার ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে একদম ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে দেবে।
তৃতীয় যে উপায়টি রয়েছে সেটি হল আপনি নিজেই পর্তুগালের যে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো রয়েছে সেগুলোর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন। কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের অফিসিয়াল যে ওয়েবসাইট গুলো রয়েছে সেগুলোতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে আপনি চাইলে ওয়েবসাইট ভিজিট করে আপনার যে কাজের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা রয়েছে বা আপনি যে কাজের জন্য পর্তুগালে যেতে চান সেই কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপরে কোম্পানির নির্দেশনা অনুযায়ী যখন আবেদন করবেন তারা যদি পরবর্তীতে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে আপনি ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে খুব সহজেই যেতে পারবেন।
পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ
যেহেতু অন্যান্য দেশের তুলনায় বর্তমানে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চাহিদা অনেক বেশি যার কারণে একদিকে যেমন ভিসা খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে অন্যদিকে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে গিয়েছে। উচ্চ বেতন এবং উন্নত জীবনযাত্রার জন্য বর্তমানে যারা কাজের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমাতে চায় তাদের অনেক বড় একটি অংশ পর্তুগালের উদ্দেশ্যে যেতে চায়। বর্তমানে আপনি যদি কাজের ভিসা নিয়ে পর্তুগালে যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১১ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
অবশ্য আপনি কোন মাধ্যমে পর্তুগালের ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করছেন এবং ভিসা প্রসেসিং করাচ্ছেন তার উপরে খরচটা অনেকাংশে নির্ভর করবে। যদি আপনি নিজে নিজে ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে সে ক্ষেত্রে খরচ সবচেয়ে কম হবে। অন্যদিকে আপনি যদি আপনার পরিচিত কোন মাধ্যমে এই কাজটি করান তাহলে সে ক্ষেত্রে কোন এজেন্সি বা দালালের তুলনায় খরচ অনেকটাই কম হবে। তাই আপনার ক্ষেত্রে খরচ কেমন হবে এটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল আপনি যে মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাবেন তাদের থেকে খরচের পরিমাণটা জেনে নিবেন।
পর্তুগালের কাজের বেতন ও সুযোগ সুবিধা
যদিও পর্তুগালে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে হলে আপনাকে বেশ মোটা অংকের একটি টাকা খরচ করতে হবে তবুও সুযোগ-সুবিধা এবং বেতনের কথা চিন্তা করলে এক কথায় বলা যায় যে পরিমাণ টাকা খরচ করবেন সেটি এক বছরের মধ্যেই যদি ভালোভাবে কাজ করেন তাহলে তুলে ফেলতে পারবেন। পর্তুগালের কাজের ভিসার এত পরিমান চাহিদার জন্য মূলত এই বিষয়টাই দায়ী। পর্তুগালের মত এত বেশি বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে। এছাড়া আপনি যদি স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স কার্ড পাওয়া যথেষ্ট সহজ।
আপনি যদি পর্তুগালের সর্বনিম্ন বেতনের কথা চিন্তা করেন তাহলে সেটি সর্বনিম্ন বাংলাদেশী টাকায় ৯০ হাজার টাকা। এছাড়া আপনি যদি ঘন্টা প্রতি বেতনের কথা হিসাব করেন তাহলে প্রতি ঘন্টায় আপনার বেতন হবে ৬ দশমিক ১২ ইউরো যা বর্তমানে বাংলাদেশে টাকায় ৮১৪ টাকা মত। আপনি যদি প্রতিদিন গড়ে সাত ঘন্টা করে কাজ করেন তাহলে প্রতিদিনে আপনি ইনকাম করতে পারবেন ৪২ ইউরো মত যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ৫ হাজার ৮৮৬ টাকা এবং প্রতি মাসে আপনার বেতনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১৭ হাজার ২২০ টাকা।
শেষ কথা
ওপরে যে আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো মূলত যারা লিগ্যালভাবে পর্তুগালে যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। অবৈধ পথে বর্তমানে পর্তুগাল ইতালি সহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মানুষ যাওয়ার চেষ্টা করছে যার কারণে এই দেশগুলোর সরকার এ ব্যাপারটা অনেক সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করছে। আপনি যদি আসলেই এই উন্নত দেশগুলোর সুযোগ সুবিধা গুলো নিতে চান তাহলে আপনাকে বৈধভাবে সে দেশে যেতে হবে অবৈধভাবে গিয়ে কোনভাবেই এই সুযোগ-সুবিধা গুলো ভোগ করতে পারবেন না। তাই আপনাদের জন্য পরামর্শ থাকবে অবশ্যই একটু সময় লাগলেও বৈধভাবে এই দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url