2024 সালে লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন, কাজের চাহিদা এবং যোগ্যতা
2024 সালে লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন, কাজের চাহিদা এবং যোগ্যতা
আপনারা হয়তো জানেন সেনজেন ভুক্ত যে দেশগুলো রয়েছে তার মধ্যে লিথুনিয়াতে ভিসা সাকসেস রেট সবচাইতে বেশি অর্থাৎ আপনি যদি লিথুনিয়ায় ভিসার জন্য এপ্লাই করেন তাহলে ভিসা পাওয়া সম্ভাবনা অন্যান্য সেনজেন ভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই বেশি থাকবে। আপনারা যারা সহজে ইউরোপের সেনজেনভুক্ত কোন দেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন তারা লিথুনিয়া নিয়ে ভাবতে পারেন কারণ একদিকে যেমন এখানে ভিসা সাকসেস রেট বেশি অন্যদিকে ভিসা আবেদনের জন্য খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য শর্তাবলীও নেই।
আজকের আর্টিকেলে আমরা লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন, কি কি কাজ পাওয়া যায়, ভিসা আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে আশা করা যায় লিথুয়ানিয়ায় কাজের ভিসা এবং কাজের চাহিদা থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্যগুলো জানতে পারবেন।
লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন কত?
২০২৪ সালে এসে লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন ২ হাজার ইউরো ধরা যায়, যদিও সবার ক্ষেত্রে বেতন একই রকম হয় না তবুও গড় বেতনের কথা চিন্তা করলে আপনার বেতন এর আশেপাশেই হবে। এই বেতনের পরিমাণ কে যদি আপনি বাংলাদেশে টাকায় রূপান্তর করেন তাহলে আজকের রেট অনুযায়ী হবে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ টাকা যে টি অনেক বেশি।
এই বেতনের পরিমাণটা শুধু আপনাদের একটি ধারণা দেয়ার জন্য বলতেছি বেতন সম্পূর্ণটাই নির্ভর করবে আপনি কোন ধরনের কাজ করছেন, আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন এবং আপনি পার্টটাইম নাকি ফুলটাইম জব করছেন সেটির উপর। কিন্তু আপনারা লিথুয়ানিয়ায় গড় বেতন ২০০০ ইউরো মত ধরে নিতে পারেন। তবে এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো এই দুই হাজার ইউরোপ বেতন কিন্তু আপনি ট্যাক্স কাটার আগে পাবেন অর্থাৎ আপনি যে পরিমাণ বেতন পাবেন তার থেকে ইনকাম ট্যাক্স বাদ দিয়ে যা থাকবে সেই টাকা টি আপনি হাতে পাবেন।
লিথুনিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি?
লিথুয়ানিয়ায় বর্তমানে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টের ওয়েটারের জব অনেক ডিমান্ডে আছে। এছাড়া বিভিন্ন সিজনাল যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলোর চাহিদা ও মোটামুটি রয়েছে। সিজনাল জবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ফল ও সবজির বাগানে কাজ, কনস্ট্রাকশন এর কাজ ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি গরমের সিজনের জন্য সেখানে যেতে চাচ্ছেন সিজনাল ওয়ার্কার হিসেবে সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন একটি ফসল তোলার কাজ করতে হবে অথবা কোন সবজি বাগান বা ফল বাগান থেকে সবজি বা ফল তুলতে হবে।
এছাড়া লিথুয়ানিয়ায় ক্লিনিং এবং হাউজকিপিং জবের চাহিদাও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। ক্লিনিং জব এর মধ্যে হাউজ ক্লিনিং, অফিস ক্লিনিং, রোড ক্লিনিং এবং স্কুল ক্লিনিং ইত্যাদি রয়েছে। আর হাউসকিপিং জব বলতে বাসা বাড়ির যে সমস্ত কাজগুলো রয়েছে সেগুলোকে বোঝায় অর্থাৎ সেখানে যেয়ে স্বচ্ছল ফ্যামিলিগুলো রয়েছে তারা তাদের বাসার দৈনন্দিন কাজগুলো করানোর জন্য কাজের লোক রাখে আপনারা চাইলে সেই কাজের জন্য যেতে পারেন।
আর যারা বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে চান তারাও কিন্তু লিথুয়ানিয়ায় কাজের জন্য যেতে পারবেন কারণ সেখানে বর্তমানে এ ধরনের কাজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। শুধু বাচ্চা নয় বয়স্ক মানুষের খেয়াল রাখার জন্য লিথুয়ানিয়ায় যাদের সামর্থ্য আছে তারা কেয়ারটেকার রাখে। তাই আপনি চাইলে একজন কেয়ারটেকার হিসেবে লিথুনিয়াতে যেতে পারবেন এই কাজের বেশ ভালো পরিমাণে চাহিদা রয়েছে।
এছাড়াও কনস্ট্রাকশন, ডেলিভারি ম্যান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার এবং বিভিন্ন যে পণ্যের গোদামগুলো রয়েছে সেগুলোতে কাজের চাহিদা ও মোটামুটি ভালো পরিমাণে আছে আপনি চাইলে এই কাজগুলোর জন্য সেখানে যেতে পারবেন। আর যারা বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে ক্লিনার, বাবুর্চি, ডেলিভারি বয় বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেফ হিসেবে বর্তমানে কাজ করেন তারা চাইলে এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে লিথুনিয়ায় গিয়ে বেশ ভালো পরিমাণে বেতনের চাকরি করতে পারবেন।
উপরের আলোচনা থেকে আশা করি জানতে পেরেছেন বর্তমানে লিথুনিয়াতে চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলো কি কি। এর মধ্যে সবগুলো কাজই সবাই করতে পারবে না আপনি আপনার পছন্দমত যদি আপনার ভালো লাগে বা যে কাজে আপনি দক্ষ সে রকম একটি কাজ বেছে নিয়ে লিথুয়ানিয়ায় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি সুবিধা রয়েছে সেটি হলো আপনি যে কোন প্রকার কাজ নিয়ে যদি বাংলাদেশ থেকে যান এবং পরবর্তীতে সে কাজ আর করতে না চান তাহলে আপনি আপনার কাজ পরিবর্তন করে নিতে পারবেন তবে এক্ষেত্রে আপনি যে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই কাজের উপরে ন্যূনতম কিছু দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন কাজে দক্ষ না হওয়া সত্ত্বেও ভিসা আবেদনের সময় আন্দাজে একটি কাজের দক্ষতার কথা বলে থাকেন সেটা কখনোই উচিত নয় কারণ আপনি যখন ভিসা পাওয়ার পর সেখানে গিয়ে কাজ করতে যাবেন তখন যদি তারা দেখতে পায় যে আপনি আসলে এই কাজে অভিজ্ঞ নয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার উপর একটি খারাপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যেটি আপনার বেতন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উপরেও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আপনি যদি আসলেই কোন কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন সেই কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র হিসেবে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট অবশ্যই সংগ্রহ করে রাখবেন।
তাছাড়া প্রত্যেকটি কাজের বেতন এবং সুযোগ সুবিধা আলাদা হয়ে থাকে তাই ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে যেটি আপনার জন্য ভালো হবে সেই কাজের জন্য আবেদন করবেন।
লিথুনিয়ার কাজের ভিসা পেতে যেসব যোগ্যতা লাগে
প্রথমত আপনাকে লিথুনিয়ায় অবস্থিত যে কোন কোম্পানি থেকে একটি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি কোন ফাইভ স্টার হোটেলে কাজ করার জন্যলিথুনিয়ায় যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে সেই হোটেলের তরফ থেকে একটি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য আপনাকে সুন্দরভাবে একটি সিভি এবং কভার লেটার প্রস্তুত করতে হবে যেগুলো আপনি ইউটিউবে অথবা গুগলে সার্চ করে কিভাবে বানাতে হয় সেটি দেখে নিবেন। এই দুটি ডকুমেন্ট রেডি করার পর আপনি যে কোম্পানির পারমিট নিতে চাচ্ছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে সিভি এবং কভার লেটার জমা দিবেন। তারা যদি আপনার সমস্ত যোগ্যতা দেখে আপনাকে কাজের সুযোগ দিতে চায় তাহলে সে ক্ষেত্রে একটি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করবে।
আপনি যখন ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন এর পরের প্রসেস গুলো সম্পন্ন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে একটি বৈধ পাসপোর্ট করতে হবে যেটির মেয়াদ মিনিমাম 6 মাস থাকতে হবে এবং তার সাথে মিনিমাম ২ পেজ খালি থাকতে হবে পাসপোর্ট এর। এরপরে আপনাকে অবশ্যই লিথুনিয়ায় প্রবেশের আগেই হেলথ ইন্সুরেন্স করতে হবে এটি বাধ্যতামূলক। আর যারা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে লিথুনিয়ায় যেতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র হিসেবে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে এছাড়া কখনোই আপনি একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গণ্য হবেন না। অনেকের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট সংগ্রহের সুযোগ থাকে না যেমন যারা ইলেকট্রিশিয়ান বা অন্যান্য সাধারণ কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে সার্টিফিকেট এর পরিবর্তে আপনি যদি ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করার পর যে মজুরি পাচ্ছেন সেটার জন্য যদি একটি ভাউচার বা রিসিভ সংগ্রহ করেন সেক্ষেত্রেও হবে।
এরপরে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে ডকুমেন্টটি রয়েছে সেটি হল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। শুধু লিথুনিয়ায় না আপনি যদি ইউরোপের কোন দেশে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতেই হবে এছাড়া আপনি কখনো কোনোভাবেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
এরপরে আপনাকে ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হবে সাথে এমব্যাসি ফি ও। এক এক রকমের ভিসার জন্য এক এক পরিমাণ ফি দিতে হয় সেটি আপনারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে জেনে নিবেন। এর পরে আপনাকে ভিএফএস এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য কিছু পরিমাণ ফি দিতে হতে পারে।
শেষ কথা
আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি লিথুনিয়ার কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত যে তথ্যগুলো আপনার জানার দরকার ছিল সেগুলো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য হল ভিসা সম্পর্কে আপনাদেরকে ওভারঅল একটি ধারণা দেয়া কখনোই একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে একটি দেশের ভিসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ আইডিয়া দেয়া সম্ভব হয় না। এখান থেকে আইডিয়া নিয়ে আপনি বিশ্বস্ত কোন এজেন্সি অথবা অন্য কোন মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিংহ অন্যান্য আরো বিস্তারিত যে তথ্যগুলো জানা দরকার সেগুলো তাদের থেকে জেনে নিবেন, ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url