ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা- আবেদনের সময় ও প্রক্রিয়া
ফিনল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা- আবেদনের সময় ও প্রক্রিয়া
বিশ্বের সবচাইতে সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী আবেদন করে থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন সম্পর্কিত বিষয়গুলো একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে এবং প্রত্যেকটি ধাপে কত টাকা খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
ফিনল্যান্ডে এপ্লিকেশন কখন ওপেন হয়
ফিনল্যান্ডে মূলত বছরে দুটি সেশনে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয় একটি জানুয়ারিতে এবং আরেকটি হলো সেপ্টেম্বরে। জানুয়ারি সেশনটা তুলনামূলক ছোট সেশন হয়ে থাকে যেখানে সব ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করা যায় না। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর সেশন হলো সবচাইতে বড় সেশন যেখানে ফিনল্যান্ডের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন ওপেন থাকে। এছাড়াও প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট বা সাবজেক্টের অ্যাপ্লিকেশন ও মূলত সেপ্টেম্বর সেশনে ওপেন করা হয়। যেহেতু সেপ্টেম্বরের সেশনটি অনেক বড় সেখানে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টেই আবেদন করা যায় তাই অবশ্যই ফিনল্যান্ডের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সেপ্টেম্বর সেশনটি বেছে নিতে হবে তাহলে আপনার ভিসা বা অফার লেটার পাওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
তবে বর্তমানে ফিনল্যান্ডের অফার লেটার পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছে। ২০২৩ সালে মোটামুটি ৭০,০০০ স্টুডেন্ট আবেদন করলেও মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার স্টুডেন্ট অফার লেটার পেয়েছিলো যা মোট আবেদনের মোট ৬ থেকে ৮ পার্সেন্ট মাত্র। এদিকে বোঝা যায় বর্তমানে ফিনল্যান্ডের অফার লেটার পাওয়াটাই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিনল্যান্ডে এপ্লাই করার উপায়
ফিনল্যান্ডে এপ্লিকেশনের জন্য আপনাকে একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে সেটির লিঙ্ক হলো https://www.studyinfinland.fi/admissions এই ওয়েবসাইটে ঢুকলে আপনি ফিনল্যান্ডের সমস্ত ইউনিভার্সিটি নাম এবং তাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পেয়ে যাবেন যেখানে গিয়ে খুব সহজেই আপনি এপ্লাই করতে পারবেন। এটি ফিনল্যান্ডের সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট যেখানে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের বিভিন্ন সাবজেক্টের আবেদনের লিংক সহ বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে।
জানুয়ারী সেশনের জন্য আগস্ট মাসের লাস্টের দিকে বা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে এপ্লিকেশন ওপেন হয়ে থাকে আর সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য জানুয়ারীর শুরুর দিকে এপ্লিকেশন ওপেন হয়। এছাড়া এই ওয়েবসাইটে ঢুকলে আপনারা কখন কোন ভার্সিটির এবং কোন সাবজেক্টের এপ্লিকেশন ওপেন আছে সেটি দেখতে পাবেন।
ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
ভিসা প্রসেসিং এর প্রথম ধাপ হলো ওপরে দেয়া লিংকে ক্লিক করে আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং যে সাবজেক্টে পড়াশোনা করতে চান সেটি সিলেক্ট করে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে এরপরে সেখানে চাওয়া ইনফরমেশন গুলো সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদন করার পর কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আপনি যদি সিলেক্টেড হন তাহলে সরাসরি অফার লেটার দিয়ে দেয়। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আপনাকে কিছু এসাইনমেন্ট দিবে সেগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে করে জমা দিতে পারেন তাহলে আপনাকে সিলেক্ট করবে এবং অফার লেটার দিবে।
এক্ষেত্রে তারা আপনাকে কোন ভিডিও ইন্টারভিউ, কোন এস এ অথবা একটি রিসার্চ পেপার এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে পারে। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা আপনাকে লাইভ ইন্টারভিউ এবং নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপরে পরীক্ষা নিবে এরপরে সেগুলোর ফলাফল বিবেচনা করে আপনি যদি সিলেক্টেড হন তাহলে এর পরে আপনাকে অফার লেটার দিবে। মূলত ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই তিনটি মাধ্যমে একজন আবেদনকারী কে মূল্যায়ন করে থাকে এবং যদি তাদের কাছে এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে তাকে যোগ্য মনে হয় তাহলেই তাকে অফার লেটার দেয়।
আপনি যখন অফার লেটার হাতে পাবেন এরপরে আপনার কাজ হবে তাদের দেয়া লিঙ্কে প্রবেশ করে আপনার অফার লেটারটি একসেপ্ট করা। কারণ ফিনল্যান্ডে প্রতি সেশনে আপনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র একটি সাবজেক্টে পড়াশোনা করার জন্য অফার লেটার একসেপ্ট করতে পারবেন। আপনি যদি একটি সেশনের যে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাবজেক্টের অফার লেটার একসেপ্ট করে ফেলেন তাহলে পরবর্তীতে আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার ওই সেশনে আর একসেপ্ট করতে পারবেন না। তাই অফার লেটার একসেপ্ট করার আগে অবশ্যই জেনে বুঝে একসেপ্ট করবেন।
অফার লেটার হাতে একসেপ্ট করার পর আপনার কাজ হবে টিউশন ফি পরিশোধ করা। টিউশন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অফার লেটারে উল্লেখ থাকবে সে অনুযায়ী আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে। টিউশন ফি পরিশোধ করার পর ভিসা প্রসেসিং এর পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।
ইউনিভার্সিটির গাইডলাইন অনুযায়ী আপনি যখন টিউশন ফি পরিশোধ করবেন এরপরে আপনার কাজ হবে ভিএফএস বা এম্বাসি তে এপয়েনমেন্ট নেয়া। বর্তমানে ভিএফএস বা এম্বাসি এপ্লিকেশন করার পর অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যাপোয়েন্টমেন্ট পেতে এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়। তাই টিউশন ফি পরিশোধ করার সাথে সাথেই ভিএফেস এ এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নেবেন তাহলে আপনার ভিসা প্রসেসিংয়ের সময়টা অনেক কমে আসবে।
যেহেতু ফিনল্যান্ডের ভিসার ক্ষেত্রে এম্বাসি ফেস করতে হয় আর এই এম্বাসি বাংলাদেশে না থাকায় আপনাকে ইন্ডিয়া যেতে হবে। এক্ষেত্রে যদি আপনার ইন্ডিয়ার ভিসা না থাকলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে এবং ভিসা হাতে পেলে এর পরে এম্বাসির ফেইসের জন্য ইন্ডিয়াতে যেতে হবে
ভিএফএস এর প্রসেসিং ফি হিসেবে ৫ হাজার ৭৭৭ রুপি বা বাংলাদেশের টাকায় ৮২১৫ টাকা পেমেন্ট করতে হবে। বাংলাদেশে যেহেতু ফিনল্যান্ডের কোন এম্বাসি নেই তাই তাই আপনাকে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ইন্ডিয়াতে যেতে হবে এবং সেখানে অবস্থিত অ্যাম্বাসি থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
দূতাবাসের সমস্ত কাজ শেষ করার পর আপনাকে স্পন্সর ডকুমেন্ট রেডি করতে হবে যেটি ফিনল্যান্ডের ভিসার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফিনল্যান্ডের ভিসার ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হল আপনি সেখানে অবস্থিত যে কাউকে স্পন্সর হিসেবে শো করতে পারবেন এক্ষেত্রে সে যদি আপনার আত্মীয়-স্বজন বা তার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নাও থাকে তাতেও অসুবিধা নেই। ফিনল্যান্ডে অবস্থিত যারা মোটামুটি ভালো ইনকাম করে এবং ঠিকঠাক ভাবে সে দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলে এবং নিয়মিত ট্যাক্স দেয় তাদেরকে আপনি স্পন্সর হিসেবে দেখাতে পারবেন। স্পন্সর ডকুমেন্ট আপনার স্পন্সরের প্রেশার উপরে নির্ভর করে পরিবর্তন হতে পারে তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেবেন তার থেকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হেলথ ইন্সুরেন্স যেটি ফিনল্যান্ডের সব রকম ভিসার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।
শেষ কথা
পৃথিবী ব্যাপি সমৃদ্ধশালী এবং শান্তি প্রিয় দেশ গুলার মধ্যে ফিনল্যান্ডের নাম শুরুর দিকেই থাকবে। সেখানে উচ্চশিক্ষা ছাড়াও প্রতি বছর অনেক অভিবাসন প্রত্যাশীরা কাজের উদ্দেশ্যে ও যেয়ে থাকেন। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জবের সুযোগ থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। তাই আপনি যদি ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে আগে থেকেই বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ, ইউটিউবে সার্চ করতে পারেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url