বুলগেরিয়া স্টুডেন্ট ভিসা- পড়াশোনার মান এবং ভিসা খরচ
বুলগেরিয়া স্টুডেন্ট ভিসা- পড়াশোনার মান এবং ভিসা খরচ
আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা বুলগেরিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। বুলগেরিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত একটি দেশ যেখানে বিশ্বমানের অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি পরিমাণ স্টুডেন্ট বুলগেরিয়াতে পড়াশোনার জন্য না গেলেও সেখানে কিন্তু ভিসা রেশিও অনেক ভালো অর্থাৎ আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করেন তাহলে ভিসা পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যারাই বুলগেরিয়াতে যায় তাদের মধ্যে অনেকেই সেন্ট্রাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোতে পালিয়ে চলে যায় যার কারণে বুলগেরিয়াতে বাংলাদেশের সংখ্যা অনেক কম। তবে চলুন বর্তমানে বুলগেরিয়ার ভিসার কন্ডিশন কেমন সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
বুলগেরিয়া তে কেনো যাবেন?
বুলগেরিয়াতে ইউনিভার্সিটিগুলোতে টিউশন ফি অনেক কম যা বর্তমানে ৩০০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে যা বাংলাদেশে টাকায় বর্তমানে ৩ লাখ ৯৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা হতে পারে। আপনারা জানেন যে টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয় বা আপনি কোন বিষয়ে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাবেন তার উপরে নির্ভর করে পরিবর্তন হয়। তবে সেটি যাই হোক সর্বনিম্ন ৩০০০ এবং সর্বোচ্চ ৫০০০ ইউরোর বেশি হবে না।
আরেকটি সুবিধা হল বুলগেরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত প্রতিবছরে দুইটা সেমিস্টার কমপ্লিট হয়ে থাকে যার কারণে আপনাকে ১ বছরের টিউশন ফি একবারে দিতে হবে না, আপনি চাইলে ৬ মাসের বা ১ সেমিস্টারের টিউশন ফি পে করে বাংলাদেশ থেকে বুলগেরিয়াতে যেতে পারবেন। যেমন আপনার টিউশন ফি যদি ৩০০০ ইউরো হয় তাহলে ১৫০০ ইউরো পরিশোধ করে বাংলাদেশ থেকে বুলগেরিয়াতে যেতে পারবেন। শুধু তাই নয় সেখানে গিয়েও এই সেম প্রসেসে অর্থাৎ বছরে দুই কিস্তিতে টিউশন ফি দিতে পারবেন একবারে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এছাড়াও বুলগেরিয়ার ভিসা রেশিও অনেক বেশি এবং পার্ট টাইম জবের সুবিধা ও যথেষ্ট রয়েছে যেটি করে আপনি অনায়াসে টিউশন ফ্রি সহ আপনার ব্যক্তিগত খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন।
সেখানে আপনি যদি নরমাল কোন জব করেন তবুও মাসে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন আর যদি ফুড ডেলিভারি বা এ জাতীয় কোন কাজ করেন তাহলে আরো বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে বুলগেরিয়ার ভিসার জন্য এম্বাসিতে কোন প্রকার ইন্টারভিউ ফেস করতে হয় না যেটি অনেক বড় একটি সুবিধা। তবে ভবিষ্যতে ইন্টারভিউ আবার চালু হতে পারে কারণ বর্তমানে আমরা দেখছি যে অনেক দেশে ভিসার জন্য আগে ইন্টারভিউ দিতে হতো না কিন্তু তারা এখন ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে। এই দেশটিতে আপনি আইএলটিএস সহ এবং আইএলটিএস ছাড়া দুইভাবেই যেতে পারবেন। এছাড়া যারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছেন তারা এমওআই দিয়ে বুলগেরিয়াতে যেতে পারবেন এবং ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করতে পারবেন। আর আপনি যদি বুলগেরিয়ার লোকাল ভাষা শিখে সেই ভাষায় পড়াশোনা করতে চান সেটিও সম্ভব।
বুলগেরিয়া যেতে কত টাকা লাগে
আপনি যদি নিজে নিজের ভিসার সমস্ত প্রসেস সম্পূর্ণ করেন তাহলে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে আর যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেস করেন তাহলে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে আপনাকে বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপনার ইংলিশ বার্থডে সার্টিফিকেট সত্যায়িত করতে হয়। এরপরে আপনার এসএসসি এবং এইচএসসির মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট সহ এই চারটি ডকুমেন্ট ইন্ডিয়ায় অবস্থিত বুলগেরিয়ার এম্বাসি থেকে লিগালাইজেশন করাতে হয়।
এই সমস্ত ডকুমেন্টগুলো রেডি করার পর আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করবেন তাদের কাছে সাবমিট করতে হয়। যেহেতু এটি একটি লং প্রসেস যার কারণে তিন থেকে চার মাস মত সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে আরেকটি অসুবিধা হলো বাংলাদেশের বুলগেরিয়ার কোন এম্বাসি নেই যার কারণে আপনাকে সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট লিগালাইজেশন এর জন্য ইন্ডিয়াতে যেতে হবে যেটি একটি ঝামেলার ব্যাপার। তাই যারা বুলগেরিয়া যাবেন বলে ঠিক করেছেন তারা আগে থেকেই এসব কাগজপত্র রেডি করে রাখবেন।
শেষ কথা
সমস্ত দিক বিবেচনায় বুলগেরিয়াতে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাওয়ার আপনার জন্য অবশ্যই একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। বর্তমানে বিশ্বমানের এবং সেরা র্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু বুলগেরিয়াতে রয়েছে যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই ভালো। বিশেষ করে যারা মেডিকেলে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য বুলগেড়িয়া একটি আদর্শ জায়গা হবে। এছাড়াও ফুড ও লিভিং কস্ট তুলনামূলক অনেক কম যা বাংলাদেশে টাকায় আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি সাধারন কোন পার্ট টাইম জব করেন তাহলে অনায়াসে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন যা দিয়ে লিভিং কস্ট সহ টিউশন ফিও কভার করা সম্ভব। আর যেহেতু বুলগেরিয়াতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট রয়েছে তাই আপনিও নির্দ্বিধায় পড়াশোনার উদ্দেশ্যে সেখানে যেতে পারেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url