গ্রিস কৃষি ভিসায় যেসকল কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন

গ্রিস কৃষি ভিসায় যেসকল কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন

গ্রিস কৃষি ভিসায় যেসকল কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন

আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব গ্রিসের কৃষি ভিসা নিয়ে। যারা গ্রিসের অভিবাসন প্রত্যাশী রয়েছেন তাদের জন্য আশা করি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরতে পারবো। কিভাবে কৃষি ভিসা নিয়ে গ্রীস যাবেন, খরচ এবং বেতন কত হবে, কি কি যোগ্যতা এবং ডকুমেন্ট লাগবে, কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আর্টিকেলটিতে। তাই আপনার যদি এ সমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কৃষি ভিসায় গ্রিসে কি কি কাজ পাওয়া যায়

অর্থনৈতিকভাবে গ্রিস একটি স্বাবলম্বী দেশ এটি আমাদের সবারই জানা। এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো দেশটির অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা কিন্তু অনেক বেশি যার কারণে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এই বিপুল পরিমাণে কর্মীসংস্থানের জন্য প্রতিবছর দেশটির সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। যেহেতু অর্থনীতির একটি বিপুল অংশ এইখান থেকে আসে তাই সরকার কৃষি খাতের উপরে প্রচুর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

কৃষি ভিসায় গ্রিসে যে সমস্ত কাজ পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ
  • শষ্য আবাদ করা
  • গমের ক্ষেতে কাজ করা
  • ক্ষেত থেকে তাদের ফ্যাক্টরিতে শষ্য পরিবহনের কাজ
  • ফুড পিকার
  • ফল বা সবজি তোলার কাজ
  • ফুড প্যাকেজিং
  • ফল বা সবজি প্যাকিং করার কাজ
  • পরিবহন ড্রাইভার
  • হেভি ড্রাইভারঃ দুরে বা কাছে পন্য ডেলিভারি ড্রাইভার
  • ফ্যাক্টরি কোয়ালিটি কন্ট্রোলার
  • ফ্যাক্টরি সুপার ভাইজার
  • ফ্যাক্টরি ম্যানেজার ইত্যাদি।
এর মধ্যে থেকে আপনার পছন্দমত যে কোন একটি কাজের জন্য গ্রিসে কৃষি ভিসা নিয়ে যেতে পারবেন। ওপরের লিস্টের বাইরে ও আরো বিভিন্ন কাজের সুযোগ থাকতে পারে তবে সাধারণত বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে যারা কৃষি ভিসা নিয়ে গ্রিসে যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় সবাই এর মধ্যে যেকোনো একটি কাজের জন্যই যাচ্ছে।

কৃষি ভিসার জন্য কি কি যোগ্যতা ও কাগজপত্র লাগে

খুশির খবর হলো এই ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না আপনার বয়স যদি ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হয় তাহলে আপনি এই ভিসার জন্য আবেদনের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া আপনাকে যে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হতে হবে বিষয়টি এমনও নয় মোটামুটি লেভেলের একটু কাজ জানলেই হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি উপরে যে কাজগুলো লিস্ট দেয়া হয়েছে সেগুলো খেয়াল করেন সেগুলোর মধ্যে ফুড প্যাকেজিং এর জন্য আপনার কিন্তু বিশেষ কোন দক্ষতার প্রয়োজন হচ্ছে না।

অন্যদিকে বিভিন্ন পণ্য পরিবাহী গাড়িগুলো ড্রাইভার হিসেবে যদি আপনি সেখানে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় আপনি বিশেষ কোন কাজে যদি দক্ষ না হন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য ভিসা আবেদনের সুযোগ থাকছে। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক গ্রিসের কৃষি ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সমূহঃ
  • আপনার অবশ্যই একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে (কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ থাকা লাগবে
  • সদ্য তোলা ছবি লাগবে দুই কপি (35*45 mm ইউরোপিয়ান সাইজ)
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করা) সত্যায়িত হতে হবে
  • একটি বৈধ জব অফার লেটার
  • বাংলাদেশ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকা লাগবে
  • মেডিকেল রিপোর্ট অথবা মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকা লাগবে
  • অন্যান্য ডকুমেন্ট (রিকয়ারমেন্টস অনুযায়ী)
  • ইউরোপ ফরমেটের সিভি এবং কভার লেটার
সাধারণত কৃষি ভিসার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত ডকুমেন্ট গুলারই প্রয়োজন হয় তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যান্য ডকুমেন্টের প্রয়োজনও হতে পারে।

গ্রিসে কৃষি ভিসা নিয়ে যাওয়ার খরচ

শুধু গ্রীস নয় পৃথিবীর অন্যান্য যে কোন দেশে আপনি যদি যেকোনো প্রকার ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি কোন মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাচ্ছেন তার উপরে খরচটা নির্ভর করবে। যেমনঃ আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে সেক্ষেত্রে খরচ এক রকম হবে অন্যদিকে নিজে নিজে যদি ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে এরপরে ভিসা প্রসেসিং করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে খরচ এক রকম হবে। তাই আপনার ক্ষেত্রে ঠিক কত টাকা খরচ হবে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে বলা কখনোই সম্ভব নয়, তবে আপনাদের সুবিধার্থে খরচের একটি আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করব।

প্রথমেই বলি গ্রিসের ওয়ার্ক পারমিট বা কৃষি ভিসার অফিশিয়াল মূল্য সাধারণত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের শর্তগুলো পূরণ করে ভিসার জন্য নিজে নিজেই আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যদি নিজে নিজে অনলাইনের মাধ্যমে বিচার আবেদন থেকে শুরু করে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করা এবং সমস্ত প্রসেসিং করেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার সর্বোচ্চ খরচ হবে 2 লাখ টাকা মত।

অন্যদিকে আপনি যদি কোন এজেন্সি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যেতে চান তাহলে কখনোই আপনি ২ লাখ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন না এক্ষেত্রে আপনার খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ 9 লাখ টাকা পর্যন্ত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত এজেন্সি গুলা ভিসার চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে থাকে। আসলেও সমস্ত প্রসেসিং করতে যেখানে ২ লাখ টাকার বেশি লাগার কথা না সেখানে তারা 7 থেকে 9 লাখ টাকা দাবি করে থাকে।

শুধু তাই নয় তারা অনেক সময় যে কাজের কথা বলে আপনাকে ভিসা প্রসেসিং করে দেবে আপনি সেখানে গিয়ে দেখবেন তাদের কথা মত সেই কাজটি আপনি পাচ্ছেন না। এছাড়া অনেক সময় ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা দেখা দেয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে অন্য টাকাটাই তারা প্রতারণা করে নিয়ে নেয়। তাই আপনি যদি কোন এজেন্সি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং এর চিন্তা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপার গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।

তবে আপনার যদি পরিচিত কেউ বা আত্মীয়স্বজন গ্রিসে থেকে থাকে তাহলে তাদের মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ম্যানেজ করে নিজে নিজেই ভিসা প্রসেসিং করাতে পারবেন এক্ষেত্রে খরচ যেমন কম হবে তেমনি প্রতারিত হওয়া সম্ভবনাও একেবারেই থাকবে না। আপনি যদি এই মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে সে ক্ষেত্রে সমস্ত খরচ মিলে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।

গ্রিসের কৃষি ভিসার বেতন কত

গ্রিসে কৃষি ভিসার ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বনিম্ন বেতন ১৫০০ থেকে শুরু করে ২০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে যা বর্তমানে বাংলাদেশের টাকায় ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে আজকের রেট অনুযায়ী। তবে এখানে উল্লেখ্য টাকার রেট যেহেতু প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে তাই আপনি যদি সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে যখন আর্টিকেল পড়ছেন সেদিনের জানতে হলে গুগলে গিয়ে সার্চ করবেন ইউরো টু বিডিটি।

তবে বেতনের পরিমাণ যে সবার ক্ষেত্রে একই রকম হবে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। একজন শ্রমিকের বেতন কত হবে সেগুলো অনেক বিষয়ের উপরে নির্ভর করে যেমন কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা শিক্ষাগত, যোগ্যতা এবং কোম্পানির ধরন। তাই আপনি কোন কাজের জন্য গ্রিসে যেতে চাচ্ছেন সেই কাজের বেতন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে এরপরে সিদ্ধান্ত নিবেন।

গ্রিসে কাজের ভিসার জন্য আবেদনের উপায়

যেহেতু বর্তমানে গ্রিসের যে বিভিন্ন এগ্রিকালচারাল কোম্পানিগুলো রয়েছে তারা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদেশের শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। আপনি চাইলে সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত কাজের যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া কিছু জব পোর্টাল ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো শ্রমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে আপনি চাইলে সেখান থেকেও নির্দিষ্ট কাজের জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন।

আপনাদের সুবিধার্থে গ্রিসের কিছু জব পোর্টাল ওয়েবসাইটের লিংক নিচে দেয়া হলোঃ

https://manpowergreece.gr/belocalingreece/ 

https://www.indeed.com/q-greece-jobs.html 

https://flagma.gr/en/ 

এই ওয়েবসাইট গুলা থেকে আপনি আপনার পছন্দ মত কাজ খুঁজে নিতে পারবেন। আপনি যখন তাদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করবেন তখন তারা আপনার আবেদন পত্রটি দেখে যদি সন্তুষ্ট হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে কাজের অফার লেটার পাঠাবে এর পরে আপনি অন্যান্য যে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত কাজগুলো রয়েছে সেগুলো শুরু করে দিতে পারবেন

শেষ কথা

আপনাদের একটি পরামর্শ দেই সেটি হলো পারত পক্ষে কোন দালালের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং এর কাজ কখনোই করাবেন না কারণ তাদের কথা এবং কাজের মধ্যে কখনোই মিল থাকে না। যদি দ্বিতীয় কোন পক্ষের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাতেই হয় তাহলে বিশ্বস্ত কোন এজেন্সির মাধ্যমে করাবেন এক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়া সম্ভাবনা যেমন কমবে তেমনি ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক আগেই বেড়ে যাবে। আর আপনার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই অনলাইনের মাধ্যমে নিজে নিজে ভিসা প্রসেসিং এর কাজগুলো করার চেষ্টা করবেন এক্ষেত্রে সর্বাধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং খরচও অনেক কম হবে।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url