ভিয়েতনামে বাংলাদেশীদের কাজ, ভিসা খরচ ও বেতন
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা ভিয়েতনামের বিভিন্ন কোম্পানিতে 40 থেকে 50 হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে। ভিয়েতনামের প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, প্লাস্টিক পেইন্ট ফ্যাক্টরি সহ আরো অনেক বড় বড় কোম্পানি প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়োগ করছে। কিন্তু ভিয়েতনাম বাংলাদেশীদের সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেয় না, তবে কিভাবে আপনি বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামে গিয়ে ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন সে বিষয়ে আলোচনা থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
বাংলাদেশ থেকে ভিয়েতনামের কাজের ভিসা
২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশিরা টুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনাম গিয়ে সেখানকার কোম্পানিগুলোতে কাজ করা শুরু করেছে। ভিজিট ভিসাতে সেখানে গিয়ে এর পরে বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ খুঁজে নিয়ে এরপরে কাজ করতে হয়, সেসব কোম্পানি ৪০০ থেকে ৬০০ ডলার পর্যন্ত প্রতি মাসে বেতন দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে টুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনাম গিয়ে তারপরে সেখানকার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এরপরে কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে আপনি খুব সহজেই টুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনাম যেতে পারবেন এবং সেখানে গিয়ে কাজও খুঁজে পাবেন এক্ষেত্রে খুব বেশি অসুবিধা হবে না।
কিন্তু অসুবিধা হল ভিয়েতনামের ওয়ার্ক পারমিট সহজলভ্য নয় অর্থাৎ ভিয়েতনামের সব কোম্পানি আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবে না কিছু কিছু বড় বড় কোম্পানি আছে আপনাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আবার অনেকে সরাসরি বলে থাকেন ভিয়েতনামের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হয় না কথাটি একেবারে মিথ্যে নয় কারণ ভিয়েতনাম সরাসরি কোন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বাংলাদেশে দেয় না, টুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনামে গিয়ে তারপরে কোম্পানির সাহায্যে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হয়।
ভিয়েতনামে বাংলাদেশীরা কি কি কাজ করতে পারে
সম্প্রতি বাংলাদেশের কর্মীরা ভিয়েতনামের কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোতে উচ্চ বেতনে কর্মরত রয়েছে। আপনারা হয়তো জানেন নাইকি(NIKE) এবং পুমা (PUMA) দুটি ইন্টারন্যাশনাল জুতার ব্রান্ড যাদের কোম্পানি ফ্যাক্টরি ভিয়েতনামে অবস্থিত সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি শ্রমিক কাজ করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি সহ অন্যান্য ফ্যাক্টরিতেও কাজের সুযোগ রয়েছে। তবে আপনি যদি একটি ভালো এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে ভিয়েতনাম গিয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাজ খুঁজে পেতে এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতে কোন অসুবিধা হবে না।
ভিয়েতনাম যেতে কত টাকা লাগবে
বাংলাদেশ থেকে যেহেতু সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হয় না তাই আপনাকে ভিজিট ভিসায় ভিয়েতনাম যেতে হবে যার কারণে ভিসার জন্য খুব বেশি টাকা খরচ করতে হয় না। তবে মূল খরচটি হবে আপনি যখন ভিয়েতনামে পৌঁছে ওয়ার্ক পারমিট করতে যাবেন তখন। কারণ আপনার ওয়ার্ক পারমিটের সম্পূর্ণ খরচ কখনোই কোম্পানি বহন করবে না আপনাকেও কিছু টাকা তাদেরকে পেমেন্ট করতে হবে ওয়ার্ক পারমিট বাবদ। দুই পক্ষের সম্মিলিত চেষ্টায় আপনি সেখানে বৈধ ভাবে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন। তবে মোট খরচের কথা বলতে গেলে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট সহ অন্যান্য সবকিছু মিলিয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
ভিয়েতনামের ফ্যক্টরি তে কাজের সুবিধা ও বেতন
ভিয়েতনামের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি সেখানে সম্পূর্ণ ফ্রিতে থাকার জায়গা পাবেন এবং কোম্পানি ভেদে খাওয়ার খরচ পেতে পারেন। যার কারণে আপনাকে মূল বেতন থেকে থাকা এবং খাবারের জন্য কোন খরচ করতে হবে না, সেই খরচ কোম্পানি বহন করবে। এছাড়াও আপনার কাজের অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে বেতন সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর আপনি যদি থাকা এবং খাওয়া খরচ হিসাব করেন তাহলে আরো অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা কোম্পানির পক্ষ থেকে পাবেন।
অনেকের মনে হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতন প্রবাসীদের ক্ষেত্রে একটু কম হয়ে যায় সেক্ষেত্রে একটা বিষয় আপনাকে বিবেচনা করতে হবে অন্যান্য দেশে আপনি যদি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকাও বেতন পান তাহলে সেখান থেকে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা থাকা এবং খাওয়া খরচ বাবদ চলে যাবে আপনার মূল বেতন দাঁড়াবে সেই ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। এদিকে ভিয়েতনামের কোম্পানিগুলো যেহেতু তাদের কর্মীদের থাকা এবং খাবার ফ্রি দিয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে আপনার পুরো বেতন টাই আপনি বাঁচাতে পারছেন।
এছাড়াও আপনি যদি অন্যান্য দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ইউরোপের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২ লাখ এবং এশিয়ার বিভিন্ন কান্ট্রির ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ করতে হবে সেখানে ভিয়েতনামে আপনি মাত্র তিন থেকে চার লাখ টাকায় অনায়াসে চলে যেতে পারবেন।
শেষ কথা
যেহেতু বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আপনি ভিয়েতনামের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাবেন না আপনাকে টুরিস্ট ভিসায় সেখানে গিয়ে এর পরে কাজ খুঁজে নিয়ে এবং ওয়ার্ক পারমিট করে নিয়ে কাজ করতে হবে তাই আপনাকে অবশ্যই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। যেমন ধরুন আপনি যদি বিশ্বস্ত কোন মাধ্যমে বা বড় কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভিয়েতনাম যান সেক্ষেত্রে আপনার কাজ খুঁজে পেতে এবং ওয়ার্ক পারমিট সহ অন্যান্য যে আইনি প্রক্রিয়া আছে সেগুলো সম্পন্ন করতে খুব বেশি অসুবিধা হবে না। অন্যদিকে আপনি যদি বিশ্বস্ত কোন মাধ্যম ছাড়া সেখানে যান তাহলে আপনি কাজ খুঁজে পাবেন কিনা বা ওয়ার্ক পারমিট পাবেন কিনা এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা থাকছে না। তাই সব কিছু বিচার বিবেচনা করে এরপরেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url