পোল্যান্ড কাজের ভিসা; কাজের ধরন, ভিসার ধরন ও বেতন সম্পর্কে

পোল্যান্ড কাজের ভিসা; কাজের ধরন, ভিসার ধরন ও বেতন সম্পর্কে

পোল্যান্ড কাজের ভিসা; কাজের ধরন, ভিসার ধরন ও বেতন সম্পর্কে

আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করব ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত একটি দেশ পোল্যান্ড এর কাজের ভিসা সম্পর্কে। পোল্যান্ডে গিয়ে আপনি কি কি কাজ করতে পারবেন, কোন কাজের বেতন কত হবে, কত সময় কাজ করতে হবে, টিআরসি কার্ড পেতে কতদিন সময় লাগবে, ভিসা প্রসেসিং এর জন্য কত সময় লাগবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আর্টিকেলটি তে। তাই পোল্যান্ডের কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত এ টু জেড তথ্য জানতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোল্যান্ডে কোন কোন ভিসা নিয়ে যাওয়া যায়

আপনার ইউরোপের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য পোল্যান্ড একটি আদর্শ দেশ হতে পারে। কারণ আপনি ইউরোপের অন্যান্য সেনজেন ভুক্ত দেশগুলো তে যাওয়ার জন্য কখনোই খুব বেশি ক্যাটাগরির ভিসা পাবেন না। অন্যদিকে আপনি যদি পোল্যান্ডে যেতে চান তাহলে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় প্রকারের ভিসা অনায়াসেই পেয়ে যাবেন। যেখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে কোনরকমে একটি ভিসা নিয়ে ঢুকাই অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার সেখানে আপনি পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে এতগুলো ভিসার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি ভিসা বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছেন এটি আসলেই অবিশ্বাস্য। 

আপনি চাইলে পোল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা, সিজনাল ভিসার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি ভিসা বাছাই করে সেই ভিষায় পোল্যান্ডে যেতে পারবেন। যেহেতু এটি একটি সেনজেন ভুক্ত দেশ তাই এ দেশটিতে গেলে আপনি বাকি যে সেনজেনভুক্ত দেশগুলো রয়েছে সেগুলোতে কোন প্রকার ভিসা ছাড়াই চলাফেরা করতে পারবেন।

পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট পেতে কতদিন লাগে

আপনি যদি ইউরোপের অন্যান্য দেশের ওয়ার্ক পারমিটের কথা চিন্তা করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মিনিমাম ৬ মাস সময় লাগবে। ঠিক তেমনি পোল্যান্ডের ক্ষেত্রেও ওয়ার্ক পারমিট সহ সম্পূর্ণ ভিসা প্রসেসিং এর জন্য আপনাকে ৬ মাস সময় দিতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সময়ের আগেও আপনি ভিসা পেয়ে যেতে পারেন যেটি নির্ভর করে এজেন্সি বা আপনি যার মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাচ্ছেন তার উপরে। 

যদি কোন প্রকার জটিলতা সৃষ্টি না হয় তাহলে আবেদন করার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন। ওয়ার্ক পারমিট হওয়ার পর আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন আবেদন করতে হবে। সাধারণত আবেদন করার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন। তবে ওয়ার্ক পারমিট থেকে শুরু করে ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত সমস্ত প্রক্রিয়া টি কত দ্রুত সম্পন্ন হবে সেটি নির্ভর করবে আপনি যে কোম্পানিতে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যেতে চাচ্ছেন তারা আপনাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আপনার এজেন্সি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে তার উপরে।

যেহেতু বাংলাদেশে পোল্যান্ডের কোন অ্যাম্বাসি নেই তাই আপনাকে ভিসা প্রসেসিং সহ অন্যান্য যে সমস্ত কাজে এম্বাসি ফেস করতে হবে সেগুলোর জন্য ইন্ডিয়াতে যেতে হবে।

পোল্যান্ডে কত ঘন্টা কাজ করতে হবে

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো পোল্যান্ডেও প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে ডিউটি করতে হবে যেটি মূল কর্ম ঘন্টা। তবে যদি কেউ অতিরিক্ত কাজ বা ওভারটাইম করতে চায় তাহলে সেক্ষেত্রে তার জন্য অতিরিক্ত বেতন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে আপনার কোম্পানিতে যদি ওভারটাইমের সিস্টেম থাকে তাহলে সেখানেই করতে পারবেন আর যদি না থাকে তাহলে পার্টটাইম হিসেবে অন্য যে কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের কোম্পানিতে কাজ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি অন্য কোম্পানিতে কাজ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আপনার কোম্পানির বাধ্যতামূলক যে কর্ম ঘন্টা অর্থাৎ আপনাকে প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা কাজ করে এরপরে অন্য কোম্পানিতে ওভারটাইম বা পার্ট টাইম জব করতে হবে।

টি আর সি কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত

পোল্যান্ডে যাওয়ার পর আপনি যদি আপনার কোম্পানিতে মনোযোগ সহকারে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে দুই থেকে তিন মাস নিয়মিত কাজ করেন তাহলে টিআরসি বা টেম্পোরারি রেসিডেন্ট কার্ড পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি পোল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান বা নাগরিকত্ব পেতে চান তাহলে সেখানে অন্তত পাঁচ বছর কোনরকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড ছাড়া নিয়মিত কাজ করতে হবে এরপরে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড বা পিআরসির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

পোল্যান্ডে কি কি কাজ পাওয়া যায়

পোলান্ডে যে সমস্ত কাজ পাওয়া যায় তার লিস্ট নিচে দেয়া হলোঃ
  • হোটেল
  • রেস্টুরেন্ট
  • এগ্রিকালচার
  • গার্মেন্টস
  • ফুড ডেলিভারি
  • বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি ইত্যাদি
  • কন্সট্রাকশন
উপরের যেকোনো একটি কাজের ভিসা নিয়ে আপনি পোল্যান্ডে যেতে পারবেন। তবে এর মধ্যে চাহিদার দিক দিয়ে বিবেচনায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং কনস্ট্রাকশন সাইডে প্রচুর পরিমাণে কাজের সুযোগ রয়েছে। এসব খাত গুলোতে আপনি খুব সহজেই কাজের সুযোগ পাবেন এবং আপনার যদি আগে থেকে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তো খুবই ভালো।

কোন কাজের বেতন কত

উপরে যে কাজগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে আপনি যদি একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মী হয়ে থাকেন তাহলে অন্তত ১২০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন পাবেন যা বর্তমানে বাংলাদেশের টাকায় আজকের রেট অনুযায়ী ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকারও বেশি। আর আপনার যদি আগে থেকে কাজের কোন অভিজ্ঞতা না থাকে বা ননস্কিলড ওয়ার্কার হন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ৮০০ থেকে ১০০০ ইউরো পর্যন্ত হবে যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। 

তবে সব সময় যে আপনার বেতন একই রকম থাকবে বিষয়টি এমন নয় সময়ের সাথে সাথে যখন আপনি আপনার কাজে দক্ষতা অর্জন করবেন তখন আপনার বেতন অটোমেটিক্যালি বেড়ে যাবে। যেহেতু বেতন সম্পূর্ণটাই নির্ভর করেন আপনি কেমন কাজ করছেন তার ওপর তাই সব সময় নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করবেন তাহলে আর বেতন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

পোল্যান্ডের কাজের ভিসার খরচ

যেহেতু এক এক এম্বাসি এক এক রকম টাকায় ভিসা প্রসেসিং করে থাকে তাই নির্দিষ্ট করে খরচের পরিমাণটা বলা যায় না। আপনি কোন মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করছেন সেটির উপরে নির্ভর করে আপনার খরচ কম বা বেশি হবে। তবে আপনাকে আনুমানিক একটি খরচের কথা বলে দিচ্ছি যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন কোন এজেন্সি আপনার থেকে বেশি টাকা দাবি করছে। সাধারণত ভিসার প্রসেসিং এর সমস্ত প্রক্রিয়ার জন্য বাংলাদেশী টাকায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা টাকা খরচ হওয়ার কথা এর বেশি নয়। 

অর্থাৎ আপনার যাবতীয় ভিসা প্রসেসিং এর যে খরচ গুলো রয়েছে সেগুলো মিলিয়ে কখনোই ১২ থেকে ১৪ লাখের বেশি হবে না। যদি কোনো এম্বাসি এর চাইতে বেশি টাকা দাবি করে তাহলে বুঝে নিবেন তারা আপনার থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কয়েকটা এজেন্সির সাথে কথা বলে খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে এরপরে যারা কম টাকায় বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ভিসা প্রসেসিং করে দিতে রাজি হবে তাদের মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করাবেন।

শেষ কথা

তবে ভিসা প্রসেসিং যেহেতু একটি লম্বা প্রক্রিয়া তাই অবশ্যই ভিসা প্রসেসিং এর জন্য ফাইল কোন এম্বাসির কাছে জমা দেয়ার আগে তাদের সাথে ভালোভাবে কথা বলে নিবেন যাতে করে ভবিষ্যতে আপনাদের মধ্যে কোন প্রকার ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না হয়। খরচ সহ অন্যান্য যাবতীয় যে বিষয়গুলো থাকে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলে নেয়া ভালো। এজেন্সি আপনাকে কোন কোম্পানির সাথে চুক্তি করে পোল্যান্ডে পাঠাচ্ছে এবং চুক্তিতে বর্ণিত শর্তগুলো আপনি মানতে পারবেন কিনা সেগুলো খুব ভালোভাবে জেনে বুঝে এরপরে ভিসা প্রসেসিং করাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url