নেইমার কয়টি বিশ্বকাপ খেলেছে? বিশ্বকাপে তার মোট গোল সংখ্যা
নেইমার কয়টি বিশ্বকাপ খেলেছে? বিশ্বকাপে তার মোট গোল সংখ্যা
ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার জুনিয়র যার আসল নাম নেইমার সান্তোস জুনিয়র তার ফুটবল ক্যারিয়ারে মোট তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। তার মধ্যে ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং লাস্ট ২০২২ বিশ্বকাপ খেলেছেন যার প্রতিটি ম্যাচেই দলের জন্য অনেক ভালো পারফর্ম করেছেন। তবে চলুন তার বিশ্বকাপ ক্যারিয়ার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ (ব্রাজিল)
নেইমারের প্রথম বিশ্বকাপ ছিলো ২০১৪ বিশ্বকাপ যেটি তার দেশের মাটি ব্রাজিলে অনুষ্টিত হয়েছিলো। ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপের মতো ফুটবলের সবচাইতে বড় আসরে খেলতে পারা টা তার জন্য বিশেষ সম্মানের ছিল। মূলত এই বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী একজন তারকা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। গ্রুপ পর্বে তার প্রথম ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে একাই দুটি গোল করেন, তার এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণেই ভক্তদের নজরে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এরপরে ক্যামেরুনের বিপক্ষেও জোড়া গোলের দেখা পান নব্য এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। নেইমার সহ তার দলের অন্যান্য সদস্যদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স এর কারণে খুব সহজেই গ্রুপ স্টেজ পেরিয়ে নক আউট পর্বে পৌঁছে যায় ব্রাজিল।
তবে নক আউট পর্বে পৌঁছানোটা আনন্দের হলেও নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ভয়াবহ এক ইনজুরির সম্মুখীন হন নেইমার। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার ক্যামিলো জুনিগার এর একটি ভয়ানক ট্যাকেলের কারণে নেইমারের মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায় যার ফলে ২০১৪ বিশ্বকাপ আসর এখানেই শেষ হয় ব্রাজিলিয়ান এই তরুন সুপারস্টারের। কলম্বিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচের পর নেইমার আর কখনো মাঠে ফিরবেন কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল সবার মধ্যে তবে সমস্ত ধোঁয়াশা কাটিয়ে ঠিকই মাঠে ফিরে আসেন নেইমার। তবে ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচাইতে লজ্জা জনক হার যেটা জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৭-১ গোলে হারতে হয় সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী দলটি কে।
২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ (রাশিয়া)
২০১৪ সালের অন্ধকার অধ্যায়ের সমাপ্তির পর নেইমার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে মাঠে নামেন ২০১৮ সালের রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ রাশিয়ার আসরে। যেহেতু অনেক বড় একটি ইনজুরি পেরিয়ে অনেক সময় পরে মাঠে ফিরে আসেন নেইমার যার কারণে ভক্তদের তার উপরে আসাও ছিল অনেক বেশি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামলেও তিনি কোন গোলের দেখা পাননি তবে কোস্টারিকার বিপক্ষে খেলতে নেমে একটি গোল করেন যেটি ব্রাজিলকে ২-০ গোলে জয় এনে দেয় এবং দলটি নকআউট পর্বে পৌঁছে যায়।
রাউন্ড অফ ১৬ এ ব্রাজিলের সে বারের প্রতিপক্ষ ছিল মেক্সিকো। এই ম্যাচে জয়ের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল নেইমারের, তিনি একটি গোল এবং একটি এসিস্ট করেন যার ফলে ব্রাজিল ২-০ গোলে জয়লাভ করে এবং কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায়। এত বড় একটা ইনজুরির কারণে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকার পরেও মাঠে ফিরে এমন একটি পারফরমেন্সের জন্য তিনি আবার সবার কাছে প্রশংশীত হতে শুরু করেন। তবে সে ম্যাচটিতে অতিরিক্ত পরিমাণে ফাউলের শিকার হওয়ার কারণে তিনি বারবার মাঠের মধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কাতড়াচ্ছিলেন যার কারণে পরবর্তীতে তাকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
২০১৮ বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে জয় লাভের পর কোয়াটার ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী বেলজিয়াম। নেইমার সহ পুরো টিম ভালো পারফর্ম করার পরেও বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ গোলে পরাজিত হয় ব্রাজিল এবং ২০১৮ বিশ্বকাপ সেখানেই শেষ হয়ে যায়। পরপর দুটি বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল ফুটবল টিমকে যেটি নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ারে একটি হতাশা জনক অধ্যায়।
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ (কাতার)
নেইমারের ক্যারিয়ারের তৃতীয় বিশ্বকাপ ছিল ২০২২ এর কাতার বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে নেইমার ব্রাজিল দলের প্রধান তারকা হিসেবে মাঠে নামেন। ড্রিবলিং মাস্টার নামে খ্যাত এই সুপারস্টার এর কাছে তাইতো ভক্তদের আশা আকাঙ্ক্ষাও ছিল অনেক উপরে। এই আসরের প্রথম ম্যাচে নেইমার দুর্দান্ত পারফর্ম করেও সার্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে আবারো ইনজুরির শিকার হন। তার গোড়ালি তে মারাত্মকভাবে আঘাত লাগে যার কারণে তিনি গ্রুপ পর্বের পরের দুই ম্যাচ মাঠে নামতে পারেননি। তবে দলের প্রধান স্টার প্লেয়ার ছাড়াই অন্যান্যদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে অনায়াসে ব্রাজিল টিম নকআউট রাউন্ডে পৌঁছে যায়।
ইনজুরির পর ব্রাজিল যখন রাউন্ড অফ ১৬ এ তখন আবার ভক্তদের মনে আসা জাগিয়ে মাঠে ফিরে আসেন নেইমার। এই ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া যাদেরকে ব্রাজিল 4-1 ব্যবধানে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে যায়। এই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে দুর্দান্ত ১ গোল পান নেইমার এবং দলের জয়ের ক্ষেত্রেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করেন।
যদিও ২০২২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনাল অবদি জার্নিটা অনেক সুন্দর ছিল কিন্তু হতাশার অধ্যায় শুরু হয় সেখান থেকেই। এই ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ছিল ইউরোপের একটি শক্তিশালী দল ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন গোল না হওয়ায় ম্যাচটি অতিরিক্ত টাইমে গরায় এরপরে অতিরিক্ত সময়ের সেকেন্ড হাফে নেইমারের দুর্দান্ত এক গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। তবে শেষ মুহূর্তে আর লিড ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল, খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ৪ মিনিট আগে ১১৭ মিনিটের মাথায় গোল দিয়ে বসে ক্রোয়েশিয়া যার কারণে ম্যাচটি পেনাল্টি শুট আউটে গড়ায়।
দুঃখজনকভাবে ব্রাজিল দলের হয়ে প্রথম পেনাল্টি টেকার রদ্রিগো প্রথম পেনাল্টি মিস করে বসেন। অন্যদিকে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এলিসন বেকার একটি পেনাল্টি ও সেভ দিতে পারেন না যার ফলে শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুট আউট এ ৪-২ ব্যবধানে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হয় ব্রাজিল দলকে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত ১ গোল করেও শেষ পর্যন্ত দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যেতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান এই স্টার বয় নেইমার। অন্যদিকে উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্তের জন্য ভক্তদের সমালোচনার শিকার হয়ে ব্রাজিলিয়ান কোচ তি তে ব্রাজিল দলের দায়িত্ব ছেড়ে দেন ২০২২ বিশ্বকাপের পরেই।
নেইমারের শেষ মুহূর্তের গোলটি তার ব্যক্তিগত অর্জনের মাইলফলকে একটি বড় অর্জন হলেও ফুটবল ক্যারিয়ারের একটি হতাশাজনক অধ্যায়ের জন্ম দেয়। এই গোলটির মাধ্যমে ব্রাজিল দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলে কে ছাড়িয়ে তার জায়গা দখল করে নেন নেইমার।
নেইমারের বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান
নেইমার এই পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারে তিনটি বিশ্বকাপে মোট ১৩ টি ম্যাচ খেলেছেন এবং ১৩ ম্যাচে মোট গোল করেছেন ৮ টি। যার কারণে নেইমারকে ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম এক সফল বিশ্বকাপ পারফর্মার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
২০১৪ বিশ্বকাপে নেইমার মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৪ গোল করেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলে দুটি গোল করেছেন এবং সর্বশেষ 2022 বিশ্বকাপে মোট তিনটি ম্যাচ খেলে দুটি গোল করেছেন।
শেষ কথা
নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ারে সবচাইতে বেশি সময় কাটাতে হয়েছে ইনজুরিতে যা তার ব্যক্তিগত এবং জাতীয় অর্জনকে খুব বাজেভাবে প্রভাবিত করেছে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর ব্রাজিল দলে তার প্রয়োজনীয়তা হারে হারে টের পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০২২ বিশ্বকাপেও ইনজুরি থেকে রেহাই পাননি নেইমার এমনকি তার ক্যারিয়ারের কোন বিশ্বকাপেই তিনি আসরের সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। তবুও এতটা সময় মাঠের বাইরে পার করে এসেও যখন মাঠে ফিরেছেন তখন দর্শকদের বুঝতে দেননি যে ইনজুরি তার পারফরমেন্সের উপরে প্রভাব পড়েছে, বরং বারবার ফিরে এসেও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তার অসাধারণ ড্রিবলিং স্কিল, তীব্র গতি এবং আক্রমণাত্মক ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রত্যেকটি বিপক্ষ দলের জন্যই একটি আতঙ্কের কারণ হয়েছে।
তবে 2022 বিশ্বকাপের পর তিনি স্পষ্টভাবে কোন কিছু জানান নি অর্থাৎ 2026 বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করাটা তার শারীরিক সক্ষমতার উপরে নির্ভর করছে তবে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা টাই বেশি। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও নেইমার ফুটবল ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখাতে সক্ষম হয়েছে। তার ব্যক্তিগত অর্জন বা বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড না থাকলেও ভক্তদের মনে সব সময় তিনি ফুটবলের রাজপুত্র হিসেবে থেকে যাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url