লিথুনিয়ার কাজের ভিসার আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো ইউরোপের সেনজেনভুক্ত একটি দেশ লিথুনিয়ার কাজের ভিসা সম্পর্কে। ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি ভিসা সাকসেস রেট রয়েছে এই দেশটিতে। এখানে ভিসা সাকসেস রেট ৮৭% অর্থাৎ যদি ১০০০ জন লিথুনিয়ার ভিসার জন্য আবেদন করে তাহলে মাত্র ১৩ জন ভিসা পাবে না আর বাকি ৯৮৭ জনই ভিসা পেয়ে যাবে।
লিথুনিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ২.৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখের মত। লিথুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের মাসিক গড় বেতন ১৬৬৬ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। এটি হচ্ছে গড় বেতন কাজের ধরন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে এর পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে।
লিথুনিয়া তে কিভাবে কাজ খুঁজে পাবেন
লিথুনিয়াতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে যেকোনো একটি কাজ খুঁজে নিতে হবে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ আর সাশ্রয়ী মাধ্যম হলো লিথুনিয়ার জব খোঁজার ওয়েবসাইট, যেগুলো কি না বাংলাদেশের বিডি জবস ওয়েবসাইটের মতো। লিথুনিয়ার দুটি সেরা জব সার্চ ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সেখানকার অনেক ধরনের কাজ খুঁজে সেগুলোর জন্য এপ্লাই করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট দুটির লিঙ্কঃ
এই ওয়েবসাইট গুলোতে ভিজিট করলে আপনি অনেক জব পেয়ে যাবেন যেমনঃ ক্যাশিয়ার, মেকানিক, ড্রাইভার, কিচেন হেলপার, ক্লিনার, টিচার, সেলসম্যান, ম্যানেজার, কনস্ট্রাকশন লেবার, ট্রাভেল গাইড, প্রোডাকশন সুপারভাইজার ইত্যাদি। আপনি আপনার কাজের দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী এখান থেকে যে কোন কাজের জন্য অনলাইনে এপ্লাই করতে পারবেন এরপরে যদি কোম্পানি আপনাকে যোগ্য মনে করে তাহলে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট বা ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দিবে এরপরে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
লিথুনিয়াতে ইনকাম ট্যাক্স
লিথুনিয়াতে বর্তমান ট্যাক্স রেট হলো 20%। অর্থাৎ আপনি যদি মাসে এক লাখ টাকা ইনকাম করেন তাহলে সেখান থেকে ২০ পার্সেন্ট বা ২০ হাজার টাকা আপনাকে ট্যাক্স দিতে হবে। তবে কোম্পানি থেকে আপনাকে যে বেতন দেয়া হবে সেখান থেকে অটোমেটিক্যালি ট্যাক্স কেটে এরপর বাকি টাকা টা আপনি হাতে পাবেন।
লিথুনিয়াতে কয় ধরনের ওয়ার্ক পারমিট হয়
লিথুনিয়াতে বর্তমানে চার ধরনের ওয়ার্ক পারমিট হয় সেগুলো হলো
- ই ইউ Blue কার্ড ওয়ার্ক পারমিট
- ইন্ট্রা কোম্পানি ট্রান্সফার ওয়ার্ক ভিসা
ধরুন বাংলাদেশের একটি কোম্পানির যেটির ব্রাঞ্চ লিথুনিয়া তে আছে সে ক্ষেত্রে আপনাকে সেইম কোম্পানিতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ থেকে লিথুনিয়ার ব্রাঞ্চে কাজের জন্য পাঠাতে পারে এটাই মূলত ইন্ট্রা কোম্পানি ট্রান্সফার ওয়ার্ক ভিসা।
- ওয়ার্ক পারমিট ফর ইমপ্লয়মেন্ট ইন লিথুনিয়া যেটিকে আমরা সহজ ভাষায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলে থাকি।
- সিজনাল ওয়ার্ক ভিসা (এক্ষেত্রে শ্রমিকদের সিজনাল বিভিন্ন কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়)
লিথুনিয়ার কাজের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনাকে ভিসা আবেদন ফরম সংগ্রহ করে এখানে যে যে ইনফরমেশন গুলো চাওয়া হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
এরপরে আপনি যে কোম্পানিতে কাজের জন্য যাবেন তাদের থেকে একটি ইনভাইটেশন লেটার নিতে হবে। এক্ষেত্রে উপরে যে দুটি ওয়েবসাইটের লিংক দিয়েছিলাম সেখান থেকে আপনি কাজ খুঁজে নিয়ে আবেদন করার পর যদি সেই কোম্পানি আপনার আবেদন গ্রহণ করে তাহলে তারা আপনাকে ইনভাইটেশন লেটার পাঠিয়ে দিবে।
আপনার একটা বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে যেটির মিনিমাম দুই পেজ খালি থাকবে। আপনারা যদি পৃথিবীর অন্যান্য বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্ট এর সমস্ত পেজ গুলোতে ভিসা থাকতে পারে তাই দেখতে হবে আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে মিনিমাম দুইটা খালি পেজ আছে কিনা যদি না থাকে তাহলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আর যদি আপনার নতুন পাসপোর্ট হয় আপনি খুব বেশি দেশে ভ্রমণ না করে থাকেন তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই। এছাড়াও আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ যেন মিনিমাম ৬ মাস থাকে, অর্থাৎ আপনি যেদিন ভিসার জন্য আবেদন করবেন তারপর থেকে নূন্যতম ৬ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য আপনার পাসপোর্ট এর বৈধতা থাকতে হবে।
এরপরে লিথুনিয়ার যে লেবার এক্সচেঞ্জ আছে সেখান থেকে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। অবশ্য এ কাজটি আপনার পক্ষ থেকে আপনি যে কোম্পানিতে কাজের জন্য সেখানে যাচ্ছেন তারাই করে দিবে আপনাকে কিছু করতে হবে না।
আপনাকে একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে তিন থেকে ছয় মাসের জন্য যেটির উদ্দেশ্য হল আপনি যে লিথুনিয়া তে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে আপনি সেখানে গিয়ে যাবতীয় খরচ যেমন; থাকা-খাওয়া এবং অন্যান্য যে খরচ গুলো আছে সেগুলো চালাতে পারবেন সেটি প্রমাণপত্র হিসেবে। অর্থাৎ সহজ কথায় বলতে গেলে লিথুনিয়াতে যাওয়া এবং থাকার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট টাকা আছে সেটি প্রমাণ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে লিথুনিয়াতে যাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই হেলথ ইন্সুরেন্স করে নিতে হবে। এবং আপনি যত দিনের কাজের চুক্তিতে সেখানে যাচ্ছেন ঠিক তত দিনের ইন্সুরেন্স করতে হবে এর কম হলে হবে না।
এরপরের রিকোয়ারমেন্ট হলো বিগত তিন মাসে বাংলাদেশে আপনার কোন ক্রাইম হিস্ট্রি থাকা যাবে না অর্থাৎ আপনার নামে কোন মামলা মোকদ্দমা বা অন্যান্য কোন আইনী ঝামেলা থাকা যাবে না।
আপনি যে কাজের জন্য সেখানে যাচ্ছেন সেই কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র হিসেবে আপনাকে জব সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। অথবা আপনাকে এমন কোন ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে যেটি আপনি যা আসলেই সেই কাজের জন্য উপযুক্ত বা পারদর্শী এটা প্রমাণ করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদি বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন তাহলে সেখান থেকে একটি সার্টিফিকেট নিলেই হবে। এছাড়া আপনারা যদি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ না করেন বা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের কোন প্রমাণপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির যে পে স্লিপ ব্যবহার করেছিলো সেটি হলেও চলবে।
সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের লিস্ট
- ভিসা আবেদন ফরম
- কোম্পানি থেকে ইনভাইটেশন লেটার
- বৈধ পাসপোর্ট
- লেবার এক্সচেঞ্জ থেকে ওয়ার্ক পারমিট
- ব্যংক স্টেট্মেন্ট
- হেলথ ইন্সুরেন্স
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- জব সার্টিফিকেট ( যদি থাকে)
এসব ডকুমেন্ট যদি সঠিকভাবে সংগ্রহ করে ভিসা আবেদন করেন তাহলে আশা করা যায় খুব সহজেই আপনি লিথুনিয়ার ভিসা পেয়ে যাবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url