লিথুয়ানিয়া কাজের ভিসা ২০২৪

লিথুয়ানিয়া কাজের ভিসা ২০২৪

লিথুয়ানিয়া কাজের ভিসা ২০২৪

আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকের আর্টিকেল আমরা লিথুনিয়ার কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। কিভাবে ভিসার জন্য আবেদন করবেন, কি কি কাগজপত্র লাগবে, কিভাবে ওয়ার্ক পারমিট পাবেন এ জাতীয় বিষয়গুলো একদম ক্লিয়ার ভাবে আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করবো। ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন কারণ এখানকার প্রত্যেকটি স্টেপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

লিথুনিয়ার কাজের ভিসা পেতে হলে আপনাকে নিচের স্টেপ গুলো ফলো করতে হবেঃ

কাজ খোঁজা

সর্বপ্রথম আপনাকে লিথুনিয়ার ইমপ্লোয়ার বা নিয়োগ কর্তা যাদের বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা আছে তাদের থেকে একটি কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত সব কোম্পানির বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের পারমিশন থাকে না, তাই যে সকল কোম্পানি বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার রাখে সে সমস্ত কোম্পানির খোঁজ করতে হবে এবং কাজের জন্য আবেদন করতে হবে। একটি কোম্পানির ক্ষেত্রে সাধারণত দেশের বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার কারণ হলো তাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রমিক না থাকা অথবা তারা যে ধরনের কাজে পারদর্শী শ্রমিক খুঁজছে সেটি না পাওয়া।

কোম্পানির সাথে চুক্তি 

কাজ খুঁজে পাওয়ার পর আপনাকে ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে হবে। অর্থাৎ আপনি তাদের কোম্পানিতে কতদিন কাজ করবেন, কি কি কাজ আপনাকে করতে হবে এগুলা সহ আপনার কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সেখানে উল্লেখ থাকবে। এ চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্টে আপনাকে সাইন করতে হবে এর পরেই আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সে চুক্তিপত্রে আপনি তাদের সাথে কতদিনের কাজের চুক্তি করছেন এবং আপনার মাসিক বেতন কত হবে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত বলা থাকবে।

লিথুনিয়ান লেবার এক্সচেঞ্জ এ আবেদন

চুক্তিপত্রে সাইন করার পর আপনি যে কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন সেই কোম্পানি আপনার হয়ে লিথুনিয়ার যে লেবার এক্সচেঞ্জ আছে সেখানে আবেদন করবে। এক্ষেত্রে আপনার তেমন কোন ভূমিকা থাকবে না আপনার হয়ে আপনার নিয়োগ কর্তা এই ধাপটি সম্পন্ন করবে এছাড়া কিন্তু এই ধাপটি সম্পন্ন হবে না।

ভিসা আবেদন

তিন নাম্বার ধাপটি সম্পন্ন হওয়ার পর আপনারা ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবেন এরপরে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ন্যাশনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে যেটি ডি ক্যাটাগরির ভিসা নামে পরিচিত।

হেলথ ইন্সুরেন্স

লিথুনিয়া তে আপনারা যতদিনের জন্য যাবেন ঠিক ততদিনেরই হেলথ ইন্সুরেন্স থাকতে হবে, অর্থাৎ আপনি যদি দুই বছরের কাজের চুক্তিতে সেখানে যান তাহলে পুরো দুই বছরেরই হেলথ ইন্সুরেন্স থাকতে হবে এটি বাধ্যতামূলক। ধরুন আপনি ২৪ সালের অক্টোবরে লিথুনিয়া তে যেতে চাচ্ছেন দুই বছরের জন্য সে ক্ষেত্রে আপনাকে পুরো দুই বছরের অর্থাৎ ২০২৬ সালের অক্টোবর অবফি হেলথ ইন্সুরেন্স থাকতে হবে যদি এক মাস ও কম থাকে তাহলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। 

ইন্টারভিউ তে কি ধরণের প্রশ্ন করে

লিথুনিয়াতে কাজের জন্য আবেদন করার পর ভাইভাতে আপনাদেরকে কিছু কমন প্রশ্ন করা হবে। সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটা করা হয় সেটি হলো আপনার পাসপোর্ট নাম্বার সম্পর্কে। পাসপোর্ট নাম্বার কোন জায়গায় থাকে এবং অন্যান্য পাসপোর্ট সম্পর্কিত যে খুঁটিনাটি তথ্য আছে সেগুলো জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন।

অনেক ক্ষেত্রে তারা আপনার পদবী বা ডাকনাম জিজ্ঞেস করতে পারে এ প্রশ্নের উত্তরটা খুব ভালোভাবে দেয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন ধরুন; যদি তারা আপনাকে প্রশ্ন করে আপনার ফ্যামিলি নেইম বা পদবী কি সে ক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার নাম বলেন তাহলে কিন্তু উত্তরটা ভুল এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার পদবী বলতে হবে। এই ছোটখাটো বিষয়গুলো দ্বারা অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তাই এগুলো সম্পর্কে একটু সচেতন থাকবেন।

এরপরে তারা আপনাকে প্রশ্ন করতে পারে আপনি বর্তমানে কোন কাজ করছেন কিনা বা কোন কাজের সাথে সংযুক্ত আছেন কিনা। যদি আপনারা কোন কাজ বর্তমানে করে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনারা হ্যাঁ বলবেন আর যদি কোন কাজের সাথে সংযুক্ত না থাকেন বা আপনার যদি কোন কাজের অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে না বলবেন।

আরেকটি কমন প্রশ্ন যেটি প্রায় সবাইকেই করা হয় সেটি হলো আপনি কেন লিথুনিয়াতে কাজ করতে চান। কথাটা শুনে অনেক কমন আর সহজ মনে হলেও এটিকে অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত কারণ এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে আপনার ভিসা এপ্রুভ হওয়া না হওয়ার খুব গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন যে আপনার কাজের দক্ষতা অনুযায়ী সেখানে ভালো কাজের সুযোগ রয়েছে এবং আপনি যতটুকু রিসার্চ করেছেন তাতে লিথুনিয়া তে কাজের পরিবেশ থেকে শুরু করে সবকিছু আপনার ভালো লেগেছে।

লিথুনিয়ার ভিসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট

তবে প্রত্যেকটা দেশেরই ভিসার নিয়মকানুন প্রায়ই পরিবর্তন হয়ে থাকে তাই আপনারা যখন ভিসার জন্য আবেদন করবেন তখন অবশ্যই তাদের সরকারের যে ওয়েবসাইট আছে সেখানে গিয়ে আপডেটগুলো জেনে নেবেন।

আরেকটি সুখবর হলো লিথুনিয়া তে আগে টিআরপি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যেত না কিন্তু বর্তমানে এই নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে এবং আপনি চাইলে বাংলাদেশ থেকেই টিআরপি নিয়ে এরপরে সেখানে যেতে পারবেন। আগে যারা বাংলাদেশ থেকে লিথুনিয়া তে যেতো তাদেরকে সেখানে যাওয়ার পর দুই থেকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হতো টি আর পি কার্ডের জন্য এরপরে কাজে করার অনুমতি পেত, কিন্তু বর্তমানে আপনি একদম বাংলাদেশ থেকে টিআরপি কার্ড হাতে নিয়ে এরপরে লিথুনিয়া যেতে পারবেন।

আগে লিথুনিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ১৭ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হতো তিন থেকে ছয় মাসের জন্য কিন্তু বর্তমানে ১০ থেকে ১১ লাখ টাকা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখালেই আপনি লিথুনিয়ার ভিসার জন্য এপ্লাই করতে পারবেন।

এছাড়াও আপনাকে প্রশ্ন করতে পারে লিথুনিয়া তে আপনি কাজ কিভাবে পেয়েছেন। এক্ষেত্রে অনেকেই মিথ্যা বলেন যেমন কোন এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে কাজ পেয়েও বলে সে নিজে কাজ খুঁজে নিয়েছে যেটা কখনোই করা উচিত নয়। কারণ যারা ইন্টারভিউ নেয় তারা অনেক স্মার্ট আপনার বলা মিথ্যা কথা তারা মুহূর্তের মধ্যেই ধরে ফেলতে পারে। আর একবার যদি বুঝে যায় যে আপনি মিথ্যা বলছেন তাহলে আপনার উপরে খারাপ ধারণা জন্মাতে পারে যার কারণে আপনার ভিসা বাতিলও হতে পারে তাই যতটা সম্ভব জেনুইন থাকার চেষ্টা করবেন।

তবে আশার কথা হচ্ছে লিথুনিয়া তে ভিসা রেশিও অনেক ভালো প্রায় 97%, অর্থাৎ যদি ১০০ লোক ভিসার জন্য আবেদন করে তাহলে ৮৭ জনকেই ভিসা দিয়ে দেয়া হয় বাকি ১৩ জনকে রিজেক্ট করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় লিথুনিয়াতে ভিসার রেট অনেক ভালো এবং আপনি যদি সঠিকভাবে সমস্ত আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন তাহলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

লিথুনিয়া তে মাসে কত টাকা বেতন পাওয়া যায়

লিথুনিয়াতে যদি আপনি ফুলটাইম জব করেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ৮৪০ ইউরো মত। এছাড়া যদি আপনি পার্টটাইম জব করেন বা সিজনাল জব করেন তাহলে সেক্ষেত্রে বেতন কিছুটা কম হতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি ওভারটাইম করেন সে ক্ষেত্রেও আপনার বেতন কিছুটা বেশি হতে পারে।

লিথুনিয়া তে সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন কাজ

লিথুনিয়াতে বেশ কিছু চাহিদা সম্পন্ন কাজ রয়েছে যেগুলো খুব সহজে পাওয়া যায় এবং বেতনও মোটামুটি ভালো সেগুলোর তালিকা নিচে দেয়া হলো।

বিভিন্ন যাত্রীবাহী এবং মালবাহী গাড়ির ড্রাইভার। সহজ কথায় বলতে গেলে সাধারন ট্রাক ড্রাইভার বা ১৬ চাকার যে বড় বড় ট্রাকগুলো থাকে সেগুলোর ড্রাইভার। এছাড়া যাত্রীবাহী বিভিন্ন পরিবহন যেমন; বাস, ট্যাক্সি ড্রাইভার। তবে লিথুনিয়াতে সবচাইতে বেশি চাহিদা সম্পন্ন কাজগুলোর মধ্যে ট্যাক্সি ড্রাইভার অন্যতম। এছাড়াও আরো কিছু চাহিদা সম্পন্ন চাকরি রয়েছে যেমনঃ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিভিন্ন ব্যবসার প্রতিষ্ঠান জন্য ম্যানেজার, বিভিন্ন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারের কাজ, বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের শেইফ বা বাবুর্চি, দর্জি, প্রোগ্রামার, কৃষি শ্রমিক, মার্কেটিং স্পেশালিস্ট ইত্যাদি।

শেষ কথা

আপনি যদি সীমিত খরচে ইউরোপের সেনজেনভুক্ত কোন দেশে যেতে চান সেক্ষেত্রে লিথুনিয়া দেশটিকে বেছে নিতে পারেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো লিথুনিয়াতে ও কাজের বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে সেটি বর্তমানে ৫ ইউরো ৬৫ সেন্ট প্রতি ঘন্টায় যেটি অনেক ভালো বেতন বলা চলে। আপনি যদি নরমালি কোনরকম ওভারটাইম ছাড়া দিনে ৭ ঘন্টা সপ্তাহে ৫ দিন এবং মাসে সর্বমোট 140 ঘন্টা কাজ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অনায়াসে প্রতি মাসে ৭৯১ ইউরো ইনকাম করতে পারবেন যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকার ও বেশি। যেহেতু ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত অল্প সময় কাজ করে এখানে ভালো পরিমাণ বেতনের সুযোগ রয়েছে এবং এখানকার ভিসার খরচ সীমিত তাই প্রবাসীদের ক্ষেত্রে লিথুনিয়া একটি ভালো অপশন হতে পারে।









এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url