লিথুনিয়া তে বেতন কত? প্রতি ঘন্টা, দিন এবং মাসিক বেতন
লিথুনিয়া তে বেতন কত? প্রতি ঘন্টা, দিন এবং মাসিক বেতন
লিথুনিয়াতে ১ ঘন্টা কাজ করলে কত টাকা বেতন পাবেন, এছাড়াও প্রতি মাসে আপনারা কত সময় কাজ করতে পারবেন বেতন কত পাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি তে। টেম্পোরারি জব এবং পার্মানেন্ট জবের সুবিধা অসুবিধা ছাড়াও বেতনের পার্থক্য সম্পর্কেও জানতে পারবেন। অর্থাৎ লিথুনিয়ার বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো একটি মাত্র আর্টিকেলের মাধ্যমে।
লিথুনিয়ার প্রতি ঘন্টার বেতন
বর্তমানে লিথুনিয়াতে কাজের জন্য ঘন্টা প্রতি ৫ ইউরো ৬৫ সেন্ট বেতন ধার্য করা হয় যা বাংলাদেশী টাকায় ৭৪৫ টাকা। আপনি যদি দিনে সাত ঘন্টা কাজ করেন তাহলে প্রতি ঘন্টায় ৫ ইউরো ৬৫ সেন্ট হারে বেতন পেলে প্রতিদিন আপনার ইনকাম হবে ৩৮ ইউরো ৮৫ সেন্ট যা বাংলাদেশি টাকায় আজকের রেট অনুযায়ী ৫১২৩ টাকা হয়।
এটি হচ্ছে গুগলের রেট, এক্সচেঞ্জার অথবা ব্যাংক রেট এর চাইতে কম বা বেশি হতে পারে তাই লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক তথ্য জেনে নিবেন। আবার ব্যাংকের চাইতে মানি এক্সচেঞ্জ এর রেট একটু বেশি হয়ে থাকে। তাই আপনারা যেদিন আর্টিকেলটি পড়ছেন সেদিনের রেট জানতে google এ গিয়ে সার্চ করবেন ইউরো টু বিডিটি তাহলে সেদিনের রেট জানতে পারবেন।
লিথুনিয়ার সাপ্তাহিক বেতন
লিথেনিয়তে আপনাকে সপ্তাহে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করতে হবে ৩৫ ঘন্টা যেটি নরমাল ওয়ার্ক আওয়ার। এক্ষেত্রে পর আপনি সপ্তাহে ৫ দিন ৭ ঘন্টা করে কাজ করলে সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা কাজ হবে বাকি দুইদিন ছুটি। সে হিসেবে প্রতি ঘন্টায় ৫ ইউরো ৬৫ সেন্ট হিসাবে আপনার সাপ্তাহিক ইনকাম হবে ১৯৭ ইউরো ৭৫ সেন্ট যা আজকের রেট অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় ২৬ হাজার ৭৯ টাকা। এছাড়া আপনি যদি ওভারটাইম করেন সেক্ষেত্রে সপ্তাহে সর্বোচ্চ কাজ করতে পারবেন 45 ঘন্টা সে হিসেবে আপনার সাপ্তাহিক বেতন হবে ২৫৪ ইউরো ২৫ সেন্ট যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৩ হাজার ৫৩০ টাকা।
লিথুনিয়ার মাসিক বেতন কত
স্বাভাবিকভাবে আপনি যদি ওভারটাইম ছাড়া লিথুনিয়া তে কাজ করেন তাহলে আপনি এক মাসে কাজ করবেন ১৪০ ঘন্টা, সপ্তাহে ৫ দিন এবং প্রতিদিন ৭ ঘন্টা হিসেবে। এক্ষেত্রে আপনার বেতন হবে ৭৯১ ইউরো যেটি আজকের রেট অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় ১ লক্ষ ৪ হাজার ৩১৭ টাকা।
আর আপনি যদি ওভারটাইম করেন তাহলে সাপ্তাহিক 45 ঘন্টা হিসেবে আপনি এক মাসে কাজ করবেন 180 ঘন্টা। সে ক্ষেত্রে আপনার মাসিক বেতন হবে ১ হাজার ১৭ ইউরো যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ১২১ টাকা।
উপরে যে বেতনের কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে সর্বনিম্ন বেতন অর্থাৎ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বেতন হলো ৫ ইউরো ৬৫ সেন্ট। আপনি যে কাজই করেন না কেন কোম্পানি চাইলেও এর চাইতে কম বেতন ধার্য করতে পারবেনা।
তবে উপরে যে বেতনের এমাউন্টের কথা বলা হয়েছে সেটি ট্যাক্স কাটার আগের বেতন, অর্থাৎ এ সম্পূর্ণ টাকা আপনি হাতে পাবেন না এর থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ট্যাক্স কেটে এরপরে আপনার ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে এরপরে আপনি সেখান থেকে বেতন তুলতে পারবেন। কত টাকা ট্যাক্স কাটবে সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কারণ এক এক পেশার ক্ষেত্রেকত টাকা ট্যাক্স কাটবে সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কারণ এক এক পেশার ক্ষেত্রে অথবা ইনকামের পরিমাণ এর উপরে নির্ভর করে কত টাকা ট্যাক্স কাটা হবে।
পার্মানেন্ট জব ও টেম্পোরারি জবের সুবিধা অসুবিধা
আপনি যদি টেম্পোরারি জব করেন তাহলে আপনাকে সপ্তাহে কাজ করার কথা ৩৫ ঘন্টা কিন্তু অসুস্থতার কারণে অথবা অন্যান্য কোন অনিবার্য কারণে আপনি যদি ৩৫ ঘণ্টা কাজ করতে না পারেন তাহলে আপনি যত ঘন্টা কাজ মিস করবেন তত ঘন্টার বেতন আপনাকে দেয়া হবে না। অর্থাৎ আপনি যদি ৩৫ ঘন্টার জায়গায় ২০ ঘন্টা কাজ করেন তাহলে আপনাকে মাসের শেষে ২০ ঘন্টার বেতনে দেয়া হবে আপনি কখনোই ফুল বেতন পাবেন না।
এছাড়াও টেম্পোরারি জবের সবচাইতে বড় অসুবিধা হলো আপনি যেকোনো সময় চাকরি হারাতে পারেন, কারণ কাজ মিস করার কারণে আপনার মালিক চাইলে আপনাকে কাজ থেকে বাদ দেয়ার অধিকার রাখে। টেম্পোরারি জবের ক্ষেত্রে বেতনের পরিমান কখনো নির্দিষ্ট থাকে না অর্থাৎ আপনার বেতন হঠাৎ করে কমে যেতে পারে অথবা বেড়েও যেতে পারে সেটি অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করে।
অন্যদিকে আপনি যদি পার্মানেন্ট একটি জব করেন তাহলে আপনি যদি সাপ্তাহিক ৩৫ ঘন্টা কাজ নাও করতে পারেন তবুও আপনার বেতন কাটা হবে না। অবশ্য আপনাকে যতটুকু কাজ মিস করেছেন ততটুকু আপনার মালিকের সাথে কথা বলে সুবিধামতো সময়ে করে দিতে হবে। এছাড়াও পার্মানেন্ট জবের ক্ষেত্রে কোম্পানির সাথে আপনার একটি চুক্তি থাকবে যার কারণে মালিক চাইলেই আপনাকে যে কোন সময় কাজ থেকে বের করে দিতে পারবে না।
লিথুনিয়ার কাজ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য
লিথুনিয়া তে আপনার বেতন বেশ কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করবে যেমন; শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা এবং জব কন্ট্রাক্ট ( টেম্পোরারি / পার্মানেন্ট) এই বিষয়গুলোর উপরে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই লিথুনিয়া যায় এবং লিথুনিয়া যেহেতু সেনজেন ভুক্ত দেশ তাই সেখান থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশে চলে যায়। লিথুনিয়াতে জব কন্টাক্ট নিয়ে যাওয়ার পর যখন আপনি সেখান থেকে হুট করে অন্য দেশে চলে যাবেন তখন সবচাইতে বড় সুবিধা হলো আপনি যদি কোন কারণে সেই দেশে সেটেল হতে না পারেন তাহলে কিন্তু লিথুনিয়া এবং আপনি পরবর্তীতে যে দেশে গিয়েছিলেন দুটি দেশ থেকেই আপনাকে ব্যান করা হবে যার কারণে আপনি আর ইউরোপের সেনজেনভুক্ত কোন দেশে থাকতে পারবেন না।
উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি লিথুনিয়া তে জব কন্টাক্ট নিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে পর্তুগালে চলে গেলেন কিন্তু কোন কারণে পর্তুগালেও লিগ্যাল হতে পারলেন না সে ক্ষেত্রে আপনাকে পর্তুগাল থেকে ব্ল্যাকলিস্টেড করে দেয়া হবে এবং লিথুনিয়া থেকে জব কন্ট্রাক্ট বাতিলের কারণে আপনাকে সেখান থেকেও ব্যান করা হবে। আর আপনি যদি ইউরোপের সেনজেনভুক্ত যেকোনো দুটি দেশ থেকে ব্যান হন তাহলে আপনি আর কখনোই ইউরোপে কাজ বা অন্যান্য যে কোন উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এমনকি বর্তমানে লিথুনিয়ার চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি বাংলাদেশের শ্রমিকদের ব্যান করেছে অর্থাৎ বাংলাদেশে কোন শ্রমিক তারা আর নিয়োগ দেবে না। যার জন্য বাংলাদেশীদের অনেক বড় কাজের একটি ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে এছাড়াও দেশের যে বৈদেশিক শ্রমবাজার সেখানেও একটি খারাপ প্রভাব পড়ছে। তাই আপনারা যদি লিথুনিয়া জব কন্ট্রাক্টে যান তাহলে অবশ্যই সেখানে থাকার চেষ্টা করবেন।
শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন লিথুনিয়াতে কেউ যদি মিনিমাম জব ও করে তাহলে সে শুরুর দিকেই অনায়াসে মাসে এক লক্ষ টাকার বেশি ইনকাম করতে পারবে যেটি যে কারো জন্য যথেষ্ট বলা চলে। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে যখন আপনার কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়বে তখন ঘন্টা প্রতি আপনার বেতন আরো বেশি হবে সে পর্যন্ত অবশ্যই ধৈর্য সহকারে কাজ করা উচিত। আর লিথুনিয়া তে গিয়ে যদি আপনারা এভাবে হুটহাট চুক্তি ভঙ্গ করে অন্যান্য দেশে চলে যান তাহলে একটি সময় গিয়ে দেখা যাবে বাংলাদেশের কোন প্রবাসী কখনোই আর লিথুনিয়া তে কাজের সুযোগ পাবে না তাই আশা করছি এ বিষয়ে আপনারা সতর্ক থাকবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url