হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি? 7 Types Of Hosting

হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?

হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?

হোস্টিং বা ওয়েব হোস্টিং হলো এমন একটি স্পেস বা মেমোরি যেখানে একটি ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাইলগুলি সংরক্ষিত থাকে। আমরা ইন্টারনেটে যে সমস্ত ওয়েবসাইট দেখতে পাই সেগুলোর যাবতীয় ফাইল গুলি ২৪ ঘন্টায় চালু থাকে এমন একটি কম্পিউটারে বা সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে সেখান থেকেই আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্যগুলি সার্বক্ষণিক এক্সেস করতে পারি। ওয়েব হোস্টিং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে যেগুলোর আলাদা আলাদা সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা হোস্টিং কত প্রকার এবং কি কি, এবং প্রত্যেকটি হোস্টিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

১. শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting)

সবচেয়ে সাধারণ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হোস্টিং সার্ভিস হলো শেয়ার হোস্টিং যেখানে একটি সার্ভারকে কয়েকজন ব্যবহারকারীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় যাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ডোমেইন থাকে কিন্তু সার্ভারের যাবতীয় রিসোর্স (যেমন RAM, CPU, এবং ব্যান্ডউইথ) ইত্যাদি ভাগ করে দেয়া হয়।

যারা কম খরচে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে চান তাদের জন্য শেয়ার হোস্টিং উপযুক্ত। সেড হোস্টিং ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টেকনিক্যাল নলেজেরও প্রয়োজন হয় না এবং ব্যবহার করা অনেকটা সহজ। তবে এর একটি অসুবিধা হচ্ছে যদি আপনার ওয়েবসাইট বড় হয় তাহলে কিছু সমস্যায় পড়তে পারেন কারণ এখানে একাধিক ব্যবহারকারীর মধ্যে স্টোরেজ ভাগ করে দেয়া হয় যার জন্য আপনার ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় স্পেস নাও পেতে পারেন।

যারা ছোট এবং মাঝারি রকমের ওয়েবসাইট যেমন; ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান এবং নতুন ওয়েবসাইটের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং একটি আদর্শ অপশন।

২. ভিপিএস হোস্টিং (VPS Hosting)

ভিপিএস হোস্টিং হলো শেয়ার হোস্টিং এবং ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের সম্মিলিত একটি সিস্টেম। অর্থাৎ ভিপিএস হোস্টিং এ একটি সার্ভারকে ভার্চুয়াল সার্ভারে রূপান্তর করা হয় এবং প্রত্যেকটি ভার্চুয়াল সার্ভারের জন্য আলাদা আলাদা র‌্যাম এবং সিপিইউ লাগানো হয়। ভিভিএস হোস্টিং শেয়ারড হোস্টিং এবং ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের একটি মধ্যবর্তী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। ভিপিএস  হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা সার্ভার কনফিগারেশন সহ সফটওয়্যার ইনস্টল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশি নিয়ন্ত্রণ পান। 

 ভিপিএস হোস্টিং এ প্রয়োজন অনুযায়ী স্টোরেজ বাড়ানো বা কমানো যায়
তুলনামূলক বড় ওয়েবসাইট যাদের বেশি স্টোরেজ এবং ট্রাফিক রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ভিসিএস হোস্টিং একটি ভালো অপশন। এছাড়াও যারা হোস্টিং এর উপরে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং বেটার পারফরম্যান্স রান তাদের ক্ষেত্রেও ভিপিএস হোস্টিং ভালো সুবিধা দিয়ে থাকে।

৩. ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting)

ডেডিকেটেড হোস্টিং বলতে এমন একটি হোস্টিং সার্ভিসকে বোঝায় যেখানে একটি সম্পূর্ণ সার্ভার একজন মাত্র ব্যক্তি ব্যবহার করে থাকে অথবা যেখানে একটি মাত্র ওয়েবসাইট হোস্ট থাকে। সার্ভারের সমস্ত রিসোর্স সিপিইউ, র‍্যাম এবং ডিস্ক স্পেস একজন মাত্র ব্যবহার করেন। ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ব্যবহারকারীরা তাদের সার্ভারের উপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং সফটওয়্যার কনফিগারেশনের সুবিধা পান। এছাড়াও এখানে একজন মাত্র ব্যবহারকারী থাকার কারণে সিকিউরিটি অনেক স্ট্রং হয়ে থাকে। এছাড়াও শেয়ার্ড এবং ভিপিএস হোস্টিং এর চাইতে ডেডিকেটেড হোস্টিংসর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে।

তুলনামূলক জটিল এবং বড় ওয়েবসাইট যেখানে অনেক পেইজ থাকে তাদের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও যারা তাদের ওয়েবসাইটে নিরাপত্তা নিয়ে অধিক চিন্তিত তাদের ক্ষেত্রেও ডেডিকেটেড হোস্টিং এক অনন্য সমাধান।

৪. ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting)

ক্লাউড হোস্টিংকে গুগল ড্রাইভের সাথে তুলনা করা যায় কারণ এটি অনেকগুলো সার্ভারের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং ইউজাররা তাদের সুবিধামতো যে কোন পরিমাণ স্টোরেজ সুবিধা নিতে পারে এবং তার উপরে পেমেন্ট করতে পারে। এটি একটি ডিসেন্টালাইজড সিস্টেম যেখানে অনেক গুলো সার্ভারে ডেটা সংরক্ষিত থাকে যার কারণে সার্ভারের ডাউন টাইম অনেকটাই কমে যায়। ব্যবহারকারীরা যতটুকু স্টোরেজ ব্যবহার করবেন শুধু ততটুকুই পেমেন্ট করেন যেটি অন্যান্য হোস্টিং সার্ভিস এর ক্ষেত্রে সম্ভব না। এটি ই-কমার্স এবং বিভিন্ন মিডিয়া রিলেটেড যে বড় বড় ওয়েবসাইট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আদর্শ হোস্টিং সার্ভিস হিসেবে বিবেচিত হয়।

৫. ম্যানেজড হোস্টিং (Managed Hosting)

ম্যানেজড হোস্টিং হল এমন একটি হোস্টিং সার্ভিস যেখানে ব্যবহারকারীকে কোনপ্রকার টেকনিক্যাল ঝামেলা পোহাতে হয় না অর্থাৎ আপনার হোস্টিং সার্ভিসের যাবতীয় যে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো আছে সেগুলো হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী দেখবে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে কোন প্রকার সফটওয়্যার আপডেট নিরাপত্তা বা আপলোড করা ফাইলের ব্যাকআপ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

ম্যানেজড হোস্টিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এর কোন ঝামেলা নেই এছাড়াও ম্যানেজ হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারী সার্ভারে নিরাপত্তা বজায় রাখে এবং সবসময় আপডেট রাখে। এই হোস্টিং সার্ভিস ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত যারা কিনা টেকনিক্যাল কোন ঝামেলা পোহাতে চান না যেমন ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ব্লগ ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

৬. রিসেলার হোস্টিং (Reseller Hosting)

রিসেলার হোস্টিং মূলত ছোটখাটো হোস্টিং ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে থাকে। তারা বড় বড় কোম্পানি থেকে সার্ভার কিনে সেটি ছোট ছোট আকারে পুনরায় বিক্রি করে থাকে এটি মূলত যারা হোস্টিংয়ের ব্যবসা করতে চান তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে রিসেলার চাইলে তার নিজস্ব নামে হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করতে পারবেন। আমাদের দেশে মূলত ম্যাক্সিমাম কোম্পানি এই রিসেলার হোস্টিং এর মাধ্যমে হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকে।

৭. কোলোকেশন হোস্টিং (Colocation Hosting)

কোলোকেশন হোস্টিং সার্ভিস এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তাদের নিজস্ব হার্ডওয়ার এবং সার্ভার ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব একটি ডাটা সেন্টার স্থাপন করে এরপরে ব্যবহার করেন। সাধারণত বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থা যেমন; মাইক্রোসফট, অ্যাপল ইত্যাদি কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব সার্ভার ব্যবহার করে তাদের ক্ষেত্রে কোলোকেশন হোস্টিং প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তার সার্ভার এর উপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পান এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।

৮. সেলফ-সার্ভড হোস্টিং (Self-Served Hosting)

সেলফ-সার্ভড হোস্টিং নিজস্ব হার্ডওয়ার এবং ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে তৈরি করা একটি হোস্টিং সার্ভিস যার মাধ্যমে বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব সার্ভার পরিচালনা করে। বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারি সংস্থা সাধারণত সেলফ-সার্ভড হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে হোস্টিং সার্ভিস এর ক্ষেত্রে কোন খরচ করতে হয় না শুধুমাত্র ইন্টারনেট খরচ বাবদ যা খরচ হয় তাই। এর সার্ভিসটি ব্যবহারের জন্য উচ্চতর প্রযুক্তিগত দক্ষতার দরকার হয় যার জন্য কোম্পানিগুলো টেকনিশিয়ানও নিয়োগ করে থাকে। যেসব কোম্পানি মূলত হোস্টিং সেবার জন্য কোন হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার এর ওপর নির্ভরশীল থাকতে চান না অথবা নিরাপত্তা জনিত কারণে সেটি সম্ভব হয় না তাদের ক্ষেত্রে সেলফ সার্ভড হোস্টিং একটি আদর্শ সমাধান নিশ্চিত করে থাকে।

শেষ কথা

প্রত্যেক টি হোস্টিং সার্ভিস এরই কিছু নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, শেয়ার্ড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে যেমন আমরা দেখি সেখানে একে সার্ভারের একাধিক ব্যবহারকারী থাকে যাদের মধ্যে সার্ভারের সমস্ত রিসোর্স ভাগাভাগি করে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা কম খরচে হোস্টিং সার্ভিস পেতে পারেন, তুলনামূলক ছোট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শেয়ার্ড হোস্টিং প্রযোজ্য হয়ে থাকে। অন্যদিকে ভিপিএস হোস্টিং যদিও শেয়ার্ড হোস্টিং এর চাইতে বেশি সুবিধা প্রদান করে আর ক্লাউড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী শুধুমাত্র তিনি যতটুকু স্টোরেজ ইউজ করেছেন ততটুকুর খরচে প্রদান করবেন এটি একটি বড় সুবিধা। অন্যদিকে ডেডিকেটেড বা সেলফ-সার্ভড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী অধিক নিরাপত্তা এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পান যেটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা প্রদান করে।

একটি ভালো মানের হোস্টিং নির্বাচন করা ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য কাজ কারণ আপনার ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স অনেকাংশেই হোস্টিং এর উপরে নির্ভর করবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url