স্টুডেন্ট,ট্যুরিস্ট এবং কাজের ভিসায় ফিনল্যান্ড যাওয়ার খরচ
অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনাকে যদি বাংলাদেশের বাইরে কোনো একটি দেশে যাওয়া সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আপনি কোন দেশে যেতে চাইবেন তাহলে অন্তত 90 ভাগ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বলবে ইউরোপের যে কোন একটি দেশে যেতে চান। আর ইউরোপ কান্ট্রি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সেখানে ফিনল্যান্ডের নাম থাকবে না এমনটি হতেই পারে না।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চ জীবন যাত্রার মান সহ যেকোনো মানদন্ডে বিচার করুন না কেন ফিনল্যান্ড আপনার বিবেচনায় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই একটি পারফেক্ট দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। সেজন্যই তো বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে মানুষ তাদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ফিনল্যান্ডের উদ্দেশ্যে স্টুডেন্ট ভিসা, টুরিস্ট ভিসা অথবা কাজের ভিসায় যাত্রা করছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ভিসায় ফিনল্যান্ডে যেতে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে।
স্টুডেন্ট ভিসায় ফিনল্যান্ডে যেতে কত টাকা লাগে?
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক স্টুডেন্টদের পছন্দের তালিকায় শুরুর দিকেই থাকবে ফিনল্যান্ড, সেজন্যই তো বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা ফিনল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করে থাকেন। তবে অনেকেই ই জানতে চান স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ফিনল্যান্ড যেতে মোট কত টাকা খরচ হয়ে থাকে, চলুন তবে সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
স্টুডেন্ট ভিসায় ফিনল্যান্ড যাওয়ার খরচ বেশ কিছু ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে যেমন; অ্যাপ্লিকেশন ফি, হেলথ ইন্সুরেন্স, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত, ভিসা প্রসেসিং ফি, এয়ার টিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি। তাই উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদনের আগে প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। প্রথমত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন ফি হিসেবে ২০০ থেকে ২৫০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে যা বাংলাদেশি টাকায় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়াও এক বছরের হেলথ ইন্সুরেন্স বাবদ বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে । স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের দূতাবাস না থাকায় আপনাকে ইন্ডিয়ায় অবস্থিত ফিনল্যান্ড দূতাবাসের সাহায্য নিতে হবে যার জন্য ইন্ডিয়ায় যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে সেখানকার সার্ভিস চার্জ মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অবধি খরচ হতে পারে। তাছাড়াও ব্যাংক স্টেটমেন্ট হিসেবে যেকোনো একটি ব্যাংক একাউন্টে ৭ থেকে ১০ হাজার ইউরো সমপরিমাণ টাকা কিছু সময়ের জন্য জমা রাখতে হবে যা বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে ৯ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়।
ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসায় যাবার আগে এক বছরের টিউশন ফি অগ্রিম পরিশোধ করে এরপরে যেতে হয় যা সাধারণত বাংলাদেশি টাকায় 9 লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটি ভেদে 21 লক্ষ অবদিও হতে পারে। এছাড়াও লিভিং কস্ট বাবদ ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা বার্ষিক খরচ হবে। যদিও অনেকে পার্ট টাইম জবের চিন্তা করে ফিনল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য গিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই অন্তত ছয় মাসের লিভিং কস্ট দেশ থেকেই নিয়ে যাওয়া উচিত কারণ নতুন একটি দেশে গিয়ে চাকরি খুজে পাওয়া থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন কাজ থাকে যেগুলো সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় প্রয়োজন হবে।
টুরিস্ট ভিসায় ফিনল্যান্ডে যাওয়ার খরচ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যবাহী সব স্থাপনা এবং সেখানকার ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় সংস্কৃতির টানে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে বিদেশি পর্যটক ফিনল্যান্ডে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গিয়ে থাকেন। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ডের সৌন্দর্য নজর কাড়ার মত। বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট ভিসায় ফিনল্যান্ডে যেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং প্রক্রিয়া রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে আবেদন ফ্রি সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ ইউরো যা বাংলাদেশের টাকায় হিসেব করলে 9 থেকে 11 হাজার টাকা হয়ে থাকে। এছাড়াও ফিনল্যান্ড ইউরোপের সেনজেনভুক্ত দেশ হওয়ার কারণে সেখানে টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রেও হেলথ ইন্সুরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। টুরিস্ট ভিসার জন্য স্বাস্থ্য বীমা করতে বাংলাদেশে টাকায় ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
প্রত্যেকটা ভিসার আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের দরকার হয় যেমন; পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এনআইডি কার্ড, ট্যুর প্লান, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, পাসপোর্ট ইত্যাদি যেগুলো প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশি টাকায় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এরপর ভিসা হাতে পাবার পরে বিমানের টিকেট সহ সেখানকার যাতায়াত খরচ, থাকা খাওয়া এবং হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া কেমন হবে সে টি আপনার ট্যুর প্লান এর উপরে ডিপেন্ড করবে।
কাজের ভিসায় ফিনল্যান্ডে যেতে কত টাকা লাগে
উন্নত জীবনযাত্রার মান এবং উচ্চ বেতনের সুবিধার কথা বলতে গেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা সেনজেনভুক্ত দেশগুলোর তুলনা হয় না, সেজন্যই তো প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ইউরোপে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে মানুষ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ফিনল্যান্ডে গিয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে যেতে কত টাকা খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে চলুন একটু আইডিয়া নেয়া যাক।
ফিনল্যান্ডের কাজের ভিসা পেতে হলে আপনাকে বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হবে এবং নির্দিষ্ট কিছু খরচ বহন করতে হবে। খরচ গুলোর মধ্যে ভিসার আবেদনের জন্য প্রায় 400 ইউরো মত খরচ হবে যা বাংলাদেশী টাকায় ৪৮ হাজার টাকা মতো। এছাড়াও আপনারা জানেন যে ইংল্যান্ডের যেকোনো বিষয়ে যেতে হলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে হেলথ ইন্সুরেন্স করতে হয় যার জন্য বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাৎসরিক খরচ করতে হতে পারে। অবশ্য এটাকে সরাসরি খরচ বলা যাবে না কারণ যখন আপনি অসুস্থ হবেন তখন ইন্সুরেন্স কোম্পানি আপনাকে চিকিৎসা খরচ দেবে আপনার জমানো টাকা থেকেই তাই এটিকে সঞ্চয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
এছাড়াও ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় যেমন পাসপোর্ট, যে কোম্পানিতে কাজ করবেন সেই কোম্পানির অফার লেটার, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, আপনি যে কাজে দক্ষ তার উপর একটি প্রমাণ পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট সহ বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন পড়বে সেগুলো রেডি করতে নির্দিষ্ট পরিমাণে কিছু খরচ হবে। তবে এই খরচ টা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল তবে বাংলাদেশী টাকায় আনুমানিক ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এগুলো মোটামুটি ভিসা হাতে পাওয়া পর্যন্ত খরচ এরপরে এয়ার টিকিটসহ সেখানে গিয়ে থাকা খাওয়া অর্থাৎ লিভিং কস্ট প্রতি মাসে প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
শেষ কথা
ফিনল্যান্ডের যে কোন ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রেই প্রায় একই ধরনের কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে অনলাইনে আপনি যে ভিসার জন্য আবেদন করতে চান সে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে পূরণ করার পরে তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিতে হয় এর সাথে আবেদন প্রিয় প্রদান করতে হয়। এরপর তারা যদি আপনার ভিসা এপ্রুভ করে তাহলে ভাইবার মাধ্যমে ভেরিফিকেশন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে আনুমানিক 15 দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
যে কোন দেশের ভিসা আবেদন করার আগে সে দেশের সার্বিক অবস্থা এবং খরচের পরিমাণটা অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত। ওপরের আলোচনা থেকে আশা করি বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা টুরিস্ট ভিসা এবং কাজের ভিসার জন্য ফিনল্যান্ড যেতে আনুমানিক কত খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে আইডিয়া পেয়েছেন। তবে খরচের পরিমাণ সময় সাথে সাথে কম বা বেশি হতে পারে তাই আবেদনের আগে অবশ্যই ফিনল্যান্ডের দূতাবাস বা অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন। আশা করছি আপনার ফিনল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে একটু হলেও হেল্প করতে পেরেছি, আপনার যাত্রা শুভ হোক।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url