ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য সহজ কাজ
ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য সহজ কাজ
কাজের ভিসায় ক্রোয়েশিয়া আসার পর সেখানকার কাজের শর্তগুলো কি কি এবং কাজের পরিবেশই বা কেমন সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন। আজকে আর্টিকেল আমরা ক্রোয়েশিয়ার কাজের শর্ত, কাজের পরিবেশ সহ এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব, আশা করছি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ক্রোয়েশিয়ার কাজের পরিবেশ
সাধারণত প্রবাসীরা যেসব দেশে কাজের জন্য যেয়ে থাকে যেমনঃ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কুয়েত, কাতার সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার কাজের শর্ত এবং কাজের পরিবেশ দুটোই অনেক ভালো এবং শ্রমিক বান্ধব। শুধুমাত্র ক্রোয়েশিয়ায় নয় ইউরোপের অন্যান্য দেশের কাজের শর্ত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কাজে শর্তের তুলনায় অনেকটাই সহজ। এখানে কর্ম ঘন্টা যেমন কম এর পাশাপাশি বেতন ভালো। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখবেন আপনি যে দেশেই যান আপনাকে কিন্তু কাজ করতেই হবে ইউরোপে যতই কাজের শর্ত সহজ হোক না কেন আপনি যদি আপনার কাজ বা আপনার উপরে যে দায়িত্বগুলো দেয়া হবে সেগুলো সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে কখনোই কাজে টিকে থাকতে পারবেন না। তাই অবশ্যই যেখানেই যান না কেন কাজ করার মন মানসিকতা এবং পরিশ্রম করার এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা রাখবেন।
ক্রোয়েশিয়া তে কোন কাজ সহজ
তবে আপনি যদি ক্রোয়েশিয়াতে কোন অফিশিয়াল জবে একটি ভালো পদে কাজের জন্য যান তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার কাজ অনেকটাই সহজ এবং আরামদায়ক হবে। ক্রোয়েশিয়ার পরিবেশ অনেক ঠান্ডা হওয়ার কারণে আপনি যদি অফিসের বাইরে ও সাধারণ কোন কাজ করেন সেক্ষেত্রেও আপনার পরিশ্রম অন্যান্য এশিয়ান কান্ট্রি থেকে কম হবে। উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি সৌদি আরবের কোন কোম্পানিতে কনস্ট্রাকশন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে কাজ করতে হবে ৫০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রার মধ্যে। কিন্তু অন্যদিকে আপনি যদি সেম কাজই ক্রোয়েশিয়াতে করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা থাকবে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে তাহলে বুঝতেই পারছেন কাজের পরিবেশ কতটা ভালো হবে।
এক্ষেত্রে যদি আপনি একটি অফিসিয়াল জব করেন তাহলে আপনাকে বাইরের পরিবেশ নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হবে না, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম যাই হোক না কেন আপনি অফিসে একটি আরামদায়ক পরিবেশে কাজের সুযোগ পাবেন। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের উদ্দেশ্যে ক্রোয়েশিয়া যায় তাদের মধ্যে থেকে খুব কম মানুষই অফিশিয়াল কাজের সুযোগ পায়। বেশিরভাগ প্রবাসী সাধারণ কিছু কাজ যেমন; ওয়েটার, সেলসম্যান, ক্লিনার, কনস্ট্রাকশন শ্রমিক, ডেলিভারি বয় ইত্যাদি সেক্টরে কাজ করে।
সাধারণ কাজের মধ্যেও কিছু কাজ আছে যেগুলো আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে থেকে করবেন সেগুলো তুলনামূলক বাইরের কাজগুলো চাইতে একটু সহজ হয়ে থাকে। আপনি যদি কোন রেস্টুরেন্টে কাজ করেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে রেস্টুরেন্টের ভেতরেই কাজ করতে হবে আর আপনি যদি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনাকে বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাইরে যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা থাকে আর আপনি যদি রেস্টুরেন্টে জব করেন তাহলে সেখানে অফিসের মধ্যে থেকে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন যার কারণে বাইরের ঠান্ডায় আপনাকে কষ্ট করতে হচ্ছে না।
কিন্তু অন্যদিকে আপনি যদি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তাহলে বাইরের পরিবেশ যতই ঠান্ডা হোক না কেন আপনাকে তার মধ্যে কাজ চালিয়ে যেতে হবে কখনোই আপনার কাজ বন্ধ থাকবে না। তাই আপনারা যারা বেশি পরিশ্রমের কাজ করতে অভ্যস্ত নয় তারা সবসময় চেষ্টা করবেন অফিসিয়াল টাইপের যে কাজগুলো আছে বা যে কাজগুলো অফিসের মধ্যে থেকে করা যায় সেগুলোর জন্য ক্রোয়েশিয়া আসতে।
তবে আপনার যদি কাজের অভিজ্ঞতা থাকে বা আপনি কাজের সাথে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি পৃথিবীর যে দেশে যান না কেন আপনার মানিয়ে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হবে না। উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন যাবত রাজমিস্ত্রির কাজ করেন সেক্ষেত্রে আপনি আপনার কাজের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এরপরে আপনি পৃথিবীর যে কোন দেশেই যান না কেন আপনি আপনার কাজ আশা করা যায় সঠিকভাবেই করতে পারবেন।
ক্রোয়েশিয়াতে কাজের ক্ষেত্রে আরেকটি বিশেষ কন্ডিশন হলো আপনি আপনার কর্মঘন্টার মধ্যে এক মিনিট সময়ও বসে কাটাতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনি একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই রেস্টুরেন্টে সবসময় কাস্টমারের ভিড় থাকবে না। আপনি হয়তো মনে করতে পারেন এই সময়টা আপনি বসে কাটাতে পারবেন কিন্তু বিষয়টা এমন নয়। কাস্টমার না থাকলেও আপনাকে রেস্টুরেন্টের মধ্যে আরো অন্যান্য যে কাজগুলো রয়েছে যেমনঃ থালা-বাসন পরিষ্কার করা, টেবিল পরিষ্কার করা বা রেস্টুরেন্টের মধ্যে অন্যান্য যে ফার্নিচারগুলো আছে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। অর্থাৎ মূল কথা হচ্ছে যতটুকু আপনার কাজ করার কথা ততটুকু সময় আপনাকে কাজ করে কাটাতে হবে কোনভাবেই বসে থাকার সুযোগ নেই।
তবে ক্রোয়েশিয়াতে কাজের মধ্যে কিছু সময় ব্রেক দিয়ে থাকে। আপনি যদি দিনে 7 ঘন্টা কাজ করেন তাহলে দেখা যাচ্ছে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর আপনি কিছু সময়ের জন্য ব্রেক পাবেন সেই সময়টাতে আপনি আপনার যা ইচ্ছা যা খুশি তাই করতে পারবেন অসুবিধা নেই।
ক্রোয়েশিয়ায় কাজের বেতন
গত বছর থেকে অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে ২৪ সালে এসে ক্রোয়েশিয়া সরকার সেখানকার শ্রমিক কর্মীদের সর্বনিন্ম বেতন মাসে ৭০০ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৮৪০ ইউরো করেছে। অর্থাৎ আপনি ক্রোয়েশিয়াতে যে কাজই করেন না কেন আপনার সর্বনিম্ন বেতন হবে ৮৪০ ইউরো, কোম্পানি চাইলেও এর চাইতে কম বেতনে কোন কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। এরপরে আপনি যখন আপনার কাজে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন বা আপনার ২-৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে তখন আপনার বেতন আরো বেড়ে যাবে। নতুন হিসেবে ৮৪০ ইউরো বেতন যা বাংলাদেশী টাকায় আজকের রেট অনুযায়ী ১ লাখ ১০ হাজার ৯৪৭ টাকা বেতন পাবেন প্রতিমাসে যেটি অনেক বড় একটি এমাউন্ট। এটি হচ্ছে গুগলের রেট, আপনি যখন ব্যাংকে বা কোন মানি এক্সচেঞ্জারে যাবেন তখন টাকার মান অনুযায়ী এটি পরিবর্তন হতে পারে।
ধরুন আপনি প্রতিমাসে ৮৪০ ইউরো বেতন পান এক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ৮৪০ ইউরো হাতে পাবেন না, এখান থেকে একটি ইনকাম ট্যাক্স কাটা হবে এরপরে আপনি যে টাকা টা পাবেন সেটি অটোমেটিক্যালি আপনার ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে দেয়া হবে।
শেষ কথা
অনেকেই ভেবে থাকে কম পরিশ্রম করে কিভাবে বেশি টাকা ইনকাম করা যায় যেটি পৃথিবীর কোন দেশেই কখনো আগেও সম্ভব ছিল না ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না। আপনার বেতন কত হবে সেটি পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় নির্ধারণ করা হবে আপনার কাজের দক্ষতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আপনি আপনার কাজ কতটুকু মনোযোগ সহকারে করতে পারছেন তার উপরে। এখন আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনি কম কাজ করে বেশি টাকা বেতন নিবেন তাহলে আপনি কখনোই কোন কাজে টিকে থাকতে পারবেন না সেটা হোক বাংলাদেশ বা পৃথিবীর যেকোনো দেশ। তাই কোন কাজের ভিসায় দেশের বাইরে যেতে চাইলে অবশ্যই পরিশ্রম করার মন মানসিকতা নিয়ে যাওয়া উচিত।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url