বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা; বেতন ও নিজে আবেদনের উপায়
বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা; বেতন ও নিজে আবেদনের উপায়
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়াতে গার্মেন্টস ভিসায় প্রচুর পরিমাণে মানুষ যাচ্ছেন। আপনি চাইলে কোনো প্রকার দালাল বা এজেন্সির সহযোগিতা ছাড়াই নিজেই এই ভিসার আবেদন করতে পারবেন। বুলগেরিয়ার গার্মেন্টস ভিসা সম্পর্কিত আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করবো বুলগেরিয়া দেশটি কেমন, গার্মেন্টস সেক্টরে কোন কোন কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ হচ্ছে, বেতন এবং কি কি সুযোগ সুবিধা পাবেন, যেতে কত টাকা লাগবে এবং কত টাকা বেতন পাবেন সে সম্পর্কে । এছাড়াও আপনি কিভাবে নিজেই এই ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেটাও জানানোর চেষ্টা করব। তাই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বুলগেরিয়া দেশটি কেমন?
বুলগেরিয়া হলো ইউরোপের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত একটি দেশ যেটির প্রতিবেশী দেশসমূহ হলোঃ রোমানিয়া, সার্বিয়া, গ্রীস এবং তুর্কি। বুলগেরিয়ার রাজধানীর নাম হচ্ছে সোফিয়া। বুলগেরিয়াতে দুই ধরনের মুদ্রার প্রচলন রয়েছে একটি হলো বুলগেরিয়ান লেভ এবং অন্যটি হলো ইউরো। বুলগেরিয়ার ১ টাকা অর্থাৎ এক বুলগেরিয়ান লেভ সমান বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা। বুলগেরিয়ান গার্মেন্টস প্রোডাক্ট এর চাহিদা বর্তমানে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বিদ্যমান রয়েছে যার কারণে সেখানে প্রচুর পরিমাণে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ লাখের কাছাকাছি যার কারণে সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকের স্বল্পতা রয়েছে এজন্যই প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে গার্মেন্টস শ্রমিক বাইরের দেশ থেকে নিয়োগ করতে হয়।
গার্মেন্টস সেক্টরে কোন কোন পদে কাজ পাওয়া যায়
আপনারা যারা গার্মেন্টস সেক্টরে কাজের জন্য ভুল গিরি হয়ে যেতে চান তাদের অবশ্যই জানা উচিত আপনি সেখানে কোন কোন সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। নিচে কাজগুলো লিস্ট দেয়া হলো।
- অফিস সহকারি
- টেইলর
- কাটিং অপারেটর
- সুইং অপারেটর
- সহকারী প্যাটার্ন মেকার ইত্যাদি
আপনারা যারা এই সমস্ত কাজের দক্ষ তাদের ক্ষেত্রে বুলগেরিয়ার গার্মেন্টস ভিসা পাওয়া অনেক সহজ হবে। এছাড়াও আপনারা যারা উপরের কাজগুলোতে দক্ষ নয় তাদের ক্ষেত্রেও ভিসা পাওয়া সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই বিষয়টা এমন নয় আপনারাও আবেদন করে দেখতে পারেন।
বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসার বেতন
ধরুন ওপরে বর্ণিত যে কোন একটি কাজের জন্য আপনি বুলগেরিয়াতে গেলেন এরপরে আপনার বেতন কত হবে চলুন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। যারা বর্তমানে বুলগেড়িয়াতে গার্মেন্টস ভিসায় কাজের জন্য গিয়েছেন তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপরের কাজগুলোর জন্য মাসিক বেতন ৪৫০ থেকে ৬০০ ইউরোর মধ্যে হবে যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় আজকের রেট অনুযায়ী ৫৯ হাজার ৭২৪ টাকা থেকে ৭৯ হাজার ৬৩২ টাকার সমান। এটি হল একদম শুরুর দিকের বেতন বা সর্বনিম্ন বেতন ও ধরতে পারেন। এরপরে যখন আপনি সেখানে দীর্ঘ সময় কাজ করবেন আপনার কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে বেতন বাড়বে। বর্তমানে বুলগেরিয়াতে নারী এবং পুরুষ উভয় প্রকার শ্রমিকেরই চাহিদা রয়েছে।
বেতনের পাশাপাশি তারা থাকা এবং খাবার খরচ বাবদ কিছু অর্থ দিয়ে থাকে তবে কোম্পানি ভেদে সেটি নাও দিতে পারে। আপনি কাজের ভাষায় বুলগেরিয়া যাওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে টি আর বা টেম্পোরারি রেসিডেন্স কার্ড পেয়ে যাবেন এছাড়া আপনারা যদি পাঁচ বছর দেশটিতে থাকেন তাহলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স বা পিয়ারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বুলগেরিয়ায় কাজের পরিবেশ যেমন উন্নত এবং স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপত্তার দিক দিয়েও এটি যথেষ্ট ভালো একটি দেশ। আপনাকে সপ্তাহে ৬ দিন এবং প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে কাজ করতে হবে, এরপরে আপনি চাইলে ওভারটাইম করতে পারবেন যার জন্য অতিরিক্ত বেতনও পাবেন।
এক কথায় বুলগেরিয়াতে গার্মেন্টস ভিসার বেতনের কথা বলতে গেলে আপনি শুরুর দিকে মাসে আপনি যদি টাকা এবং খাবার খরচ বাদ দিয়েও হিসাব করেন তাহলে 40 থেকে 50 হাজার টাকা পর্যন্ত সেভ করতে পারবেন। এরপরে আপনারা যখন আস্তে আস্তে কাজে অভিজ্ঞ হবেন এবং প্রমোশন পাবেন তখন বেতনের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।
দালাল এবং এজেন্সি ছাড়া বুলগেরিয়া গার্মেন্টস ভিসা
কোনরকম দালাল বা এজেন্সির সহায়তা ছাড়া আপনারা যদি বলগেরিয়াতে গার্মেন্টস ভিসায় যেতে চান তাহলে আপনাদের দুটি উপায় অনুসরণ করতে হবে যেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।
বোয়েসেল এর মাধ্যমে আবেদন
আপনি যদি সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যমের কথা চিন্তা করেন তাহলে বোয়েসেলের মাধ্যমে গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এটি হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি সংস্থা যেটি পৃথিবীর বাইরের বিভিন্ন দেশে কাজের ভিসা গুলো নিয়ে কাজ করে। আপনি বোয়েসেল এর মাধ্যমে খুব সামান্য খরচে বুলগেরিয়ার গার্মেন্টস ভিসার জন্য সরকারিভাবে আবেদন করতে পারেন।
বোয়েসেল এর ওয়েবসাইটের লিংক https://boesl.gov.bd/
আপনারা নিজেই এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করে সেখানকার বিভিন্ন দেশের কর্মসংস্থানের যে নোটিশগুলো পাবলিশ করা হয় সেগুলো থেকে কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এখান থেকে যদি আপনারা বুলগেরিয়ার গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে ওয়েবসাইটে দেয়া লিংকের উপরে ক্লিক করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার পর আপনি যদি ভিসার জন্য নির্বাচিত হন তাহলে তাদের ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে এবং ইন্টারভিউ এর পর আপনি যদি সিলেক্টেড হন তাহলে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। যদিও বুলগেরিয়াতে কাজের নোটিশ খুব কম আসে তবে বছরের শুরু এবং শেষের দিকে বেশি আসতে দেখা যায় তাই আপনি যদি বুলগেরিয়াতে গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে বছরের শুরু এবং শেষের দিকে বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে নজর রাখতে পারেন।
নিজে নিজে আবেদন
গার্মেন্টস ভিসা পাওয়ার আরেকটি উপায় হল নিজে নিজেই বুলগেরিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানির ওয়েবসাইটে ঢুকে প্রকাশিত সার্কুলার এ আবেদন করা। তবে অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট রেডি করতে হবে সেটি হল ইউরোপীয় ফরম্যাটে সিভি এবং কভার লেটার। এরপরে আপনাকে গার্মেন্টস কোম্পানির ওয়েব সাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে আমি একটি গার্মেন্টস কোম্পানির ওয়েবসাইটের লিংক নিচে দিয়ে দিচ্ছি
কোম্পানির আবেদন লিংক :https://antoanvill.com/
উপরের লিংকে ক্লিক করার পর আপনাকে একটি কোম্পানির ওয়েব সাইটে নিয়ে আসা হবে সেখান থেকে ক্যারিয়ার অপশনে গিয়ে আপনাকে একটি ব্যক্তিগত ইনফরমেশন সম্বলিত ফরম পূরণ করতে হবে এবং জমা দিতে হবে। ব্যক্তিগত ইনফরমেশন এর পাশাপাশি আপনি কোন পদের জন্য আবেদন করতে চান সেটি বাছাই করতে বলা হবে এক্ষেত্রে আপনি একটু সতর্কতার সাথে যে কাজ আপনি আসলেই করতে চান বা আপনার অভিজ্ঞতা আছে সেটি বাছাই করবেন।
সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর নিচে আপলোড সিভি নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করে আপনার প্রফেশনাল ইউরোপীয় ফরমেটের সিভি আপলোড করতে হবে। এরপরে নিচে আরও একটি অপশন দেখতে পাবেন যেখানে আপনার ছবি চাওয়া হবে সেখানে আপনার একটি ক্লিয়ার ছবি আপলোড করে এরপরে আপলোড কভার লেটার অপশনে ক্লিক করে কভার লেটার টি আপলোড করে দিবেন। এরপরে নিচে থাকা রোবট ভেরিফিকেশন অপশনে ক্লিক করে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে আপনার আবেদনটি জমা দিবেন।
এরপরে কোম্পানি যদি আপনাকে আপনার সিভির দেখে কাজের জন্য সিলেক্ট করে থাকে তাহলে আপনাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে এরপরে আপনারা ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা প্রসেসিং এর কাজ শুরু করে দিতে পারবেন। তবে বাংলাদেশের বুলগেরিয়ার কোন এম্বাসি না থাকার কারণে আপনাকে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইন্ডিয়ায় অবস্থিত বুলগেরিয়ার এম্বাসিতে জমা দিয়ে সেখান থেকে ভিসা নিতে হবে।
শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে কোন প্রকার দালালের বা এজেন্সি সহায়তা ছাড়াই নিজে নিজে কম খরচে বুলগেরিয়ার গার্মেন্টস ভিসার জন্য আবেদন করবেন। এছাড়াও গার্মেন্টস সেক্টরে কি কি কাজ পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url