বেলজিয়ামের স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের যোগ্যতা ও খরচ

বেলজিয়ামের স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের যোগ্যতা ও খরচ

বেলজিয়ামের স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের যোগ্যতা ও খরচ

পড়াশোনার জন্য বেলজিয়াম একটি আদর্শ দেশ। সেখানকার আন্তর্জাতিক মানে সব শিক্ষা প্রতিষ্টানে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করে থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশ থেকে বেলজিয়ামের স্টুডেন্ট ভিসা পেতে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে এবং কত টাকা খরচ হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। এছাড়াও বেলজিয়ামে পার্টটাইম জব করে পড়াশোনার খরচ চালানো যায় কিনা এবং বেলজিয়ামে লিভিং কস্ট কত সম্পর্কেও জানবো। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে করলে আশা করি বেলজিয়ামের স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদনের আগে যে বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো জানতে পারবেন।

ভিসা আবেদনের যোগ্যতা

আপনি যদি বেলজিয়ামে অনার্স বা ব্যাচেলরের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে ইন্টারমিডিয়েটের পর সরাসরি সেখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। এসেছে এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩ পয়েন্ট পেলেই আপনি বেলজিয়ামের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। তবে 3 পয়েন্টের নিচে থাকলেও আপনি আবেদন করার সুযোগ পাবেন তবে সেক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম থাকবে।

মাস্টার্স সম্পর্কে বলতে গেলে অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে অনার্স কমপ্লিট করতে হবে এবং নূন্যতম ২.৫০ রেজাল্ট থাকতে হবে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে বেলজিয়ামের যে কোন স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইএলটিএস থাকতে হবে। অনার্স এর ক্ষেত্রে আইএলটিএস স্কোর ৬ এবং মাস্টার্স এর ক্ষেত্রে ৬.৫০ থাকলেই মোটামুটি সেখানকার সবগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবেন। 

ব্লক একাউন্ট

বেলজিয়ামের ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যাংক স্টেটমেন্টের প্রয়োজন নেই তবে একটি ব্লক একাউন্টের প্রয়োজন হয়। ব্লক একাউন্ট হলো আপনি যে দেশে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন সে দেশেরই ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলে আপনাকে কিছু টাকা জমা রাখতে হবে। কত টাকা জমা রাখতে হবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে ডিপেন্ড করে তবে মোটামুটি ১১ হাজার ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ১৪ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা মতো হবে। এই টাকাটা আপনাকে দেশ থেকেই বেলজিয়ামের একটি ব্যাংক একাউন্টে পাঠাতে হবে, কোন ব্যাংকে পাঠাবেন সেটি অফার লেটার পাওয়ার পর আপনার বিশ্ববিদ্যালয় বলে দেবে।

এবং আপনি যখন বেলজিয়ামে যাবেন তখন প্রতি মাসে এই টাকার একটি অংশ আপনাকে পড়াশোনার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে দেয়া হবে যা সাধারণত ৮০০ থেকে ১০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আপনাকে প্রতিমাসে যে খরচটা দিবে সেটি আবার পুনরায় আপনার ব্লক একাউন্টে জমা রাখতে হবে কারণ, বেলজিয়ামের নিয়ম অনুযায়ী আপনার অনার্স বা মাস্টার্স কমপ্লিট হওয়ার আগ পর্যন্ত এই ১১ হাজার ইউরো ব্লক একাউন্টে জমা রাখা বাধ্যতামূলক তাই আপনি চাইলে এ টাকাটা খরচ না করে পুনরায় আবার ব্লক একাউন্টে জমাও রাখতে পারেন। আপনার পড়াশুনা শেষে এই পুরো টাকাটা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফেরত দিয়ে দেয়া হবে।

স্টাডি গ্যাপ

বেলজিয়াম স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে স্টাডি গ্যাপ অনার্সের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার বছর অ্যালাউ করে। আর মাস্টার্স এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন সময় বলা নেই তবে আপনার যদি জব সার্টিফিকেট থাকে তাহলে সেগুলো শো করে খুব সহজেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। তবে আপনার যদি কোন জব এক্সপেরিয়েন্স বা জব সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত এক্সেপ্ট করে।

ভিসা আবেদন ফি

বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার জন্য আপনাকে আবেদন ফ্রি হিসেবে ৫০ ইউরো জমা দিতে হবে যদি বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে ৬৫০০টাকার মতো হয়। অফার লেটার হাতে পাওয়ার আগ অবদি আবেদন খরচ হিসেবে শুধু এই ৬৫০০ টাকায় আপনাকে খরচ করতে হবে। অফার লেটার পাওয়ার পরে আরো অন্যান্য যে খরচ গুলো আছে সেগুলো পরিশোধ করতে হবে।

বেলজিয়ামে পার্ট টাইম জব

উচ্চশিক্ষার জন্য যারা বিদেশে যেয়ে থাকেন তাদের সবারই একটি ইচ্ছা থাকে পার্টটাইম জবের মাধ্যমে তাদের টিউশন ফি এবং লিভিং কস্ট বেয়ার করা । বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ী একজন স্টুডেন্ট প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা এবং মাসে ৮০ ঘন্টা কাজ করতে পারে। এ কাজের মাধ্যমে আপনি প্রতি মাসে ১৫০০ থেকে ১৮০০ ইউরো ইনকাম করতে পারবেন যা বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে 2 লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা হয় যা একজন স্টুডেন্টের যাবতীয় খরচ পূরণের জন্য যথেষ্ট। এত কম সময় কাজ করে এত বড় একটি এমাউন্ট ইনকামের সুযোগ থাকছে যা অন্যান্য ইউরোপ কান্ট্রির তুলনায় অনেক বেশি।

বেলজিয়ামে পড়াশোনার খরচ কেমন

লিভিং কস্ট

লিভিং কস্ট আসলে সম্পূর্ণটাই আপনার উপরে নির্ভর করে,আপনার চলাফেরা এবং জীবনযাত্রার মান অনুযায়ী খরচ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। তবে আপনি যদি একজন সাধারণ স্টুডেন্টের মত চলাফেরা করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে মাসে লিভিং কষ্ট বাবদ ৫০০ থেকে ৭০০ ইউরো পর্যন্ত খরচ হবে। আপনি যদি ছোটখাটো একটা পার্টটাইম জব করেন তাহলে অনায়াসেই সেই বেতনের অর্ধেকের কম টাকা দিয়ে লিভিং কস্ট মেকআপ করতে পারবেন।

টিউশন ফি

বেলজিয়ামে সব রকমের ইউনিভার্সিটি ই রয়েছে, অর্থাৎ টিউশন-ফি টা অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আপনি কোন সাবজেক্টে পড়াশোনার দেশে যাচ্ছেন তার উপরে নির্ভর করে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোর টিউশন ফি বার্ষিক ৪ হাজার ইউরো মত, আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো টিউশন ফি বার্ষিক ৭ থেকে ৮ হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। তাই আপনি যদি কম খরচে বেলজিয়ামে পড়াশোনা করতে চান তাহলে আবেদনের আগে অবশ্যই সেখানকার টিউশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তুলনামূলক টিউশন ফি কম সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করতে পারেন।

বেলজিয়ামে পার্ট টাইম জব করে পড়াশোনার খরচ

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন বেলজিয়ামে পার্টটাইম জব এর মাধ্যমে কি পড়াশোনার খরচ চালানো যায়? উত্তর হলো যায়। উপরের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে বেলজিয়ামে লিভিং কস্ট প্রতি মাসে 6 থেকে 700 ইউরো এবং টিউশন ফি ইউনিভার্সিটি ভেদে মাসে ৩০০ থেকে ৬০০ ইউরো পর্যন্ত সর্বোচ্চ হতে পারে। অর্থাৎ একজন স্টুডেন্ট এর প্রতিমাসে লিভিং কোস্ট এবং টিউশন ফি মিলে ১০০০ থেকে ১২০০ ইউরো সর্বোচ্চ খরচ হবে, অন্যদিকে বেলজিয়ামের স্টুডেন্টরা পার্ট টাইম জব করে অনায়াসে প্রতি মাসে ১৫০০ থেকে ১৮০০ ইউরো পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে। তাই বলা যায় বেলজিয়ামে পার্টটাইম জব করে একজন স্টুডেন্ট অনায়াসেই তার পড়াশোনার খরচ সহ অন্যান্য খরচ চালিয়ে নিতে পারে।

শেষ কথা

বেলজিয়াম ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং সেনজেনভুক্ত একটি উন্নত দেশ। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জীবনযাত্রার মানের কারণে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী স্টুডেন্টরা বেলজিয়ামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আবেদন করে থাকে। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর অনেক স্টুডেন্ট উচ্চ শিক্ষার জন্য বেলজিয়াম গিয়ে থাকেন। তবে নিজের সামর্থ এবং সার্বিক পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে বিবেচনা করে এরপরে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url