অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসা; দাম ও কি কি কাজ পাওয়া যায় জানুন
অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসা; দাম ও কি কি কাজ পাওয়া যায় জানুন
ইউরোপের সেনজেনভুক্ত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য অস্ট্রিয়াতে অনেকেই কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান। অবস্থানগত দিক দিয়ে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর আশপাশে অনেকগুলো ইউরোপের ফার্স্ট ক্লাস দেশগুলোর অবস্থান। তাই আপনারা যদি বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়াতে কাজের ভিসা নিয়ে যেতে পারেন তাহলে সেসব উন্নত দেশগুলোতে পরবর্তীতে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন। অস্ট্রিয়ার সাথে যে দেশগুলো রয়েছে যেমন; জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লিসেনিস্টাইন, ইতালি, স্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ইত্যাদি যেগুলো ইউরোপের প্রথম সারির দেশ হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও অস্ট্রিয়া থেকে ইতালি যাওয়া ও অনেক সহজ। আজকের আর্টিকেলে আমরা অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
অস্ট্রিয়াতে বেতন কত?
অস্ট্রিয়াতে আপনি যেকোন কাজই করেন না কেন আপনার সর্বনিম্ন বেতন হবে বাংলাদেশি টাকায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা এবং আপনার যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা অবদিও ইনকাম করতে পারবেন। ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রিয়াতেও কিন্তু মোটামুটি ভালো বেতনে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই যারা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া একটি ভালো অপশন হতে পারে।
অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসার দাম
বাংলাদেশ থেকে কাজের ভিসায় অস্ট্রিয়া যেতে কত টাকা খরচ হয় সে সম্পর্কে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন। তবে খরচটা অনেকগুলো বিষয়ের উপরে নির্ভর করে যেমন; আপনি যদি সরকারি কোন মাধ্যমে কাজের ভিসা নিয়ে অস্ট্রিয়া যান তাহলে খরচ এক রকম হবে, আর যদি অন্যান্য কোন এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে ভিসা পেতে চান তাহলে খরচ আরেক রকম হবে। তবে সরকারিভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাজের ভিসার অফিসিয়াল দাম ১১৬ ইউরো যা বাংলাদেশী টাকায় ১৫ হাজার টাকা মত। সরকারিভাবে অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতে আপনার সর্বোচ্চ খরচ হবে 20 হাজার টাকা। অবশ্য একটি দুঃখজনক ব্যাপার হলো সরকারিভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া একটু কঠিন যে কারণে বাধ্য হয়েই আমাদেরকে কোন এজেন্সি বা দালালের কাছে যেতে হয়।
আপনি যদি কোন এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ার কাজের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পেতে চান তাহলে আপনাকে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। তাই খরচের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে অবশ্যই সরকারিভাবে ভিসা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত এরপরে যদি না হয় সে ক্ষেত্রে কোন বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করা যেতে পারে। তবে কোন এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করবেন সেটি ঠিক করার জন্য আপনাকে অবশ্যই সেই এজেন্সি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে এবং অন্যান্য এজেন্সি গুলো কত টাকা নিচ্ছে সে সম্পর্কে জেনে যেখানে কম টাকায় ভিসা পাবেন তাদের জন্য আবেদন করতে পারেন।
অস্ট্রিয়ার ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে
অস্ট্রিয়ার ভিসা প্রসেসিং এর জন্য সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে, ভিসা পাওয়াটা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার ওয়ার্ক পারমিটের উপরে। তবে আপনি যদি ওয়ার্ক পারমিট এনে এর পরে ভিসার জন্য আবেদন করেন আর যদি আপনার সমস্ত কাগজপত্র সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে আপনি মাত্র ২১ দিনের মধ্যে অস্ট্রিয়ার ভিসা হাতে পেতে পারেন। এই সময়টা আবেদনের সময় এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভরশীল তাই এক্ষেত্রে কিছুদিন কম বা বেশি সময় লাগতে পারে।
ওয়ার্ক পারমিট পেতে কতদিন সময় লাগবে
অস্ট্রিয়া তে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে যেগুলোতে আপনি ওয়ার্ক পারমিট নিতে পারবেন। তারা বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে আপনি আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করার পর ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপনি যদি তাদের কাজে যোগ্য হন তাহলে তারা আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট পাঠিয়ে দিবে।
ওয়ার্ক পারমিট পেতে কত টাকা খরচ হবে
অস্ট্রিয়ার কোম্পানিগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট পেতে সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ ইউরো যা বাংলাদেশে টাকায় হিসাব করলে ৮ থেকে 9 হাজার টাকা লাগবে।
অস্ট্রিয়াতে কোন কাজের চাহিদা বেশি
আপনি যখন কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে চাইবেন তখন আপনাকে অবশ্যই যে দেশে যেতে যাচ্ছেন সে দেশে কি কি কাজ পাওয়া যায় বা কি কি কাজের বেশি চাহিদা রয়েছে সে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। আপনার যদি কাজ শেখা না থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে কিন্তু আপনার কাজ খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়ে যাবে এবং অনেক ক্ষেত্রে বসেও থাকা লাগতে পারে। তাই আপনি যদি অস্ট্রিয়াতে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে অবশ্যই সেখানকার কাজের চাহিদা অনুযায়ী একটি কাজ শিখে তারপরে যেতে হবে।
কন্সট্রাকশন
অস্ট্রিয়াতে কনস্ট্রাকশন শ্রমিক হিসেবে প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে আপনি চাইলে সেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজে যেতে পারেন। কনস্ট্রাকশন এর কাজের মধ্যে রয়েছেঃ
- মেসন
- টাইলস
- বেক লেয়ার
- রড বাইন্ডার
- কারপেন্টার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- প্লাম্বার
- পাইপ ফিটিং
- ওয়েল্ডার
- সুপারভাইজার ইত্যাদি
ফ্যাক্টরি তে কাজ
অস্ট্রিয়া একটি শিল্প উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত তাই সেখানে ফ্যাক্টরিতে কাজের জন্য শ্রমিকের চাহিদা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবছরের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে মানুষ ফ্যাক্টরিতে কাজের উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়াতে যেয়ে থাকেন।
ফ্যাক্টরি সেক্টরে যেসব কাজের চাহিদা রয়েছেঃ
- গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি
- সোয়েটার ফ্যাক্টরি
- টেক্সটাইল
- ফার্নিচার ফ্যাক্টরি
হোটেল সেক্টরে কাজ
অস্ট্রিয়াতে হোটেল বা রেস্টুরেন্ট সেক্টরে প্রচুর পরিমাণে বিদেশী জনবল নিয়োগ করা হয়। আপনি যদি সল্প পরিশ্রমের কাজ খুঁজে থাকেন তাহলে আপনার জন্য হোটেল সেক্টরের কাজ ভালো অপশন হতে পারে। বেশি চাহিদা সম্পন্ন হোটেল সেক্টরের কাজগুলো হলোঃ
- হোটেল বয়
- ওয়েটার
- কফিশপ
- ক্যাফে
- বার
- ফার্স্ট ফুডের দোকান
- বাবুর্চি ইত্যাদি
আইটি সেক্টর
অস্ট্রিয়া তে সর্বোচ্চ বেতন দেয়া হয় যারা আইটি সেক্টরে কাজ করে তাদেরকে। এক্ষেত্রে একজন আইটি এক্সপার্টের বেতন তিন থেকে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে অনেক স্টুডেন্ট আছে যারা অস্ট্রিয়াতে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে গিয়ে পার্ট টাইম জব হিসেবে আইটি সেক্টরে কাজ করেন এবং ভালো পরিমাণে টাকা ইনকাম করে।
আইটি সেক্টরের কাজ গুলো হলোঃ
- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
- ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট
- হার্ডওয়ার
- আইটি ম্যানেজমেন্ট
- আইটি কনসাল্ট্যান্ট
- সিস্টেম সফটওয়্যার
- সিস্টেম সাপোর্ট
- মার্কেটিং অফ আইটি প্রোডাক্ট
শেষ কথা
আপনারা যারা কাজের উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়া যেতে চাচ্ছেন তাদের একটি বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিৎ সেটি হলো ভিসার দাম। অনেক এজেন্সি আছে যারা অস্ট্রিয়ার ভিসার দাম ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা অবদি নিয়ে থাকে কিন্তু আসলে খরচ এর অর্ধেক। অনেককে আবার ১২ লাখ টাকা দিয়েও অস্ট্রিয়ার ভিসা নিতে দেখা যায়। এছাড়াও আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার ওপরেই কিন্তু কাজ পাওয়া এবং বেতন নির্ভর করে তাই অবশ্যই নিজের অভিজ্ঞতা আছে এমন কাজের জন্য আবেদন করবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url