১ মাস থেকে ৪,৬,৭,৮ এবং ১১ মাস বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক ওজন


১ মাস থেকে ৪,৬,৭,৮ এবং ১১ মাস বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক ওজন

১ মাস থেকে ৪,৬,৭,৮ এবং ১১ মাস বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক ওজন

নবজাতক শিশুদের ব্যাপারে সাধারণত আমরা যে ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তিত থাকি সেটি হলো শিশুর স্বাভাবিক ওজন। একটি শিশু যদি তার বয়স অনুযায়ী আদর্শ ওজনের অধিকারী হয়ে থাকে তাহলে তাকে অনেকটাই সুস্থ বিবেচনা করা যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে একটি শিশুর ওজনও পরিবর্তিত হয়, এছাড়াও খাদ্য অভ্যাস এবং অন্যান্য কিছু বিষয়ের উপরেও শিশুর ওজন বাড়া বা কমা নির্ভর করে।

জন্মের পর থেকে বিভিন্ন বয়সী একটি শিশুর ওজন কত হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

১ মাসের শিশুর ওজন

এক মাস বয়সী শিশুর স্বাভাবিক ওজন ধরা হয় ৩.৫ থেকে ৪.৫ কেজি বা ৭.৭পাউন্ড থেকে ৯.৯ পাউন্ড পর্যন্ত। তবে ওজন যদি এর চাইতে কম হয় সেক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কিছু নেই কারণ অনেক সময় দেখা যায় শিশুর জন্মের কয়েকদিন পর বা এক সপ্তাহের মধ্যে তার ওজন ৫ থেকে ১০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে কারণ প্রসবের আগে শিশুর শরীর থেকে অতিরিক্ত যে তরল গুলো থাকে সেগুলো বের হয়ে যাবার কারণে ওজন কমে যেতে পারে।

এরপর জন্মের প্রথম মাসের মধ্যেই আবার ওজন বাড়তে শুরু করে। শিশু স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই কারণ এতে প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রকার পুষ্টি উপাদান উপস্থিত থাকে যা শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন। প্রথম মাসে একটি শিশুর ওজন প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম পর্যন্ত বাড়তে পারে যা সপ্তাহে দাঁড়ায় ১৪০ থেকে ২১০ গ্রাম পর্যন্ত।

৪ মাসের শিশুর ওজন

চার মাস বয়সী একটি শিশুর ওজন তার জন্মের পরের ওজনের প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে। এই সময়টাতে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয় যার কারণে ওজন দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই বয়সে একটি শিশুর গড় ওজন সাধারণত 5.5 থেকে 7 কেজি ( ১২ থেকে ১৫.৫ পাউন্ড) হয়ে থাকে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এই বয়সে যথাযথভাবে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা প্রয়োজন।

চার মাস বয়সী একটি শিশুর খাদ্য তালিকায় সাধারণত প্রধান থাকে মায়ের বুকের দুধ এবং পাশাপাশি ফর্মুলা মিল্ক প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান যেমন ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে যার সবগুলাই মায়ের বুকের দুধে উপস্থিত। শুধু তাই নয় মায়ের বুকের দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এর উপস্থিতি রয়েছে যা শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে ফর্মুলা মিল্কে ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানের উপস্থিতি থাকে, তাই পরিমাণ মতো বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা মিল্ক ও খাওয়ানো উচিত।

এছাড়াও এই বয়সে শিশুরা তাদের আশপাশের জিনিসপত্রের ব্যাপারে সচেতন হওয়া শুরু করে এবং তাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের বিকাশও ঘটতে থাকে। এই বয়সের শিশুদের বিভিন্ন জিনিস ধরা, শোনা এবং দেখার ক্ষমতার বিকাশ ঘটে এই বয়সেই, এছাড়া হাত পা নাড়ানো এবং বিভিন্ন আওয়াজের প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য এই সময়টাতে সঠিক যত্ন এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

৬ মাসের শিশুর ওজন

ছয় মাস বয়সী একটি শিশুর স্বাভাবিক ওজন সাধারণত 6.5 থেকে 8 কেজি ( ১৪ পাউন্ড থেকে ১৭.৫ পাউন্ড) পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই বয়সে এসে একটি শিশুর ওজন কিছুটা কমে যাওয়া স্বাভাবিক কারণ অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়টাতে শিশুর বৃদ্ধি একটু স্থবির প্রকৃতির হয়ে থাকে। শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ছাড়াও এই বয়সে শিশুর খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন ও লক্ষ্য করা যায়।

প্রধান খাদ্য হিসেবে ছয় মাস বয়সে একটি শিশুর ক্ষেত্রে বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা মিল্কি রাখা হয় তবে এর পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিভিন্ন খাবার যুক্ত করা হয়। কারণ এই বয়সে শিশুদের অতিরিক্ত শক্তির চাহিদা তৈরি হয় যা শুধুমাত্র দুধের মাধ্যমে পূরণ হয় না।

শুরুর দিকে শিশুর খাদ্য তালিকায় কিছু তরল খাবার যুক্ত করা হয় যেমন বিভিন্ন ফলের জুস, পাতলা সবজি ইত্যাদি। এর মাধ্যমে শিশুকে নতুন নতুন খাবারের সাথে পরিচিত করা হয়, তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য করা উচিত সেটি হল একটি নতুন খাবার খাওয়ানোর পর অন্ততপক্ষে তিন দিন শিশু শরীরের উপরে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোন এলার্জি বা অন্যান্য প্রতিক্রিয়া হয় কিনা সেটি দেখার জন্য। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ নবজাতকের শরীর অনেক সেনসিটিভ হয়ে থাকে যার কারণে গুরুত্বের সাথে এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

৭ মাসের শিশুর ওজন

সাত মাস বয়সী একটি শিশুর স্বাভাবিক ওজন ৭ থেকে ৮.৫ কেজি( ১৫.৫ থেকে ১৮.৭ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে। নতুন নতুন খাবার খাওয়া শেখা থেকে শুরু করে বসা এবং হামাগুড়ি দিতে শেখে এই বয়সেই শিশুরা যার কারণে খাবারের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ও হয়ে থাকে।

সাত মাস বয়স একটি শিশু তার আশপাশের জগৎ সম্পর্কে অনেক বেশি কৌতুহলেই হয়ে ওঠে এবং নিজে নিজেই তার চারপাশের জিনিসপত্র স্পর্শ করতে চেষ্টা করে। এছাড়াও নিজে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে এ জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সে খেয়ে যার জন্য তাদের শরীর থেকে ক্যালরি বাড়ানো হয় যেটি ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

৮ মাসের শিশুর ওজন

আট মাস বয়সী একটি বাচ্চার স্টান্ডার্ড ওজন ধরা ৭.৫ কেজি থেকে ৯ কেজি ( ১৬.৫ থেকে ১৯.৮ পাউন্ড) পর্যন্ত। এই বয়সে শিশুরা হামাগুড়ি দেয়ার পাশাপাশি আস্তে আস্তে দাঁড়াতে এবং হাঁটতে শেখে যার কারণে তাদের শরীরে ক্যালরি চাহিদা যেমন বেড়ে যায় অন্যদিকে অতিরিক্ত নড়াচড়া করার কারণে ক্যালরি খরচ ও হয়। তাই এ সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে বাচ্চাদের নতুন নতুন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারে অভ্যস্ত করা উচিত।

১১ মাসের শিশুর ওজন

এই বয়সে এসে একটি শিশু পরিপূর্ণভাবে হাঁটাচলা এবং নড়াচড়া শিখে যায় তাছাড়াও বেশিরভাগ খাবারই অল্প পরিমাণে খেতে পারে যার কারণে শিশুর খাবারের অনেক বৈচিত্রতা আনা সম্ভব হয়। এ বয়সে একটি শিশুর স্ট্যান্ডার্ড ওজন নির্ধারণ করা হয় ৮ কেজি থেকে ১০ কেজি ( ১৭.৬ পাউন্ড থেকে ২২ পাউন্ড) পর্যন্ত। তবে অনেক বাচ্চার ক্ষেত্রে দেখা যায় এই বয়সে এসে ওজন কিছুটা কম থাকতে পারে কারণ এই বয়সে শিশুরা সক্রিয়ভাবে হাঁটাচলার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি ব্যয় করে সেই তুলনায় যদি খাবার গ্রহণ কম করে তাহলে শিশুর ওজন কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই যদি এমনটা হয় তাহলে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর দিকে মনোযোগ দিন আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

শেষ কথা

একটি শিশুর ওজন থেকে শুরু করে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ সম্পূর্ণভাবে যে খাবারের উপরে নির্ভর করে ব্যাপারটা এমনও নয় খাবারের পাশাপাশি ঘুম এবং সঠিক যত্ন ও প্রয়োজন। জন্মের পর থেকে মায়ের দুধ এবং নির্দিষ্ট একটি বয়সে এসে ফর্মুলা মিলসহ অন্যান্য যে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার রয়েছে সেগুলোতেও শিশুকে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করাতে হবে। ওজন এবং বৃদ্ধির হার যে সব শিশুর জন্য একই রকম হবে বিষয়টা মোটেও এমন নয় কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে এটি নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবুও যদি আপনি ইনসিকিউরড ফিল করে থাকেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন তিনি আপনাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন যা আপনার শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশে সহায়ক হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url