হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত- খরচ,যোগ্যতা

হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত- খরচ,যোগ্যতা

হাঙ্গেরির স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত- খরচ,যোগ্যতা

আসসালামু আলাইকুম আশা করি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য হাঙ্গেরি তে যেতে হলে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন,কত টাকা খরচ হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকেই জানতে  চেয়েছেন। আজকের আর্টিকেলে মূলত আমরা সেই বিষয়েই জানতে চলেছি, আশা করছি শেষ অবদি মনোযোগ দিয়ে পড়লে হাঙ্গেরি তে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা দরকার সেগুলো জানতে পারবেন। তবে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনায় ফেরা যাক।

হাঙ্গেরি তে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে যেসব যোগ্যতা প্রয়োজন

নরমালি হাঙ্গেরি তে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে তেমন ঝামেলাপূর্ণ কোনো রিকোয়ারমেন্টস এর প্রয়োজন নেই। আপনি যদি ব্যাচেলর বা অনার্সের জন্য এপ্লাই করতে চান তাহলে এসএসসি এবং এইচএসসি কমপ্লিট থাকতে হবে। রেজাল্টের ব্যাপারে বলতে গেলে ৬০% মার্কস পেলেই আবেদন করা যায় অর্থাৎ ৫ এর মধ্যে ৩.৫০ রেজাল্ট থাকলেই আবেদন করতে পারবেন তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা ৩.০০ রেজাল্ট ও এপ্রুভ করে।

স্টাডি গ্যাপের ব্যাপার টা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওপরে কিছু ইউনিভার্সিটি আছে আপনার বয়স যদি ২৫ অবদি হয় তাহলে আপনি অনার্সের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। আবার কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যারা স্টাডি গ্যাপ অনার্স এর ক্ষেত্রে ৫ বছর এবং মাস্টার্স এর জন্য ১০ বছর এপ্রুভ করে থাকে। যাদের আইএলটিএস নেই তাদের ক্ষেত্রে ১৫-২০ মিনিটের একটি ভাইভা নিতে পারে ইংলিশে, এসবের পর যদি সিলেক্টেড হন তবে আপনি তাদের তরফ থেকে অফার লেটার পাবেন।

হাঙ্গেরি স্টুডেন্ট ভিসায় তে যেতে কত টাকা লাগে

হাঙ্গেরি তে যতগুলো পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার মধ্যে ম্যাক্সিমাম ইউনিভার্সিটি তেই এপ্লিকেশন ফি দিতে হয়। হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে পারে যেখানে হয়তো টিউশন ফি দিতে হয় না তবে তার সংখ্যা খুবই সীমিত। এপ্লিকেশন ফি সাধারণত ইউনিভার্সিটির ওপরে নির্ভর করে পরিবর্তন হয় তবে গড়ে ৮০ ইউরো থেকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি তেই এপ্লিকেশন ফি ২০০ ইউরো হয়ে থাকে ৷ এবং সবচাইতে বড় অসুবিধা হলো এই এপ্লিকেশন ফি টা নন-রিফান্ডেবল অর্থাৎ টিউশন ফি দিয়ে আবেদন করার পর আপনি যদি সিলেক্টেড না হন তবুও এই টিউশন ফি আর আপনি ফেরত পাবেন না।

হাঙ্গেরি তে পড়াশোনার খরচ কেমন?

আপনি যদি তাদের সমস্ত রিকোয়ারমেন্টস গুলি ফুলফিল করার পর অফার লেটার পেয়ে যান তারপর সামনে আসবে টিউশন ফিসের ব্যাপার টা যেটা সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় এবং অনেক বড় একটা এমাউন্ট খরচ ও হবে এক্ষেত্রে ৷ হাঙ্গেরি তে পাবলিক বা প্রাইভেট যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো রয়েছে সবগুলো তেই কিন্তু টিউশন ফি দিতে হয় তবে আপনি যদি স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন তবে আপনাকে টিউশন ফিস না ও দিতে হতে পারে। টিউশন ফি গড়ে ১৫০০ ইউরো থেকে শুরু করে ৪ হাজার ইউরো অবদি হতে পারে, এটি নির্ভর করবে আপনি কোন সাবজেক্টে পড়াশোনার জন্য সেখানে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে মেডিক্যাল, সাইন্টিস্ট,ইঞ্জিয়ারিং ইত্যাদি সম্পর্কিত যে সাবজেক্ট গুলা রয়েছে সেগুলো তে টিউশন ফি বেশি হয়ে থাকে কারন সেখানে ল্যাব চার্জ,গবেষনা ফি ইত্যাদির ব্যাপার রয়েছে। তবে বিজনেস বা আইটি রিলেটেড সাবজেক্ট গুলার ক্ষেত্রে টিউশন ফি একটু কম হয়ে থাকে। কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যেমন: পেস ইউনিভার্সিটি, বুদাপেস্ট মেট্রপলিটন ইউনিভার্সিটি,ওয়েকারলে বিজনেস ইউনিভার্সিটি এগুলো তে টিউশন ফি প্রতি সেমিস্টারে ২৫০০ থেকে ৪০০০ ইউরো অবদি হয়ে থাকে তবে এটি নির্ভর করবে আপনি অনার্স নাকি মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য যাচ্ছেন তার ওপরে।

কত টাকা জমা দিয়ে হাঙ্গেরি তে যাওয়া যায়?

কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যেগুলো তে এক সেমিস্টার বা ৬ মাসের টিউশন ফি অগ্রিম জমা দিয়ে যাওয়া যায় আবার কিছু আছে যেখানে দুই সেমিস্টার বা ১ বছরের টিউশন ফি দেশ থেকেই জমা দিয়ে যেতে হবে। ১ বছরের টিউশন ফি হিসেব করতে গেলে আনুমানিক ৫০০০ থেকে ৫৫০০ ইউরো অবদি হবে।

রেজিস্ট্রেশন ফি

রেজিস্ট্রেশন ফি বা এডমিনিস্ট্রেশন ফি যেটাকে বলে সেটাও ডিপেন্ড করে ইউনিভার্সিটির ওপরে তবে আনুমানিক ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো সর্বৌচ্চ দিতে হতে পারে৷

ইন্সুরেন্স ফি

ইন্সুরেন্স ফি আপনি চাইলে ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে দিতে পারেন আবার চাইলে ব্যক্তিগত ভাবে কোনো কোম্পানির সাথেও চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন সেটি আপনার ব্যাপার। ইন্সুরেন্স ফি ও গড়ে ১৫০ ইউরো সর্বৌচ্চ হবে। হাঙ্গেরি তে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হলে আপনাকে এই হেলথ ইন্সুইরেন্স পলিসি কিনতেই হবে এটা বাধ্যতামূলক।

একোমোডেশন বা থাকার খরচ

কিছু ইউনিভার্সিটি আছে তারা আপনার একোমোডেশন কন্ট্রাক্ট দিয়ে দিবে ভিসা পাও্যার জন্য এরপর সেখানে গিয়ে আপনাকে একোমোডেশন খুঁজে নিতে হবে। আবার কিছু ইউনিভার্সিটি আছে যারা আপনাকে কমপ্লিট একোমোডেশন প্যাকেজ দিয়ে দিবে এবং আপনাকের এর জন্য পেমেন্ট করতে হবে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ইউরো মতো যা রিফান্ডেবল অর্থাৎ আপনি যদি কোনো কারনে ভিসা না পান তাহলে পুরো টাকা আপনাকে রিফান্ড করা হবে তবে আপনি যদি প্রাইভেট একোমোডেশন নিয়ে থাকেন তাহলে সেই টাকা রিফান্ড পাবেন না। 

এম্বাসি ফি

এম্বাসি ফি এর কথা বলতে গেলে বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা মতো হবে যেটা আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে।

ট্রাভেল ইন্সুরেন্স

ট্রাভেল ইন্সুরেন্স আপনি ২-৩ মাসের জন্য নিতে গেলে খরচ পড়বে ৩০-৪০ ইউরো মতো।

এয়ার টিকেট

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি ভিসা পেয়ে যাবেন এবং বিমানের টিকেট কেটে চলে যেতে পারবেন। তবে টিকেটের দাম একুরেটলি বলা যাবে না এটা সিজনের ওপরে নির্ভর করে বিশেষ করে গরমের সময়ে টিকেট এর দাম বেশি হয়ে থাকে। তবে আপনি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি ওয়ান ওয়ে এয়ার টিকেট পেয়ে যাবেন।

শেষ কথা

মোট খরচের কথা যদি একবারে বলি তাহলে বাংলাদেশি টাকায় ৬ থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে আপনি বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় হাঙ্গেরি তে যেতে পারছেন। এই খরচের মধ্যে আপনার এপ্লিকেশন ফি, টিউশন ফি, বিমান ভাড়া,দুইটা ইন্সুরেন্স ফি সহ হয়ে যাচ্ছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো ৬ থেকে ৮ লাখ টাকার মধ্যে আপনি ইউরোপিয়ান সেনজেন ভুক্ত দেশে যেতে পারছেন সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া এটা অবশ্যই একটা ভালো অফার। বাংলাদেশ থেকে অনেকে অবৈধ ভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে সাথে নিরাপত্তার ঝুঁকি, শারিরীক কষ্ট থেকে শুরু করে ঝামেলার শেষ নেই, সেই দিকে বিবেচনা করে আপনি যদি নিরাপদ ভাবে ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশে যেতে চান কম খরচে আইএলটিএস এর ঝামেলা ছাড়া তাহলে এক কথায় বলা যায় হাঙ্গেরি আপনার জন্য সেরা চয়েজ হতে পারে।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url