হাঙ্গেরি কেমন দেশ? ইতিহাস,রাজধানী ও পর্যটন স্থান
হাঙ্গেরি কেমন দেশ?জেনে নিন ইতিহাস,রাজধানী ও পর্যটন স্থান
আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আমরা জানবো ইউরোপের একটি দেশ হাঙ্গেরি সম্পর্কে। হাঙ্গেরির সরকারি নাম রিপাবলিক অফ হাঙ্গেরি এটি মধ্য ইউরোপের একটি দেশ। এর উত্তরে রয়েছে স্লোভাকিয়া, উত্তর পূর্বে ইউক্রেন, পূর্বে রোমানিয়া, দক্ষিণে ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া এবং স্লোভেনিয়া আর পশ্চিমে রয়েছে অস্ট্রিয়া।আর পর্যটনের দিক দিয়ে চিন্তা করলে হাঙ্গেরি ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পর্যটন স্থান।
ইতিহাস
হাঙ্গেরির লোকজন নিজেদেরকে মজর হিসেবে পরিচয় দেয়, মজরেরা ছিলো এশিয়া থেকে আগত যাযাবর জনগোষ্ঠী। ১৪০০ শতকে বিদেশি শাসকেরা হাঙ্গেরি জয় করে। ১৪০০ এবং ১৫০০ শতাব্দী জুড়ে ইউরোপের বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী হাঙ্গেরি শাসন করে। এরপর ১৬০০ এবং ১৭০০ সালে হাঙ্গেরির অধিকাংশ জায়গাই ছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের দখলে, ১৭০০ সালের পরে এসে হাবসবুর্গ এরা পুরো হাঙ্গেরি দখলে নিতে সক্ষম হয়। এরা ১৮৬৭ সালে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে একটি দ্বৈত সাম্রাজ্য গঠন করে যার নাম দেয়া হয় অস্ট্রো হাঙ্গেরিও সাম্রাজ্য যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায় হাঙ্গেরি পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।ভাষা ও আদীম জনগোষ্ঠী
৯৩ হাজার ৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ৯৭ লাখ ৭২ হাজার মানুষ বসবাস করে। আয়তনের দিকদিয়ে এটি বিশ্বের ১০৮ তম দেশ। হাঙ্গেরির সরকারি ভাষা হাঙ্গেরিয়, যদিও এটি কেন্দ্রীয় ইউরোপে অবস্থিত তবুও এখানে ওই অঞ্চলের ভাষা প্রচলিত নয়। হাঙ্গেরির আশেপাশের দেশগুলোর ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার সাথে হাঙ্গারীয় ভাষার কোন মিল নেই। হাঙ্গেরিও ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ভাষা খামতি ও মংসি ভাষা প্রচলিত রয়েছে রাশিয়ার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যা থেকে অনুমান করা যায় হাঙ্গেরিয় প্রাচীন জনগোষ্ঠী এশিয়া থেকে এসেছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর চাইতে ইংরেজি ভাষার প্রভাব এই দেশটি তে অনেকটাই কম।
ধর্ম
দেশটির প্রধান ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্ম, সেখানকার মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী, এদের মধ্যে প্রায় ১৭ ভাগ মানুষ কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা খুবই কম মাত্র ০.৫ শতাংশ।
প্রকৃতি বা নদী ভালোবাসেন কিন্তু দানিউব নদীর নাম জানেন না এমন লোক হয়তো খুব কমই রয়েছেন। কৃষ্ণ সাগরের নীল ঘন পানির সাথে মিশে গেছে জগত বিখ্যাত এই নদীটি। দানিউব নদী বয়ে গেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের মধ্য দিয়ে তার মধ্যে হাঙ্গেরি অন্যতম।
বালাতন হ্রদ হাঙ্গেরির প্রধান হ্রদ গোটা মধ্য ইউরোপের মধ্যেও এটি বৃহত্তম হ্রদ। এটি একই সাথে হাঙ্গেরি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং স্পা, এর দক্ষিণ তীরের বালুকমায় বেলাভূমি গুলো সুপরিচিত।
হাঙ্গেরি ইতিহাসের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হিসেবে পরিচিত যার গুরুত্ব পৃথিবীর কাছে ক্রমশই বেড়ে চলেছে। দেশটির অর্থনীতি মূলত বৈদেশিক বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল। হাঙ্গেরিতে তেল ও গ্যাস ছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে তার মধ্যে কয়লা, লীগনাইট, অক্সাইড ইত্যাদি অন্যতম।
রাজধানী
বুদাপেস্ট হাঙ্গেরির রাজধানী এবং প্রধান শহর। এটি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক এবং সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় স্থল। বর্তমানে এটি ইউরোপের অষ্টম বৃহত্তম শহর যেটি দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত এবং সুন্দর শহরও বটে। শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে দানিউব নদীর তীরে অবস্থিত বুদাপ্রাসাদ, এন্দ্রেসি এভিনিউ, হিরোস স্কোয়ার এবং পাতাল রেলপথ। হাঙ্গেরির সংসদ ভবন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সংসদ ভবন হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর শুধুমাত্র এই শহরটিতে ৪৩ হাজার পর্যটন ঘুরতে আসেন। ইউরো মনিটরের এক জরিপ মতে পর্যটকদের কাছে এই শহরটি বিশ্বের মধ্যে ২৫ তম জনপ্রিয় শহর।আবহওয়া
দেশটিতে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিদ্যমান যার গড় তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা গ্রীষ্মকালে বেড়ে ২৫ ডিগ্রি সেলস শেষ পর্যন্ত যায় এবং শীতকালে সর্বনিম্ন মাইনাস ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে আসে।নদী ও হ্রদ
দানিউব নদী হাঙ্গেরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী হিসেবে বিবেচিত হয় কারণ গোটা হাঙ্গেরিকেই দানিউব নদীর অববাহিকা বলা যায়। নদীটি অস্ট্রিয়া থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছে এবং উত্তর পশ্চিমে হাঙ্গেরির সাথে স্লোভাকিয়ার সীমান্ত নির্ধারণ করেছে।প্রকৃতি বা নদী ভালোবাসেন কিন্তু দানিউব নদীর নাম জানেন না এমন লোক হয়তো খুব কমই রয়েছেন। কৃষ্ণ সাগরের নীল ঘন পানির সাথে মিশে গেছে জগত বিখ্যাত এই নদীটি। দানিউব নদী বয়ে গেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের মধ্য দিয়ে তার মধ্যে হাঙ্গেরি অন্যতম।
বালাতন হ্রদ হাঙ্গেরির প্রধান হ্রদ গোটা মধ্য ইউরোপের মধ্যেও এটি বৃহত্তম হ্রদ। এটি একই সাথে হাঙ্গেরি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র এবং স্পা, এর দক্ষিণ তীরের বালুকমায় বেলাভূমি গুলো সুপরিচিত।
জনসংখ্যা
জনসংখ্যা নিয়ে দেশটির সরকার অনেক চিন্তিত কারণ সেখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় একদিকে যেমন জন্মহার অনেক কম অন্যদিকে প্রতিবছর দেশটি থেকে ৩২০০০ করে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে অভিনব এক পদ্ধতি বের করেছে দেশটি সরকার, চারটি বা তার অধিক সন্তানধারী নারীরা পাবেন কর মুক্তির সুবিধা অর্থাৎ তাদের কোনো প্রকার কর দিতে হবেনা। সেনজেন ভুক্ত ইউরোপের সব দেশ যেখানে ভিসার ক্ষেত্রে অনেক কড়াকড়ি করছে সেখানে হাঙ্গেরি ভিসার ব্যাপারে একদম শিথিলতা বজায় রাখছে। বাংলাদেশের সাথে দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও অনেক ভালো।শিক্ষাব্যবস্থা
হাঙ্গেরিতে বর্তমানে 66 টি স্বীকৃত এবং গৃহীত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এগুলা হাঙ্গেরির সব ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোতে অবস্থিত। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রাণবন্ত আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ লালন করে এ কারণে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে হাঙ্গেরি সুনাম পুরো বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।চাষাবাদ
হাঙ্গেরিতে ৬৫ লাখ ১১ হাজার হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, রাই, বার্লি, আলু, ভুট্ট, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি। দেশটির ১৬ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে সবুজ বনভূমি।মুদ্রা ও অর্থনীতি
হাঙ্গেরির সরকারি মুদ্রার নাম ফোরিন্ত। এক ফোরিন্ত সমান বাংলাদেশি টাকায় ২৮ পয়সা এবং ০.২৩ ৩ ইন্ডিয়ান রুপি। দেশটির জিডিপি প্রায় ১৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৭,২৯৬ মার্কিন ডলার।হাঙ্গেরি ইতিহাসের অন্যতম সম্পদশালী দেশ হিসেবে পরিচিত যার গুরুত্ব পৃথিবীর কাছে ক্রমশই বেড়ে চলেছে। দেশটির অর্থনীতি মূলত বৈদেশিক বাণিজ্যের উপরে নির্ভরশীল। হাঙ্গেরিতে তেল ও গ্যাস ছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে তার মধ্যে কয়লা, লীগনাইট, অক্সাইড ইত্যাদি অন্যতম।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url