ফিনল্যান্ড- বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ সম্পর্কে সবকিছু জানুন


আত্নহত্যা প্রবন দেশ

ফিনল্যান্ড- বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ সম্পর্কে সবকিছু জানুন

ফিনল্যান্ড- যেটি পৃথিবী ব্যাপী সুখী দেশ হিসেবে পরিচিত যার রাষ্ট্রীয় নাম রিপাবলিক অফ ফিনল্যান্ড। এটি উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের বালটিক সাগরের তীরে অবস্থিত একটি স্ক্যানডিনেভিয়ান বা নর্ডিক অঞ্চল ভুক্ত একটি দেশ। দেশটির দক্ষিনে ফিনল্যান্ড উপসাগর, পশ্চিমে বথনিয়া উপসাগর, উত্তরে নরওয়ে, পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তর পশ্চিমে সুইডেনের অবস্থান। যদিও ফিনল্যান্ড ইউরোপের একটি নবীন রাষ্ট্র তবুও দেশটি অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে অনেক ঐতিহ্যবাহী একটি দেশ।

দেশটিতে প্রাচীর ঘেরা প্রাসাদের পাশাপাশি রয়েছে অত্যাধুনিক সব দালানকোঠা, বনভূমি যা দেশটির প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ যাকে ফিনল্যান্ডের সবুজ সোনা নামে ডাকা হয়। আর অর্থনৈতিকভাবে ও দেশটি বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শিল্প খাতে প্রভূত উন্নতি সাধনের মাধ্যমে তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বের অগ্রগামী দেশগুলোর তালিকায় নাম লিখিয়েছে। চলুন তবে ফিনল্যান্ড সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

ফিনল্যান্ডের ইতিহাস

ফিনল্যান্ডকে সাধারণত স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ধরা হয় তবে বহু শতাব্দী যাবত ফিনল্যান্ড বিরোধী শক্তি রাশিয়া এবং সুইডেনের মধ্যে একটি সীমান্ত দেশ হিসেবে ছিল। দীর্ঘ ৭০০ বছর যাবত সুইডেনের কাছে শাসিত হবার পর এটি ১৮০৯ সালে রাশিয়ার দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে রুশ বিপ্লবের পরে ১৯১৭ সালে এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর 1948 সালে রাশিয়া এবং ফিনল্যান্ড বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশ দুইটির মধ্যে দৃড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। ১৯৯১ সালের পর থেকে ফিনল্যান্ড ইউরোপ মুখী হতে শুরু করে এবং ১৯৯৫ সালে পূর্ণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য পদ লাভ করে।

ফিনল্যান্ডের আয়তন,ভাষা,জনসংখ্যা এবং ধর্ম

৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে বর্তমান জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ২৮ হাজার এবং আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৬৪ তম দেশ। ফিনিশ এবং সুইডিস দুটি ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় ভাষা তার মধ্যে দেশটির ৮৮ ভাগ মানুষ ফিনিশ ভাষায় কথা বলে। এছাড়াও সরকারিভাবে স্বীকৃত আরো কিছু আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে যেমন; সামী, রোমানি এবং ফিনীয় প্রতিকি ভাষা।

ফিনল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মালম্বী, বৃষ্টির প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। বাকিদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নাস্তিক আর বাকি এক শতাংশ অন্যান্য ধর্মালম্বী মানুষ রয়েছে। দেশটির পুরুষদের গড় আয়ু ৭৯ বছর মহিলাদের ৮৪ বছর।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী

ফিনল্যান্ডের রাজধানীর নাম হেলসিংকি, এছাড়াও এটি দেশটির প্রধান শহর হিসেবে বিবেচিত হয়। শহরটি দেশটির দক্ষিণ অংশে ফিনল্যান্ড উপসাগরের তীরে অবস্থিত। দেশ শহরটিতে দেশটির সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ বসবাস করে এবং ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর এটি। শহরটিতে বর্তমানে ৬ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ বসবাস করে। স্টকহোম এবং অসলোর পরে স্ক্যানডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এছাড়াও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বসবাসের উপযুক্ত শহরগুলোর তালিকায় এটি স্থান পেয়েছে।

আবহওয়া

ফিনল্যান্ডের আবহাওয়া স্থান ভেদে অনেক সহনীয় আবার বছরের কয়েকটি ঋতুতে তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। গ্রীষ্মকালে দৃষ্টির তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে ওঠা নামা করে। ফেব্রুয়ারি ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে ঠান্ডা মাস এ সময় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায় এবং এটি মাইনাস ৩ থেকে -30° সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে ওঠানামা করে। ফিনল্যান্ড একটি নিম্ন ভূমি অঞ্চল, কয়েক হাজার বছর আগেও দেশটি বরফে ঢাকা ছিল। বরফের চাপে ভূমি দেবে গিয়ে সেখানে বরফ গলা পানি থেকে হাজার হাজার হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। 

এজন্য ফিনল্যান্ডের মানুষেরা তাদের দেশকে “সুওমি” বলে ডাকে যার অর্থ হ্রদ বা জলাভূমির দেশ। এছাড়া দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র পাথুরের দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে কিছু কিছু দ্বীপে মানুষের বসবাস রয়েছে। বোথনীয়া উপসাগরের মুখে অবস্থিত অলান্দ দ্বীপপুঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফিনল্যান্ডের মেরু অঞ্চলে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় সবসময়ই দিন থাকে। এছাড়াও দেশটির মধ্যে ভাগের বনভূমিতে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা রোমাঞ্চকর অভিযানের টানে ছুটে আসেন।

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী এবং আত্নহত্যা প্রবন দেশ

এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। ২০২০ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন নেটওয়ার্ক বিভাগ ফিনল্যান্ডকে এই খেতাব দিয়েছে, যেটি ফিনল্যান্ড এখনো তাদের নিজের দখলে রেখেছে। দেশটির রাজধানী হেলসিংকি কে পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানবিক রাজধানী উপাধি দেয়া হয়। দেশটির জনগণ তাদের ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক জীবনে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। এছাড়াও দেশটি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম স্থিতিশীল, লিঙ্গ বৈষম্যহীন দেশগুলোর তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সূচকের তথ্য মতে ফিনল্যান্ডের অবস্থান পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত, যে যার ধর্ম সম্পূর্ণ বাধাহীন ভাবে পালন করতে পারে।

১৯৯০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফিনল্যান্ড পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আত্মহত্যা প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। এই তালিকায় শিশুস্থানে ছিল হাঙ্গেরি এরপরেই ছিল ফিনল্যান্ডের অবস্থান। তবে বর্তমানে এসে ফিনল্যান্ডের আত্মহত্যা প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে যা ১৯৯০ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যাভবন দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ডের অবস্থান ২২ তম। তাছাড়াও সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে দেশটির আবহাওয়া বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট প্রতিকূল।

ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা

ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে সেটি পুরো বিশ্বের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশের শিশুরা 6 বছর বয়সেই প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয় না বরং প্রায় ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত তাদেরকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় রাখা হয় এমনকি তাদেরকে কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার আওতায় ও আনা হয় না। যেখানে আমাদের দেশের শিশুদের পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সেই গ্রেট ওয়ান বা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করার পর 10 থেকে 11 বছর বয়সেই তাদেরকে মাধ্যমিক শিক্ষার আওতায় আনা হয় এবং ১৬ বছর বয়সে একজন শিক্ষার্থী তার মাধ্যমিক জীবন শেষে কলেজে ভর্তি হয়ে যায় সেখানে ফিনল্যান্ডের এই মুক্তশিক্ষা ব্যবস্থা আসলেই ঈর্ষণীয়। পৃথিবীতে একমাত্র ফিনল্যান্ডেই এরকম শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।

জাতীয় এবং জনপ্রিয় খেলা

ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা আইস হকি এবং জাতীয় খেলা “পেসাপাল্লো” নামক বেজ বলের অনুরূপ একটি খেলা।

ফিনল্যান্ডের অর্থনীতি

অর্থনৈতিকভাবে ফিনল্যান্ড অনেক শক্তিশালী এবং বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। ফিনল্যান্ডের অর্থনীতি পুরোটাই শিল্পনির্ভর জন প্রতি উৎপাদন যুক্তরাজ্য ফ্রান্স সহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতই। এছাড়া সেবাখাত ও দেশটির অর্থনীতির মূল খাত হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও দেশটির অর্থনীতি শিল্প জাতীয় পণ্যের উপরেও অনেকাংশে নির্ভর করে। এছাড়াও গবেষণা কে দেশটির উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির জিডিপি ২৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪৮ হাজার ৪৬১ মার্কিন ডলার।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url