ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসা খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আসসালামুয়ালাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে ডেনমার্ক যেতে চান। ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কত টাকা খরচ হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকের আর্টিকেলে ডেনমার্কে স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে মোট কত টাকা খরচ হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি । আর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ অবদি মনোযোগ সহকারে পড়লে একদম শুরু থেকে শেষ অবদি যাবতীয় খরচ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সাধারণত যে কোন দেশে স্টুডেন্ট ভিসার খরচের ব্যাপারটা আলোচনা করতে গেলে কিছু ধাপ সামনে চলে আসে। তাই আলোচনার সুবিধার্থে এবং আপনাদেরকে সহজ ভাবে বোঝানোর স্বার্থে আজকের সম্পূর্ণ আলোচনার বিষয়টি আমি পাঁচটি ধাপে সাজিয়েছি যেগুলা ক্রমানুসারে আলোচনা করা হয়েছে।
এপ্লিকেশন খরচ
একদম শুরু থেকে বলতে গেলে স্টুডেন্ট ভিসায় যে কোন দেশে যাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হলো অ্যাপ্লিকেশন খরচ। আমরা সবাই জানি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আবেদন করার ক্ষেত্রে এপ্লিকেশন ফি বাধ্যতামূলক ভাবে পরিশোধ করতে হয়। ডেনমার্কের পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোতে এপ্লিকেশন ফি সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ ইউরোর মধ্যে যা বাংলাদেশী টাকায় ১৩ হাজার থেকে 26 হাজার 500 টাকা পর্যন্ত সর্বোচ্চ হতে পারে। তবে এখানে একটি সুবিধা হচ্ছে যদি কোন স্টুডেন্ট অ্যাপ্লিকেশন করার পর সেখানে পড়াশোনার সুযোগ পায় তাহলে ইউনিভার্সিটি তে গিয়ে প্রথম সেমিস্টার কমপ্লিট করার পর এই application free টা ফেরত পায়। এপ্লিকেশন করার পর সাধারণত ইউনিভার্সিটি থেকে অফার লেখার পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
টিউশন ফি
অফার লেটার পাওয়ার পরের স্টেপ টা হল টিউশন ফি জমা দেয়া। ডেনমার্কের স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে অফার লেটার পাওয়ার পর প্রথম সেমিস্টারের টিউশন ফি আগেই জমা দিতে হয়। টিউশন ফি প্রদানের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি থেকে একটি ইনভয়েস বা রিসিভ প্রদান করে সে অনুযায়ী টিউশন ফি এর অ্যামাউন্ট হয়। এই ইনভয়েসে কত টাকা জমা দিতে হবে, কত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং কোন একাউন্টে জমা দিতে হবে এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। এই ফার্স্ট সেমিস্টারের টিউশন ফি টা জমা দেয়ার পর সাধারণত ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনাল এডমিশন লেটার ইস্যু করে থাকে।
তবে কেউ যদি স্কলারশিপ পেয়ে থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন ফি জমা দিতে হয় না, তার ক্ষেত্রে অটোমেটিক্যালি ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইনাল এডমিশন লেটার চলে আসে।
টিউশন ফি কত টাকা জমা দিতে হবে সেটি নির্ভর করবে ইউনিভার্সিটি এবং সাবজেক্ট এর উপরে।
ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে টিউশন ফি কম বা বেশি হয়ে থাকে। তবে পাবলিক ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে টিউশন ফি সর্বনিম্ন ২৫০০ ইউরো থেকে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ইউরো পর্যন্ত হতে পারে যা বাংলাদেশি টাকায় ৩ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৪ লক্ষ ৬৩ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি সাবজেক্ট গুলার ক্ষেত্রে টিউশন ফি বেশি হয়ে থাকে। আর বিজনেস ফ্যাকাল্টির সাবজেক্ট গুলার ক্ষেত্রে টিউশন ফি গড়ে ৩০০০ থেকে ৫০০০ ইউরো এর মধ্যে হয় যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে চার লাখ থেকে 6 লাখ টাকার মধ্যে।
ভিসা প্রসেসিং ফি
টিউশন ফি জমা দেয়ার পরের কাজ হচ্ছে ভিসা প্রসেসিং এর জন্য এপ্লাই করা। ভিসা প্রসেসিং এর প্রথম ধাপটি হলো কেস আইডি অর্ডার ক্রিয়েট করা যেটার জন্য একজন স্টুডেন্টকে পে করতে হবে বাংলাদেশী টাকায় ২৮ হাজার টাকা মত আর যদি ডিপেন্ডেন্ট ফ্যামিলি মেম্বার সাথে যেতে চান তাহলে তার জন্য দিতে হবে ২৪ হাজার ২২৫ টাকা মত। এই খরচটা মূলত দিতে হয় ডেনিস গভমেন্টকে আমাদের যে ইমিগ্রেশনটা কমপ্লিট হবে সেটার ফি বাবদ। বাংলাদেশে ভিসা প্রসেসিং এর জন্য টাকা জমা দিতে হয়, এখানে মোট ২১ হাজার ৩৫০ টাকা মতো লাগে। এছাড়াও সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১৪১০ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করতে হয়।
ব্যংক স্টেটমেন্ট
ডেনমার্কের ভিসা আবেদনের জন্য সাধারণত সিঙ্গেল স্টুডেন্টদের ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতেই হয় না শুধুমাত্র ডিপেন্ডেন্ট এর জন্য দেখাতে হয়। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিন্তু আসলে কোন খরচ না সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংক একাউন্টে জমা রাখতে হয়। ডেনিশ ইমিগ্রেশন এর তথ্য মতে এটি সাধারণত ডিপেন্ডেন্ট এর লিভিং কস্ট হিসেবে এক বছরের জন্য জমা রাখতে হয় যেটি বর্তমানে কনভার্শন রেট অনুযায়ী ১৪ লক্ষ ৮ হাজার ৮১৫ টাকা মত। ভিসা প্রসেসিং এর সময় ব্যাংক স্টেটমেন্টের সাথে ব্যাংক সলভেন্সিও দিতে হয় এদের জন্য ব্যাংক সার্ভিস চার্জও রাখে যেটি ২০০ থেকে ৬০০ টাকার মতো হয়ে থাকে।
বিঃদ্র উপরের সমস্ত ইনফরমেশন গুলা ডেনিস ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট থেকে কালেক্ট করা হয়েছে, আপনার যদি এর বাইরে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে আপনি সরাসরি তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন।
এগুলো ছিল ভিসা হওয়ার আগ পর্যন্ত যাবতীয় খরচ, এরপরে আসবে ভিসা হাতে পাওয়ার পরের খরচ সমূহ। নরমালি ভিসা হাতে পাওয়ার পর বিমানের টিকিট ছাড়া আর তেমন বাধ্যতামূলক কোনো খরচ নেই। তবে বিমানের টিকেট খরচ কেমন হবে সেটি নির্ভর করবে এয়ারলাইন্স এবং আপনি কোন ক্লাসের টিকেট নিবেন সেটার উপরে। আপনি যদি টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইকোনমিক ক্লাসের টিকেট নিতে চান তাহলে খরচ হবে 58000 টাকা মত।
অন্যান্য কিছু খরচ
উপরে বর্ণিত খরচের পাশাপাশি কিছু অপশনাল খরচ রয়েছে যেমন শপিং। অবশ্য এটা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার কিন্তু তবুও খরচের কথা বলতে গেলে এটি সামনে চলে আসে। নরমালি শপিং ছাড়া কেউই বিদেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করেন না কারণ বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ওয়েদার কখনোই বিদেশের সংস্কৃতি বা ওয়েদারের সাথে মিলবে না। যেমন বাংলাদেশে কিন্তু খুব বেশি শীত না থাকলেও ডেনমার্কে কিন্তু প্রচুর পরিমাণে শীত পড়ে থাকে। তাই অন্যান্য কিছুর জন্য খুব বেশি খরচ না করলেও আপনার শীতের কাপড়ের জন্য কিছু পরিমাণ খরচ করতেই হবে বিশেষ করে জুতা এবং জ্যাকেট বা অন্যান্য শীতের কাপড়ের জন্য।
শেষ কথা
উপরের আলোচনা গুলো যদিও ডেনমার্ক ইমিগ্রেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নেয়া তবুও খরচ বা অন্যান্য ব্যাপারগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হতে পারে। আর্টিকেলটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের ডেনমার্কের ভিসা অ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে সেখানে পৌঁছানো পর্যন্ত কত টাকা খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে আইডিয়া দেয়া। আর্টিকেলটি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা করি এই বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তবে আপনি যখন ভিসা এপ্লিকেশন করবেন তখনকার ডলার রেট বা বাংলাদেশের টাকার মান ইত্যাদি বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে অ্যাপ্লিকেশন ফি বা অন্যান্য খরচ গুলার তারতম্য হতে পারে তাই এপ্লিকেশন করার আগে একটু যাচাই-বাছাই করে নিবেন।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url