আলবেনিয়া তে কি কি কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন


আলবেনিয়া তে কি কি কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন

আলবেনিয়া তে কি কি কাজ পাওয়া যায় এবং বেতন কত জানুন

আসসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত নন সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে আলবেনিয়া অন্যতম। বাংলাদেশী প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই আলবেনিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চান। আজকের আর্টিকেলে আলবেনিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব আশা করছি মনোযোগ সহকারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

আলবেনিয়াতে কি কি কাজের চাহিদা রয়েছে কত, টাকা বেতন পাবেন, থাকা এবং খাওয়ার খরচ কত হবে ইত্যাদি বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

আলবেনিয়া তে কি কি কাজ পাওয়া যায়?

আলবেনিয়ার বর্তমানে সবচাইতে চাহিদা সম্পন্ন কাজ হল দক্ষ শ্রমিক। তাদের আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো পেতে যে যোগ্যতা দরকার সেগুলো অনেকেই ফুলফিল করতে পারেন না তাই তুলনামূলক কম যোগ্যতা প্রয়োজন হয় এমন কিছু কাজের তথ্যই তুলে ধরবো। অন্যদিকে তুলনামূলক সাধারণ কিছু কাজ যেমন, নির্মাণ শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরিতে কাজ ইত্যাদি সেক্টরে ও বিদেশি কর্মীদের চাহিদা রয়েছে।

তবে আলবেনিয়াতে সবচেয়ে সহজে আপনি রেস্টুরেন্ট এর কাজ পাবেন কারণ তারা তাদের পর্যটন খাতকে আরো বেশি উন্নত করতে চাচ্ছেন যার জন্য হোটেল বা রেস্টুরেন্টে প্রচুর পরিমাণে কর্মী প্রয়োজন হচ্ছে। তবে আলবেনিয়াতে কিন্তু ফুড ডেলিভারির কাজের খুব বেশি চাহিদা নেই, দুই একটি শহর বাদে আর কোথাও সাধারণত ফুড ডেলিভারি কাজের জন্য লোক নিয়োগ করা হয় না। যাও কিছু পরিমাণ কর্মী দরকার হয় তবে সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে শ্রমিক কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। তাই আপনি রেস্টুরেন্টের কাজের কথা চিন্তা করে থাকলে ফুড ডেলিভারির কাজের চিন্তা করবেন না।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরি রয়েছে যেগুলোতেও শ্রমিক কর্মী চাহিদা অনেক, আপনারা চাইলে এ কাজেও আসতে পারেন। বিগত বছর গুলিতে বাংলাদেশ থেকে যারা আলবেনিয়া তে গেছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হয় রেস্টুরেন্ট নয়তো বা ফ্যাক্টরির কাজে গেছে। এছাড়াও সেজন্য আর বিভিন্ন কাজ যেমন কৃষি ভিসায় ও বাংলাদেশ থেকে অনেকে গিয়ে থাকেন।

কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজের জন্য কর্মীর চাহিদা কমবেশি সব দেশেই রয়েছে, তেমনটা আলবেনিয়াতেও প্রচুর পরিমাণে বিদেশি কনস্ট্রাকশন শ্রমিক কাজ করে। কনস্ট্রাকশনের বিভিন্ন খাত রয়েছে যেমন ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার ইত্যাদি খাতে আপনি চাইলে কাজ করতে পারবেন।

আলবেনিয়া তে কাজের বেতন

যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বেতনের ব্যাপারটা সবচেয়ে আগে মাথায় আসে, তবে এবার চলুন জেনে নেয়া যাক আলবেনিয়াতে বিভিন্ন কাজের জন্য আপনি কত টাকা বেতন পাবেন। তবে আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে, আমরা মনে করে থাকি যে দেশে বেতন বেশি সে দেশে যাওয়ায় মনে হয় ভালো হবে। তবে এখানে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো আপনি যে দেশে যান না কেন সেখানে আপনি কত টাকা বেতন পাচ্ছেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনি কত টাকা সেভ করতে পারছেন। 

অর্থাৎ উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক আপনি কোন একটি দেশে কাজের জন্য গিয়ে মাসে দুই লাখ টাকা ইনকাম করছেন কিন্তু এক টাকাও সেভ করতে পারছেন না। আপনার জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি বা অন্যান্য যেকোনো কারণেই হোক না কেন যদি এমনটা হয় তাহলে ওই দেশে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ আপনি আর থেকে দশ লাখ টাকা খরচ করে কোন একটি দেশে গিয়ে যদি সে টাকা ইনকাম করেন তার সবটাই খরচ হয়ে যায় তাহলে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই প্রবাসে কাজের ক্ষেত্রে এমন দেশ নির্বাচন করুন যেখানে বেতন বেশি হওয়ার সাথে সাথে জীবনযাত্রার খরচ কম।

আলবেনিয়ার সরকার কর্তৃক নির্ধারিত যে কোন কাজের বেতন সর্বনিম্ন ৩৮৫ ইউরো যা বর্তমানে বাংলাদেশী টাকায় ৫১ হাজার টাকা মত। তবে ওভারটাইমের মাধ্যমে আরো এক থেকে দেড়শ ইউরো ইনকাম করা সম্ভব। অতএব আপনি যদি এটার মতো পরিশ্রম করে মনোযোগ সহকারে কাজ করেন তাহলে প্রতি মাসে গড়ে ৫০০ থেকে ৫৫০ ইউরো পর্যন্ত ইনকাম করতে পারবেন যা বাংলাদেশী টাকায় ৬৬ থেকে ৭২ হাজার টাকা মত।

তবে বড় শহরের তুলনায় ছোট শহরগুলোতে ইনকাম একটু কম কিন্তু লিভিং কস্ট বিবেচনায় ছোট শহরগুলো খরচ কম হওয়ার কারণে এগিয়ে থাকবে।

কোম্পানি থেকে কি থাকা খাওয়া খরচ দেবে?

আরেকটি কমন প্রশ্ন হল আলবেনিয়াতে কোম্পানিগুলা থাকা খরচ বা খাওয়া খরচ দেয় কি না। খুশির সংবাদ হলো আলবেনিয়ার প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের শ্রমিক-কর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। কোম্পানি থেকে থাকার জায়গার পাশাপাশি খাবার খরচ দিয়ে থাকে যা সাধারণত সাপ্তাহিক হিসেবে দেয়া হয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতি মাসেও দিতে পারে। কোম্পানি থেকে সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ ইউরো পর্যন্ত খাবার খরচ হিসেবে দিয়ে থাকে অর্থাৎ মাসে 100 থেকে 120 ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় ১৩ থেকে ১৬ হাজার টাকা মতো। এই টাকা দিয়ে আপনি অনায়াসে আলবেনিয়াতে পুরো মাস খাওয়া খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন এবং চাইলে এখান থেকে কিছু সেভ ও করা সম্ভব।

যেহেতু থাকা এবং খাওয়া খরচ বাবদ কোম্পানি একটি বড় এমাউন্টের টাকা দিয়ে থাকে যেটি আপনি বেতন হিসেবেও ধরতে পারেন।

শেষ কথা

বেতন এবং খরচের কথা চিন্তা করলে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে আপনি আলবেনিয়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ইত্যাদি দেশগুলোতে অনেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা ইনকাম করলেও সেখানে থাকা এবং খাওয়া খরচ সহ জীবন যাপনে যাবতীয় খরচ অনেক বেশি হওয়ার কারণে তারা খুব বেশি টাকা সেভিংস করতে পারে না। 

 কিন্তু অন্যদিকে আলবেনিয়াতে আপনি যদি মূল বেতনের সাথে থাকা এবং খাওয়া খরচ বাবদ কোম্পানি যে টাকা টা দিবে সেটা যোগ করেন তাহলে মোট বেতন দাঁড়ায় 85 থেকে 90 হাজার টাকা। যেহেতু কোম্পানি থেকে ঢাকা এবং খাওয়া খরচ দিয়ে থাকে তাই মূল বেতন থেকে আপনাকে খুব বেশি টাকা খরচ করতে হবে না বাকিটা আপনি চাইলে পরিবারের জন্য দেশে পাঠাতে পারেন অথবা নিজে সঞ্চয় করতে পারেন।

আর্টিকেলটি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আলবেনিয়াতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে যাওয়া উচিত হবে কিনা সে সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকার কথা না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url