অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি গোলাপের উপকারীতা জানেন কি?
অপরূপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি গোলাপের উপকারীতা জানেন কি?
আপনি কি মনে করেন গোলাপ শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের জন্যই সারা বিশ্বব্যাপি এতো সমাদৃত হয়ে আসছে? যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আপনি সম্ভবত ভূল করছেন। বন্ধুত্ব,ভালোবাসা এবং শান্তির প্রতিক হিসেবে খ্যাত এই ফুলটির ওষধি গুন সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। ইতিহাস থেকে জানা যায় অতীতের রাণী- রাজকুমারী রা গোলাপের পাপড়ি ভেজানো পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং রূপচর্চার এক নির্ভরযোগ্য অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতেন।
শুধু তাই নয় গোলাপের চায়ের উপকারীতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চই মানুষের মুখে অনেক কিছু শুনে থাকবেন। গোলাপ একাধারে রূপচরচা,যৌনশক্তি বৃদ্ধি,শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো,মানষিক অবসাদ দূর করা সহ আরো অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে চলুন এই অসাধারন ফুলের যাবতীয় গুনাগুন সম্পর্কে একটি মাত্র আর্টিকেলের মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক।
ত্বকের যত্নে গোলাপের ব্যবহার
ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করতে
প্রতিদিনের কাজে বাইরে ঘোরাঘুরির কারনে আমাদের সবার ত্বকেই কম বেশি ময়লা জমে থাকে যা নরমাল সাবান বা ফেসওয়াশের মাধ্যমে দূর করা যায় না। এর জন্য নির্দিষ্ট উপাদান সমৃদ্ধ ফেইস প্যাকের দরকার হয়। আপনি চাইলে গোলাপের পাপড়ির সাথে আরো কিছু উপাদান মিক্স করে ত্বকের সাধারণ কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য নিজেই ফেইসপ্যাক বানিয়ে নিতে পারেন।
ত্বক কোমল রাখতে গোলাপের পাপড়ি ও মধুর ফেইসপ্যাক
আপনার ত্বকে যদি কমলতার অভাব থাকে তবে এই ফেইসপ্যাকটি ট্রাই করে দেখতে পারেন আশা করি খুব ভালো ফলাফল পাবেন। গোলাপের পাপড়িতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ত্বকের কোমলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। অন্যদিকে মধু তে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান উপস্থিত রয়েছে যা ত্বক কে নরম ও কোমল রাখে।
এই প্যাকটি বানানোর জন্য কিছু পরিমান গোলাপের পাপড়ি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে পানিতে ৩-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পরে তুলে নিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় পরিমানে মধু এবং গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট করে আধা ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজ থেকে বের করে মুখে সুন্দর ভাবে লাগিয়ে ২০ মিনিট মতো রেখে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন আর ম্যাজিক দেখুন। এই প্যাকটি যেমন ত্বকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে তেমনি ত্বককে নরম ও কোমল রাখে।
গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ময়েশ্চারাইজার ফেইসপ্যাক
গোলাপের পাপড়ির সাথে নারিকেলের দুধ আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ময়েশ্চারাইজার। মসৃণ ত্বক কার না ভালো লাগে? আবার যদি সেটা হয় গোলাপ ফুলের মতো সুঘ্রাণ ফুলের সাহায্যে তাহলে তো কথাই নেই। এই প্যাকে আপনি ভিটামিন ই পেয়ে যাবেন যা ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে অন্যদিকে গোলাপের পাপড়ির গুনাগুন তো থাকছেই।
এই প্যাক বানাতে হলে প্রথমে গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে নিতে হবে এরপর ৪ টেবিল চামচ নারিকেলের দুধ এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন (এই পরিমান মিশ্রন দিয়ে একবার মুখে মাখতে পারবেন)। এরপর মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে যতক্ষন না শুকিয়ে আসছে রেখে দিন। শুকয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন, ব্যাস প্রাকৃতিক উপায়ে ময়েশ্চারাইজড ত্বক উপভোগ করুন।
ব্রণ-পিম্পল সারাতে গোলাপের পাপড়ি
ব্রণ-পিম্পল সবার ফেইসের একটা সাধারন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে ব্রণ বা পিম্পল এর চিকিৎসার নামে বিভিন্ন প্রকার কেমিক্যাল ইউজ করেন এবং সেটি একপর্যায়ে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। যাদের ব্রণ বা পিম্পল এর সমস্যা রয়েছে তারা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে এই অসাধারণ মিশ্রণটি বানিয়ে মুখে লাগিয়ে দেখতে পারেন আশা করি ফল পাবেন।
গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে তার সাথে কিছু পরিমাণ লেবুর রস যোগ করে ব্রণের স্থানে লাগালে ব্রণ এবং পিম্পল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও গোলাপের পাপড়ির সাথে আলু এবং নিমপাতা বেটে মিক্স করে সপ্তাহে এক থেকে দুইবার মুখে লাগাতে পারেন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে
অনেক সময় ঘুমের সমস্যা বা অন্যান্য কারণে আমাদের মুখে বিশেষ করে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যেটি চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট করে ফেলে। আপনি চাইলে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গোলাপের পাপড়ির মাধ্যমে এ সমস্যাটি দূর করতে পারেন। একটি পাত্রে সামান্য পরিমাণ পানি নিয়ে তাদের গোলাপের পাপড়ি কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সেই পানি চোখের নিচে সুন্দরভাবে নিয়মিত লাগালে চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল খুব সহজেই দূর হবে।
চুলের যত্নে
আপনার চুলের আগা ফাটা বা অমসৃণ? এই সমস্যার সমাধান মিলতে পারেন গোলাপের পাপড়ির মাধ্যমে। চুলের যত্নে আমরা কতইনা শ্যাম্পু কন্ডিশনার বা অন্যান্য কেমিক্যাল ব্যবহার করি কিন্তু দুঃখজনক হলো এই কেমিক্যাল চুলের উপকারের সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও করে থাকে। এই সমস্যার সমাধানে গোলাপের পাপড়ি এক অনন্য উপায়।
চুল ফেটে যাওয়ার রোগ থাকলে এক বাটি কুসুম গরম পানিতে এক থেকে দুইটি গোলাপের তাজা পাপড়ি ছেড়ে দিন কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর তাতে দুই টেবিল চামচ মধু এবং দুই টেবিল চামচ বাদামের তেল যুক্ত করুন। এরপর মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলের আগায় মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
আপনি চাইলে গোলাপের পাপড়ি শুকিয়ে গুরা করে তাতে নারকেল তেল মিক্স করেও চুলের আগায় লাগাতে পারেন এতে ভালো ফল পাবেন।
গোলাপের পাপড়ির ওষধি গুন
রূপচর্চার পাশাপাশি গোলাপের ঔষধি গুণ ও কিন্তু কম নেই। শুকনো গোলাপের পাপড়ি পানির সাথে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে ওঠে। এসিডিটি বা আলসারের সমস্যা? কৃত্রিম ঔষধ বাদ দিয়ে শুকনো গোলাপের পাপড়ি গুঁড়ো করে অল্প পরিমাণে দুধের সাথে মিশিয়ে পান করুন গ্যাস্ট্রিক এবং আনসার থেকে মুক্তি পাবেন।
ডায়রিয়া বা কষ্টকাঠিন্য রোগে ভুগছেন? শুকনো গোলাপের পাপড়ি হতে পারে সহজ সমাধান। হারবাল চা তৈরিতে বর্তমানে গোলাপের পাপড়ির ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এছাড়া অনেকে বিভিন্ন মসলার সাথে অল্প পরিমাণে শুকনো গোলাপের পাপড়ির গুড়া ব্যবহার করেন।
যাদের গলা খুসখুস করে বা ঠান্ডার সমস্যার কারণে অতিরিক্ত কাশি বা গলা ব্যথা হয় তারা গোলাপের পাপড়ি মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে কুলি করলে সুফল পেতে পারেন। এতে থাকা ভিটামিন সি ঠান্ডার সমস্যার সমাধান করে থাকে। এছাড়া আপনি চাইলে শুকনা পাপড়ির গুড়া দিয়ে চা ও খেতে পারেন।
রোজ অয়েল বা গোলাপের তেলের নাম আশা করি শুনেছেন বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে এবং পৃথিবীব্যাপী এর ব্যবহার ও অনেক। আপনি চাইলে ঘরে বসে রোজ অয়েল বানিয়ে নিতে পারেন এর জন্য শুকনা গোলাপের পাপড়ির সাথে পরিমাণ মতো নারকেল তেল দিয়ে অল্প আছে চুলায় জাল করুন এবং রঙ পরিবর্তন হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলুন ব্যাস হয়ে গেল হোমমেড রোজ অয়েল।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে চিন্তায় আছেন? সেক্ষেত্রে সাহায্য নিতে পারেন সহজলভ্য গোলাপের পাপড়ির। পাপড়িতে থাকা চোখ উপাদান দেহের মেটাবলিজম উন্নত করতে সাহায্য করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত গোলাপের পাপড়ির গুরার সাথে মধু এবং দারচিনির গুড়া মিক্স করে খেলে অতিরিক্ত চর্বি থেকে মক্তি মিলবে।
পাইলসের সমস্যার সমাধানেও গোলাপের পাপড়ি অনন্য ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ফাইভার এবং পানি পাইলসের ব্যথা দূরীকরণে এবং রক্তক্ষরণের সমস্যার সমাধান করে। গোলাপি রঙের চান? গোলাপের পাপড়ির সাথে কয়েক ফোটা মধু এবং দুধের সর মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়মিত ঠোঁটে লাগান কোনপ্রকার লিপ বাম ছাড়াই আপনার ঠোঁট থাকবে গোলাপি।
উপসংহার
গোলাপ দিয়ে রূপচর্চার ব্যাপারটা বহুল প্রচলিত থাকলেও এর ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই অজ্ঞত। রঙে গন্ধে পরিপূর্ণ এই অসম্ভব সুন্দর ফুলটি আমাদের চারপাশে অনেকে দেখা যায় তবে আমরা শুধু এর সৌন্দর্য উপভোগ করার উদ্দেশ্যে এটি চাষ করি। কেমিক্যাল এর উপর নির্ভরতা কমাতে এসব ঔষধি ফলমূলের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তাই আপনার ছাদে বা বাগানে যদি গোলাপ গাছ থাকে তাহলে এর পাপড়ি গুলো চাইলে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং পরবর্তীতে সেগুলো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে পারেন। চা খাওয়ার অভ্যাস যাদের রয়েছে তারা চাইলে এমনি পরিবর্তন খেতে পারেন এটি যেমন স্বাস্থ্যসম্মত তেমন সুস্বাদু।
আমাদের ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন; প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url